অর্থনীতিতে নানামুখী চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও ২০২২-২৩ অর্থবছরে মূল্য সংযোজন কর বা ভ্যাট আদায়ে বড় ধরনের প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে। চূড়ান্ত হিসাবে, গত অর্থবছরে ভ্যাট সংগ্রহে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৭ শতাংশ; ২০২১-২২ অর্থবছরে এই প্রবৃদ্ধি ছিল ১১ দশমিক ১৯ শতাংশ। ভ্যাট আদায় সবচেয়ে বেশি হয়েছে সিগারেট খাত থেকে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) জানিয়েছে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে মোট ভ্যাট আহরণ হয়েছে ১ লাখ ২৫ হাজার ৪২৪ কোটি টাকা; আগের অর্থবছরে যা ছিল ১ লাখ ৮ হাজার ৪২০ কোটি টাকা।
তথ্য অনুযায়ী সমাপ্ত অর্থবছরে ১৭ হাজার ৪ কোটি টাকা ভ্যাট বেশি আদায় করেছে সংস্থাটি। এর মধ্যে অর্থবছরের শেষ মাস জুনেই ভ্যাট আহরণ হয়েছে প্রায় ১৮ শতাংশ। জুন মাসে ভ্যাট আহরণ হয়েছে ১৫ হাজার ৬১৪ কোটি টাকা। আগের জুনে এই আদায় ছিল ১৫ হাজার ৫৯ কোটি টাকা। গেল অর্থবছরে অনেকটা বিরূপ পরিস্থিতি ছিল।সরকারের ব্যয় সংকোচন নীতিমালার কারণে বেশ কিছু প্রকল্প থেকে ভ্যাট পাওয়া যায়নি।
এনবিআর বলছে, ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনা করে তারা জেনেছে, অনেক প্রতিষ্ঠান নিয়মিত লেটার অব ক্রেডিট (এলসি) খুলে পণ্যের কাঁচামাল আমদানি করে স্বাভাবিক উৎপাদন করতে পারেনি। এছাড়া অনেক ক্ষেত্রে ইউটিলিটি মূল্য বৃদ্ধি এবং সরবরাহ পরিস্থিতিতে পণ্যের স্বাভাবিক উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে। গত অর্থবছরে ভোজ্য তেলসহ কিছু পণ্যে ভ্যাট অব্যাহতি দেয়া হয়।ফলে অব্যাহতিপ্রাপ্ত পণ্য থেকেও ভ্যাট পাওয়া যায়নি।
এসব চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও ভ্যাটের ১৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি একটি বড় অর্জন হিসেবে মনে করছে এনবিআর। বলছে, এই অর্জন সম্ভব হয়েছে তিনটি কারণে। প্রথমত, এনবিআর থেকে মাঠ পর্যায়ে ভ্যাট আহরণে কঠোর মনিটরিং এবং মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের নিরলস প্রচেষ্টা; দ্বিতীয়, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের উপকরণ- উৎপাদন সহগ হালনাগাদকরণ জোরদার; এবং তৃতীয়ত, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ভ্যাট ফাঁকি রোধে কার্যকর পদক্ষেপ।
সবচেয়ে বেশি ভ্যাট সিগারেট থেকে
তথ্য অনুসারে সবচেয়ে বেশি ভ্যাট আহরণ হয়েছে সিগারেট থেকে। ২০২২-২৩ অর্থবছরে এ খাত আদায় হয়েছে ৩২ হাজার ৮১৮ কোটি টাকা, যা পূর্ববর্তী বছরের তুলনায় প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকা বেশি। প্রবৃদ্ধি হয়েছে প্রায় ১০ শতাংশ। মোবাইল ফোন অপারেটর্স থেকে ভ্যাট আদায় হয়েছে ৯ হাজার ৪৩৮ কোটি টাকা। এই খাতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে প্রায় ১১ শতাংশ।
এছাড়া এমএস রড থেকে ভ্যাট আদায়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৫৮ দশমিক ৪৬ শতাংশ, কোমল পানীয়তে ৩১ দশমিক ১৯ শতাংশ, সিমেন্ট থেকে ৩৩ দশমিক ৭২ শতাংশ, বাণিজ্যিক স্থান ভাড়া থেকে ২০ দশমিক ১১ শতাংশ। পেট্রোবাংলার গ্যাস ও বিপিসির পেট্রোলিয়াম পণ্যেও প্রবৃদ্ধি হয়েছে যথাক্রমে ২১ দশমিক ৬৮ ও ২৩ দশমিক ৪৩ শতাংশ।
এনবিআর বলছে, প্রচেষ্টা নির্ভর খাতে ভ্যাট উইং ভাল করেছে। এসব খাতে ভ্যাট আহরণ এনবিআর থেকে সরাসরি তদারকি করা হয়। মিষ্টি-তে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৩৮ শতাংশ; আবাসিক হোটেলে ৩৯ শতাংশ। রেস্টুরেন্টে ভ্যাট হার ১৫ শতাংশ থেকে ৫ শতাংশ এ কমিয়ে আনা হয়। তা সত্ত্বেও এই খাতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৬ দশমিক ৭৮ শতাংশ।
এনবিআরের ভ্যাট উইং এর মাঠ পর্যায়ে ১২ টি ভ্যাট কমিশনারেট রয়েছে।এর মধ্যে চট্টগ্রাম, খুলনা ও ঢাকা দক্ষিণ সবচেয়ে বেশি প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। অর্থবছরের তাদের অর্জন যথাক্রমে ৩৮ দশমিক ৭১ শতাংশ, ২৪ দশমিক ৭১ শতাংশ এবং ১৯ দশমিক ৮৯ শতাংশ। সর্বোচ্চ ভ্যাট সংগ্রহ করেছে এলটিইউ ভ্যাট কমিশনারেট। এই কমিশনারেট মোট ৫৮ হাজার ৫৬৬ কোটি টাকা ভ্যাট সংগ্রহ করেছে, যা আগের অর্থবছরের তুলনায় ৬ হাজার ১৩৩ কোটি টাকা বেশি। ফলে ২০২২-২৩ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১১ দশমিক ৭০ শতাংশ; আগের অর্থবছরে যা ছিল ৬ দশমিক ৪৬ শতাংশ।
এনবিআর আরও জানিয়েছে, ভ্যাট অনুবিভাগের জন্য অর্থবছরের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ লাখ ৩৬ হাজার ৮০০ কোটি টাকা। এই লক্ষ্যমাত্রার ৯২ শতাংশ অর্জন করেছে ভ্যাট অনুবিভাগ।
১৯৮/সি, তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮
©দৈনিক বাংলা