গত এক সপ্তাহে উত্তর কোরিয়া অন্তত পাঁচবার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা চালিয়েছে। যার মধ্যে সর্বশেষ ক্ষেপণাস্ত্রটি জাপানের ওপর দিয়ে ছুড়ে দেয় পিয়ংইয়ং। এরই পাল্টা জবাব হিসেবে ক্ষেপণাস্ত্র মহড়া চালিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও দক্ষিণ কোরিয়া। দক্ষিণ কোরিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র সাগরে একঝাঁক ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে বলে বুধবার জানিয়েছে সিউলের জয়েন্ট চিফ অব স্টাফ। এর আগে এই দুই মিত্র দেশ পীত সাগরে যুদ্ধবিমান থেকে বোমা মারার মহড়া চালায়। দক্ষিণ কোরিয়ার বিবৃতির বরাতে এ খবর জানায় সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
দক্ষিণ কোরিয়ার সামরিক বাহিনী পৃথক এক বিবৃতিতে জানায়, তাদের একটি হাইয়ুনমো-২ ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণের পর পরই ব্যর্থ হয় এবং মহড়া চলাকালে বিধ্বস্ত হয়। দক্ষিণের সামরিক বাহিনী জানায়, ক্ষেপণাস্ত্রটিতে একটি ওয়ারহেড থাকলেও সেটি বিস্ফোরিত হয়নি। তবে কেউ হতাহত হয়নি বলেও নিশ্চিত করেছে তারা। এই ঘটনা কাছাকাছি এলাকার বাসিন্দাদের যে আতঙ্কের মধ্যে ফেলেছিল, তার জন্য দুঃখও প্রকাশ করে তারা।
উত্তর কোরিয়ার একের পর এক ক্ষেপণাস্ত্রের পাল্টায় সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনী ও এর মিত্রদের শক্তি প্রদর্শনী জোরদার করতে দেখা যাচ্ছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে দক্ষিণ কোরিয়ার পাশাপাশি জাপানের সঙ্গেও যৌথ সামরিক মহড়া চালিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। গত মঙ্গলবার জাপান সাগরে অনুষ্ঠিত এই মহড়ায় অংশ নেয় উভয় দেশের একঝাঁক যুদ্ধবিমান। যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনীর তরফে জাপান সাগরে এই মহড়ার বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে।
হাওয়াইভিত্তিক ইউএস ইন্দো প্যাসিফিক কমান্ডের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার প্রতিরক্ষার প্রতি ওয়াশিংটনের ইস্পাতকঠিন অঙ্গীকার অব্যাহত রয়েছে। উত্তর কোরিয়ার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণের পর জাপানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়াসুকাজু হামাদা বলেন, পিয়ংইয়ংয়ের এই পদক্ষেপের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পাল্টা হামলা চালানোর সক্ষমতা তৈরি থেকে শুরু করে সব ধরনের পথ খোলা রাখছে টোকিও।
গত সপ্তাহে প্রশান্ত মহাসাগরীয় কয়েকটি দেশে সফর করেন মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস। আর তার সফরের মধ্যে উত্তর কোরিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষাকে বিপজ্জনক ও বেপরোয়া বলে অ্যাখ্যা দিয়েছে হোয়াইট হাউস। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা উত্তর কোরিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষার ‘তীব্র নিন্দা’ জানিয়েছেন। ইউরোপীয় ইউনিয়ন এ পরীক্ষাকে ‘বেপরোয়া ও উদ্দেশ্যমূলক উসকানিপূর্ণ কর্মকাণ্ড’ বলে অ্যাখ্যা দিয়েছে।
জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসও পিয়ংইংয়ের ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষার নিন্দা জানিয়েছেন। বলেছেন, এটি জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাবের লঙ্ঘন। এ প্রসঙ্গে বুধবার যুক্তরাষ্ট্রের অনুরোধে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ বৈঠকেও বসতে যাচ্ছে। অন্যদিকে চীন ও রাশিয়া ১৫ সদস্যের এ পরিষদের মধ্যে উত্তর কোরিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা নিয়ে উন্মুক্ত বৈঠকের বিরোধিতা করেছে। দুই দেশের কূটনীতিকরা বলেন, নিরাপত্তা পরিষদের প্রতিক্রিয়া এমন হওয়ার উচিত যেন তা কোরীয় উপদ্বীপের উত্তেজনা প্রশমনে ভূমিকা রাখে।
১৯৮/সি, তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮
©দৈনিক বাংলা