আপডেট : ২৭ জুলাই, ২০২৩ ১৯:২২
আওয়ামী লীগ ক্ষমতা ছাড়লে জঙ্গিবাদ মাথাচাড়া দেবে: তথ্যমন্ত্রী
প্রতিবেদক, দৈনিক বাংলা

আওয়ামী লীগ ক্ষমতা ছাড়লে জঙ্গিবাদ মাথাচাড়া দেবে: তথ্যমন্ত্রী

বৃহস্পতিবার দুপুরে কলকাতা প্রেসক্লাবে ‘সাংবাদিকদের মুখোমুখি’ অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ। ছবি: দৈনিক বাংলা

আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় না থাকলে সাম্প্রদায়িক অপশক্তি ও জঙ্গিবাদ মাথাচাড়া দিয়ে উঠবে বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ। তিনি বলেছেন, ‘আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় না থাকলে সাম্প্রদায়িক অপশক্তি যেমন মাথাচাড়া দেবে, জঙ্গিবাদও মাথাচাড়া দিয়ে উঠবে।

বৃহস্পতিবার দুপুরে কলকাতা প্রেসক্লাবে ‘সাংবাদিকদের মুখোমুখি’ অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দেন ভারত সফররত তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ। বাংলাদেশে আগামী জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় না এলে এখানে সাম্প্রদায়িকতা ফণা তুলবে কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।

হাছান মাহমুদ বলেন, ‘খালেদা জিয়া যখন ক্ষমতায় ছিলেন তখন একসঙ্গে বাংলাদেশে ৬৩ জেলায় বোমা হামলা হয়েছিল। শায়খ আব্দুর রহমান, বাংলা ভাই, আফগানিস্তানের ট্রেনিং প্রাপ্তরা প্রকাশ্যে মহড়া দিত। এই হচ্ছে বিএনপি সরকারের আমল।’

জঙ্গিবাদ আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘যখন আমরা জঙ্গিদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করি তখন বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া প্রকাশ্যে বলছেন- কিছু লোককে ধরে এনে আটকিয়ে রাখা হয়, চুল-দাড়ি লম্বা হলে তাদের জঙ্গি আখ্যা দেয়া হয়। বাংলাদেশে যদি আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় না থাকে তাহলে সেই সাম্প্রদায়িকতা আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠবে। বাংলাদেশে সংখ্যালঘুরা আবার অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়বে।’

২০০১ সালে সংখ্যালঘুদের ওপর অন্যায়ভাবে নির্যাতন করা হয়েছে উল্লেখ করে হাছান মাহমুদ বলেন, ‘নৌকা প্রতীকে ভোট দেয়ার অপরাধে মা-মেয়েকে এক রাতে ধর্ষণ করা হয়েছে, ১৪ বছরের মেয়েকে ধর্ষণ করা হয়েছে। গৃহহারাদের জন্য তখন ঢাকায় আমাদের আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় অফিসে লঙ্গরখানা ও আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছিল।’

আওয়ামী লীগের আদর্শ তুলে ধরে হাছান মাহমুদ বলেন, ‘বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক অপশক্তির বিরুদ্ধে দেশ হিসেবে সংগ্রাম করেছে এবং অসাম্প্রদায়িক দল হিসেবে যে দলটি প্রতিষ্ঠিত, সেটি হচ্ছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র ব্যবস্থা থেকে বেরিয়ে এসে অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র গঠনের লক্ষ্যে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মুক্তিযুদ্ধের ডাক দিয়েছিলেন। হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান সবার মিলিত রক্তস্রোতের বিনিময়ে আমাদের স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছে।’

বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা সাম্প্রদায়িকতা ফিরিয়ে আনে উল্লখ করে মন্ত্রী বলেন, ‘১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় আসার পর সেই সাম্প্রদায়িকতাকে আবার ফিরিয়ে এনেছেন। আমাদের দেশে স্বাধীনতার পর ধর্মীয় রাজনীতিটা বন্ধ করা হয়েছিল, সেটি ৭৫ সালে আবার চালু করা হয়েছে। দুঃখজনক হলেও সত্য, বিএনপির বহুদলীয় জোটের মধ্যেই সাম্প্রদায়িক অপশক্তি আছে। সেখানে অনেক দল আছে যে দলের নেতারা তালেবানের সঙ্গে যুদ্ধ করেছে। এ সমস্ত অনেক নেতা প্রকাশ্যে ‘বাংলা হবে তালেবান’ স্লোগান দিয়েছিল।'

বিএনপি নির্বাচনে আসবে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে হাছান মাহমুদ বলেন, ‘বিএনপি গণমানুষের দল বলে তারা দাবি করে। কিন্তু সিটি কর্পোরেশন এমন কি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনেও তাদের দলের সবাইকে অংশ নিতে বারণ করেছে। এ সত্ত্বেও তাদের অনেকেই কাউন্সিলর, মেম্বার এমন কি চেয়ারম্যান পদেও নির্বাচনে অংশ নিয়েছে। বিএনপি নেতাদের বেশিরভাগই নির্বাচন করতে চায়। কিন্তু তাদের নেতৃত্ব সিদ্ধান্ত দিতে পারে না বিধায় তারা পারে না। যারা নিজেদের জনগণের দল হিসেবে দাবি করে বা গণমানুষের দল হিসেবে টিকে থাকতে চায় তাদের জন্য ক্রমাগতভাবে নির্বাচন বর্জন করা অত্যন্ত ক্ষতির কারণ। আগামী নির্বাচনও যদি তারা বর্জন করে তাহলে সেই ক্ষতি তারা আরও টের পাবে।’

রোহিঙ্গা শরণার্থী বিষয়ে প্রশ্নে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমি চট্টগ্রামের মানুষ, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বহুবার গিয়েছি, আমার হিসেবে এখন প্রায় ১৫ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থী বাংলাদেশ। আমাদের দেশ পৃথিবীর সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ দেশ, কোনো রকমে আমরা আমাদের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছি। বিশাল রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী আমাদের জন্য একটা চাপ, অর্থনীতির চাপ। তাদের খাওয়াতে হচ্ছে, পরাতে হচ্ছে, চিকিৎসাসহ সবকিছু দিতে হচ্ছে। এ জন্য ভারত সরকারের সাথে আমরা সবসময় আলাপ আলোচনা করছি।’

বাংলাদেশ-ভারত সহযোগিতার প্রশ্নে মন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের সঙ্গে ভারতের এবং অন্যান্য দেশের আন্তরিক সহযোগিতা আছে। আমাদের শুধু বাণিজ্যে সহযোগিতা নয়, নিরাপত্তা থেকে শুরু করে নানাবিধ সহযোগিতা আছে। আমরা মনে করি আমাদের অঞ্চলকে নিরাপদ রাখা, এখানে শান্তি, স্থিতি বজায় রাখা আমাদের আন্তরিক দায়িত্ব। একইসাথে ভারতেরও দায়িত্ব। অর্থাৎ এসব ক্ষেত্রে প্রয়োজন আমাদের দু’দেশের সহযোগিতা।’

সম্প্রতি বাংলাদেশে কূটনীতিকদের বিবৃতি দিতে দেখা যাচ্ছে- মন্তব্যের জবাবে হাছান মাহমুদ বলেন, ‘ভারতে কিংবা পশ্চিমা দেশেও কথায় কথায় কেউ বিবৃতি দেয় না। কারণ তাতে কূটনৈতিক শিষ্টাচার লঙ্ঘন হয়। আমাদের এখানে এ ধরনের বিবৃতির কড়া ভাষায় প্রতিবাদ করা হয়েছে।’

বাংলাদেশের ইলিশ ও ভারতের সিনেমা নিয়ে প্রশ্নে মন্ত্রী হাছান জানান, ‘আমরা ভারতীয় চলচ্চিত্র আমদানি করার অনুমতি দিয়েছি। আমাদের দেশে ‘পাঠান’ মুক্তি পেয়েছে, আরো কয়েকটি মুক্তির অপেক্ষায় আছে। আর আমাদের ইলিশ রপ্তানি বন্ধ নয়, মাঝে মধ্যে ধরা বন্ধ করা হয়, গত দু’মাস ইলিশ ধরা বন্ধ ছিলো। যখন বন্ধ থাকে তখন সবখানেই বন্ধ থাকে।’

কলকাতা প্রেসক্লাবের সভাপতি স্নেহাশিস সুর, সম্পাদক কিংশুক প্রামাণিক ও স্থানীয় সাংবাদিকরা এ আয়োজনে অংশ নেন। কলকাতায় বাংলাদেশের উপহাইকমিশনার আন্দালিব ইলিয়াস এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

।।সাংবাদিক শাহজাহান মিয়ার মৃত্যুতে তথ্যমন্ত্রীর শোক।।

সদ্যপ্রয়াত বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) সাবেক মহাসচিব খ্যাতনামা সাংবাদিক বীর মুক্তিযোদ্ধা এম শাহজাহান মিয়ার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করে তার আত্মার শান্তি কামনা করেছেন তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ। একই সঙ্গে প্রয়াতের পরিবারের শোকাহত সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান মন্ত্রী।

শোকবার্তায় মন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা থেকে শুরু করে বেসরকারি গণমাধ্যম এমন কি ওয়াশিংটনে প্রেস মিনিস্টার হিসেবেও তিনি ছিলেন সফল। আবার বিএফইউজের মহাসচিব, ডিইউজের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবেও ছিলেন জনপ্রিয়। সাংবাদিকতার জগতে তিনি স্মরণীয় হয়ে থাকবেন।’