সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে আঁখ কিনে দেওয়ার কথা বলে ডেকে ফাতেমা (৫) নামের এক শিশুকে হত্যার আসামি নজরুল ইসলামকে (২৫) গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এসময় তার কাছ থেকে ফাতেমার কানের এক আনা ওজনের স্বর্ণের দুল উদ্ধার করা হয়।
গত বৃহস্পতিবার রাতে শাহজাদপুর উপজেলার ইসলামপুর ডায়া মোড় এলাকায় অভিযান চালিয়ে নজরুলকে গ্রেপ্তার করা হয়। তিনি উপজেলার গালা ইউনিয়নের মার্জান গ্রামের আবেদ আলীর ছেলে।
শুক্রবার দুপুরে শাহজাদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম দৈনিক বাংলাকে এ তথ্য জানান।
মামলার অভিযোগ থেকে জানা যায়, গত ৩১ জুলাই সকাল ১০টার দিকে ফাতেমা নানীর সঙ্গে বসেছিল। এসময় আঁখ কিনে দেবেন বলে শিশুটিকে ডেকে নিয়ে যান নজরুল। দেড় ঘণ্টা পর শরীরের কাপড় ভেজা অবস্থায় বাড়িতে ফিরে ফাতেমার সন্ধান করেন তিনি। বলতে থাকেন, ফাতেমা তার সঙ্গে যায়নি। পরে পরিবারের সদস্যরা ফাতেমাকে খোঁজাখুঁজি ও মাইকিং করে।
গত ২ আগস্ট দুপুরে একই গ্রামের সরদারের স্ত্রী ডলি বেগম শিশুটির বাড়িতে গিয়ে পরিবারকে জানান, তিনি একটি বিচ্ছিন্ন পা চড়ার ভেতর দিয়ে শিয়ালকে নিয়ে যেতে দেখেছেন। বিষয়টি পুলিশকে জানানো হয়। তারা সেদিন সন্ধ্যার দিকে গালা ইউনিয়নের মার্জান গ্রামের একটি ক্ষেত থেকে ফাতেমার অর্ধগলিত বাম পা, হাড় ও দুই হাত দুই পাশে ছড়ানো অবস্থায় পায়। বিষয়টি নিয়ে এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্ট হয়।
পরে ফাতেমার মা নুরজাহান বেগম বাদী হয়ে শাহজাদপুর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। মামলাটি আমলে নিয়ে অভিযান চালিয়ে পুলিশ নজরুলকে গ্রেপ্তার করে।
নুরজাহান বেগম জানান, ফাতেমা তাদের সংসারের তৃতীয় এবং একমাত্র কন্যা সন্তান ছিল। তার বাবা সোবাহান শেখ ঢাকায় রিকশা চালান। আর নুরজাহান মানুষের বাড়িতে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করছিলেন। পরিবারের সবার আদরের মধ্যমণি ছিল ফাতেমা। মেয়ের হত্যাকারীর দ্রুত বিচারের জন্য প্রশাসনের কাছে অনুরোধ জানান নুরজাহান।
শাহজাদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম বলেন, ‘গ্রেপ্তার আসামি ঢাকায় রিকশা চালাতেন। গত ৪-৫ বছর আগে মামলার বাদীর বাড়ির পাশে জমি কিনে বসবাস করছিলেন তিনি। প্রায় ১৫ দিন আগে ঢাকা থেকে বাড়ি আসেন আসামি। কিন্তু কোনো পেশা না থাকায় তিনি দেনাগ্রস্ত হয়ে পড়েন। তখন ফাতেমার কানে স্বর্ণের দুল দেখে তা হাতিয়ে নেয়ার পরিকল্পনা করেন নজরুল। পরিকল্পনা অনুযায়ী শিশু ফাতেমাকে আঁখ কিনে দেয়ার কথা বলে ডেকে ক্ষেতে নিয়ে যান। সেখানে ফাতেমাকে ভয় দেখিয়ে তার কানের দুল খুলে নেন। সে সময় ফাতেমা চিৎকার দিলে তাকে গলা টিপে হত্যা করে মরদেহ ফেলে রেখে বাড়ি চলে আসেন নজরুল।’
ওসি আরও বলেন, ‘প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আসামি নজরুল শিশুটিকে হত্যার কথা স্বীকার করেছেন। চাঞ্চল্যকর এ হত্যা মামলার আসামিকে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে।’
১৯৮/সি, তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮
©দৈনিক বাংলা