দেশের ১৭তম জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে দেশের ঐতিহ্যবাহী মিষ্টি নাটোরের কাঁচাগোল্লা। গত ৮ আগস্ট শিল্প মন্ত্রণালয়ের পেটেন্ট, শিল্প-নকশা ও ট্রেডমার্ক অধিদপ্তরের মহাপরিচালক খোন্দকার মোস্তাফিজুর রহমানের স্বাক্ষরে নাটোর জেলা প্রশাসকের নামে কাঁচাগোল্লার জিআই স্বীকৃতি অনুমোদন দেয়া হয়। জিআই সনদ বৃহস্পতিবার জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে।
ইতিহাস থেকে জানা যায়, ঐতিহ্যবাহী মিষ্টি নাটোরের কাঁচাগোল্লার রয়েছে আন্তর্জাতিক খ্যাতি। কবি জীবনানন্দের বনলতা সেন, উত্তরা গণভবন, রানী ভবানীর রাজবাড়ির পরই কাঁচাগোল্লা দিয়েই মানুষ নাটোরকে চেনে। সুদীর্ঘ সময় থেকেই কাঁচাগোল্লার সুখ্যাতি দেশে-বিদেশে ছড়িয়ে পড়ে। যার সুনাম এখনো অব্যাহত রয়েছে।
জনশ্রুতি আছে, প্রায় আড়াই শ বছর আগে নাটোরের লালবাজারে মধূসুদন পালের মিষ্টির দোকানের কারিগর না আসায় দোকানে থাকা ছানা নিয়ে বিপাকে পড়েন তিনি। পরবর্তী সময়ে ছানাগুলো রক্ষায় চিনির রস ঠেলে জ্বাল দেন মধূসুদন। চুলা থেকে নামিয়ে ঠাণ্ডা করে তিনি নিজেই তা খেয়ে পরীক্ষা করেন। চমৎকার স্বাদ পেয়ে নাম দেন কাঁচাগোল্লা।
কাঁচাগোল্লা তৈরির কারিগর সমর চন্দ্র সরকার জানান, রাজ-রাজড়াদের আমল থেকেই কাঁচাগোল্লা সবার কাছে প্রিয়। নামে কাঁচাগোল্লা হলেও এটি কিন্তু গোল নয়। ছানা থেকে তৈরি একপ্রকাশ শুকনো মিষ্টি এটি। কাঁচাগোল্লা তৈরির পুরো প্রক্রিয়া সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রতিদিন সকাল থেকেই নাটোর শহরের মিষ্টির দোকানগুলোর কারখানায় আসতে থাকে গরুর খাঁটি দুধ। এক থেকে দেড় ঘণ্টা ফুটিয়ে দুধ ঘন করেন কারিগররা। এরপর সেই দুধ থেকে ছানা তৈরি করা হয়। এক মণ দুধ থেকে সাত থেকে সাড়ে সাত কেজি ছানা হয়। তারপর সেই ছানা চুলা থেকে নামিয়ে কাপড়ে পেঁচিয়ে ঝুলিয়ে দিয়ে পানি ঝরিয়ে দেয়া হয়। ওজন দিয়ে প্রথমে হাত দিয়ে ছানা মিহি করে নেন কারিগররা। তিন কেজি চিনি ও তরল দুধের সঙ্গে মিহি করা সাত কেজি ছানা চুলায় জ্বাল দেয়া হয়। ৪০ থেকে ৪৫ মিনিট জ্বাল দেয়ার পর তা চুলা থেকে নামিয়ে ঠাণ্ডা করা হয়। এভাবেই ১৬ থেকে ১৮ ঘণ্টার প্রক্রিয়া শেষ করে তৈরি করা হয় নাটোরের কাঁচাগোল্লা। প্রতি কেজি কাঁচাগোল্লার দাম সাড়ে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা।
সমাজকর্মী শামীমা লাইজু নীলা জানান, কাঁচাগোল্লা জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ায় নাটোরবাসীর খুবই আনন্দ ও গর্ব হচ্ছে। তবে এর মান অক্ষুণ্ন রাখতে সবাইকে সচেতন হতে হবে।
নাটোরের জেলা প্রশাসক আবু নাছের ভূঁঞা জানান, নিজস্ব পণ্য হিসেবে ভৌগোলিক নির্দেশক পণ্য বা জিআই হিসেবে নিবন্ধনের জন্য চলতি বছরের ২৯ মার্চ আবেদন করেন তৎকালীন জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ।
কাঁচাগোল্লার নিবন্ধন পাওয়াটা গৌরবের উল্লেখ করে বর্তমান জেলা প্রশাসক আরও জানান, বিশ্বের মাঝে কাঁচাগোল্লার ঐতিহ্য তুলে ধরতে সব ধরনের পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। নাটোরের কাঁচাগোল্লার একটি ঐতিহাসিক সুনাম রয়েছে। এর সুনাম যেন ক্ষুণ্ন না হয় সে জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে বাজার মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা অব্যাহত থাকবে।
নাটোর শহরে কাঁচাগোল্লার বেশ কয়েকটি প্রসিদ্ধ দোকান রয়েছে। ক্রেতাদের পছন্দের শীর্ষে রয়েছে লালবাজারের জয়কালীবাড়ি দোকান, শহরের মৌচাক মিষ্টান্নভাণ্ডার ও আদি নিমতলা মিষ্টান্নভাণ্ডার এবং শিলা মিষ্টি বাড়িসহ আরও ছোট-বড় কয়েকটি দোকান।
১৯৮/সি, তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮
©দৈনিক বাংলা