‘এই মুহূর্তে দেশে রেকর্ড খাদ্য সঞ্চিত আছে। তবে দীর্ঘকালীন সমস্যা, বিশেষ করে রাজনৈতিক বা অভ্যন্তরীণ কোনো ধরনের সহিংসতা হলে খাদ্য ব্যবস্থা ভেঙে যেতে পারে’ বলে মন্তব্য করেছেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম. এ. মান্নান।

বুধবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে ‘রাইট টু ফুড বাংলাদেশে’র উদ্যোগে আয়োজিত দুদিনব্যাপী ‘এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের খাদ্য অধিকার এবং কৃষিখাদ্য ব্যবস্থা সম্মেলন ২০২৩’-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে মন্ত্রী এ মন্তব্য করেন।

এম. এ. মান্নান বলেন, ‘দেশের কোটি কোটি কৃষক, যারা অনেক পরিশ্রম করে খাদ্য উৎপাদন করছেন, তাদের পরিশ্রম এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সুদূরপ্রসারী নীতিমালা প্রয়োগের ফলে আমরা আজ একটা অবস্থানে পৌঁছাতে পেরেছি।’

খাদ্যসহ সবকিছুর উৎপাদন বেড়েছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, ‘সরকারের উদ্যোগের কারণে দেশে খাদ্য উৎপাদন বেড়েছে। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের আওতায় চমৎকারভাবে আমরা যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তুলেছি। কেমিক্যাল সারের পরিবর্তে আমরা জৈব সারের দিকে যাচ্ছি। সব কিছু মিলেই খাদ্য ব্যবস্থাপনা ও সরবরাহে অনেক দূর আমরা এগিয়েছি।’

তিনি বলেন, ‘খাদ্যবণ্টনে ন্যায্যতা নিশ্চিতেও কাজ করছে সরকার। বর্তমান সরকার সবার অধিকার নিশ্চিতে অধিক সংবেদনশীল। ভূমিহীন, গৃহহীন যারা আছেন তাদের ঘরবাড়ি দেয়া হচ্ছে। সেই ঘরে বসেই তারা খাবারের সন্ধান করছে বা কাজে যাওয়ার সুযোগ পাচ্ছে। বর্তমান সরকার, আওয়ামী লীগ সরকার, জননেত্রী শেখ হাসিনার সরকার থাকাকালে আমাদের আত্মমর্যাদা ও পরিচয়কে অক্ষুণ্ণ রেখে সারা বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলছি।’

রাইট টু ফুড বাংলাদেশের চেয়ারম্যান ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমাদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্পিকার ড. শিরিন শারমিন চৌধুরী। তিনি এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে খাদ্য নিরাপত্তা গড়ে তোলার লক্ষ্যে আঞ্চলিক সহযোগিতা বৃদ্ধি এবং সমন্বিত পন্থা গ্রহণের ওপর গুরুত্বারোপ করেন।

স্পিকার বলেন, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার পর বাংলাদেশের কৃষি খাতের উন্নয়নে বিভিন্ন বৈপ্লবিক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিলেন। ফলে এই সেক্টরে আজ আমরা সাফল্য অর্জন করেছি।’

স্পিকার আরও বলেন, ‘স্বাধীনতার শুরু থেকেই কৃষিকে গুরুত্ব দিয়ে নানামুখী উদ্যোগের শুরু হয়েছিল। যার ধারা অব্যাহত থাকায় বাংলাদেশ আজ খাদ্য উৎপাদনের রোল মডেল।’

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশসহ এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় দেশগুলোর খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতে এ সম্মেলন পথ দেখাবে বলে আমি আশা করি।’

এ সময় সবার জন্য পর্যাপ্ত খাদ্য নিশ্চিত করতে টেকসই খাদ্য ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলার ওপর গুরুত্বারোপ করেন স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী।

ঢাবি উপাচার্য (ভিসি) অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান পৃথিবীর সর্বত্র খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সম্মিলিতভাবে কাজ করার জন্য বিশ্ব নেতাদের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্বে বাংলাদেশ ইতোমধ্যে খাদ্য উৎপাদনে অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জন করেছে।’ ভিসি এসময় বাংলাদেশে টেকসই কৃষিখাদ্য ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলার ওপর জোর দেন।

অধিবেশনের সভাপতি ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ বলেন, ‘খাদ্যের পর্যাপ্ততার পাশাপাশি সেই উৎপাদিত খাদ্যে সকল মানুষের অভিগম্যতা খাদ্য নিরাপত্তার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। খাদ্য সংরক্ষণ ও প্রক্রিয়াজাতকরণের কারণে মানুষের কর্মসংস্থানেরও সৃষ্টি হয়। জলবায়ু পরিবর্তনের শিকার বাংলাদেশসহ এ অঞ্চলের সমুদ্র পাড়ের প্রায় সকল দেশ, যা খাদ্য অধিকার নিশ্চিতের ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে। এ সম্মেলন মতবিনিময়ের যে ক্ষেত্র তৈরি করেছে, তা কার্যকর হবে যদি সংশ্লিষ্ট রাষ্ট্রগুলোর খাদ্য সংক্রান্ত নীতিতে এখানকার সুপারিশগুলোর প্রতিফলন ঘটে।’

অনুষ্ঠানে নেপালের কৃষি ও প্রাণীসম্পদ মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব কুমার কর্ণ, কেয়ার বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর রমেশ সিংহ বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। এতে রাইট টু ফুড বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক ও ওয়েভ ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক মুহসীন আলী স্বাগত বক্তব্য দেন।