আপডেট : ৩০ জুলাই, ২০২৩ ১২:৫১
৪৬ বছর বয়সে এসএসসি পাস করলেন রহিমা
প্রতিনিধি, কুড়িগ্রাম

৪৬ বছর বয়সে এসএসসি পাস করলেন রহিমা

৪৬ বছর বয়সে এসএসসি সমমানের পরীক্ষায় (দাখিল) পাস করেছেন কুড়িগ্রামের রহিমা বেগম

অদম্য ইচ্ছাশক্তি আর পরিবারের অনুপ্রেরণায় ৪৬ বছর বয়সে এসএসসি সমমানের পরীক্ষায় (দাখিল) পাস করেছেন কুড়িগ্রামের রহিমা বেগম। সদর উপজেলার পৌর এলাকার খলিলগঞ্জ নাজিরাপাড়া গ্রামের বাসিন্দা রহিমা কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজে চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী হিসেবে কর্মরত আছেন। তার বাবার নাম আছর উদ্দিন। স্বামী আব্দুল জলিল সরকার মজনু পেশায় একজন ব্যবসায়ী ।

গত শুক্রবার প্রকাশিত এসএসসি সমমান পরীক্ষার ফলাফলে জেলার কাঁঠালবাড়ী মহিউস সুন্নাহ মহিলা দাখিল মাদ্রাসার মানবিক বিভাগ হতে জিপিএ-৩.৬০ পেয়ে দাখিল পাস করেন রহিমা।

জানা যায়, দারিদ্র্যতার কষাঘাতে রহিমা চতুর্থ শ্রেণির পর আর পড়াশোন চালিয়ে যেতে পারেননি। অল্প বয়সে বিয়ের পিড়িতে বসতে হয় তাকে। সংসার জীবনে তার এক মেয়ে ও এক ছেলে রয়েছে। ছেলে কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজের মাস্টার্স ফাইনাল বর্ষের ছাত্র। আর মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন। দীর্ঘ বছর পর মেয়ের ছেলেকে নিয়ে স্কুল যাওয়া-আসা করতে করতে পড়াশোনার ব্যাপারে উজ্জীবিত হন তিনি। পরে তিনি একটি মাদ্রাসায় ভর্তি হয়ে আবার পড়াশোনা শুরু করেন। অবশেষে কুড়িগ্রাম কাঁঠালবাড়ী মহিউস সুন্নাহ মহিলা দাখিল মাদ্রাসা থেকে দাখিল পরীক্ষা দিয়ে জিপিএ-৩.৬০ পেয়ে উত্তীর্ণ হন।

এই বয়সে এসএসসি পাস করায় পরিবার আত্মীয়স্বজন ও সহকর্মীদের অভিনন্দন ও ভালোবাসায় মুগ্ধ হয়েছেন রহিমা বেগম।

রহিমা বলেন, ‘লোকলজ্জা আর বয়সের ভয় না করে আমি পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছি। চতুর্থ শ্রেণির পর পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যায়। প্রবল ইচ্ছা থেকেই আবারও পড়াশোনা শুরু করি।’

তিনি আরও বলেন, ‘পড়াশোনা করার ব্যাপারে আমার স্বামীসন্তান ও সহকর্মীরা উৎসাহ দিয়েছেন। আমার ইচ্ছা পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার।’

রহিমা বেগমের মেয়ে মজিদা আক্তার পপি বলেন, ‘মা এই বয়সে এসে সংসার এবং চাকরি করার পরও পরীক্ষায় পাস করতে পারবে ভাবিনি। এই খুশি ভাষায় প্রকাশ করার মতো না। আমার মা সামনে এগিয়ে যাক, এ জন্য সবার কাছে দোয়া চাই।’

কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ মির্জা মোহাম্মদ নাসির উদ্দীন বলেন, ‘রহিমা বেগম আমার কলেজের একজন কর্মরত আছেন। তিনি দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে মাদ্রাসায় দাখিল শ্রেণিতে ভর্তি হয়। এ বছর এসএসসি সমমান পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে জিপিএ-৩.৬০ অর্জন করেছে। বয়স কিংবা কোনো বাঁধাই তাকে আটকাতে পারেনি। পড়াশোনায় মাঝপথে কিংবা শুরুতে থেমে যাওয়া অন্য সব নারী-পুরুষদের জন্য রহিমা একটি প্রেরণার উৎস। যেকোনো বয়সেই যে শিক্ষা অর্জন করা যায় রহিমা তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।’

তিনি আরও বলেন, ‘কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজ কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে রহিমাকে অভিনন্দন এবং সে উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণিতে ভর্তি হতে চাইলে তাকে সহযোগিতা দেয়া হবে।’

কাঁঠালবাড়ী মহিউস সুন্নাহ মহিলা দাখিল মাদ্রাসার সুপারিনটেনডেন্ট রেজাউল করিম বলেন, ‘রহিমা বেগমসহ আমার মাদ্রাসা থেকে ১৫ জন শিক্ষার্থী এবার দাখিল পরীক্ষায় পাস করেছে। রহিমা বেগম ২০২০ সালে এ মাদ্রাসায় ৮ম শ্রেণিতে ভর্তি হয়েছিল।’