রাব্বিউল হাসান, জয়পুরহাট
জয়পুরহাটের বিভিন্ন স্থানে পরচুলা (হেয়ার ক্যাপ) তৈরি করে আর্থিকভাবে সচ্ছল হয়েছেন তিন শতাধিক নারী। জেলার ৩টি নির্ধারিত কেন্দ্র ছাড়াও বাড়িতে এসব নারী পরচুলা তৈরি করে উপার্জন করছেন।
জয়পুরহাট সদরের কাশিয়াবাড়ি কবিরাজ পাড়া, পাঁচবিবি উপজেলার উচাই ও বেলখুর গ্রামে পরচুলার তিনটি কারখানা আছে। এ ছাড়া পাঁচবিবির শুকুরমনি, জয়হার, সালাখুর, শালাইপুর, কুয়াতপুর, মোহাম্মদপুর, বড়পুকুরিয়াসহ ১০টি গ্রামের উল্লেখযোগ্যসংখ্যক নারীরা উদ্যোক্তাদের অর্ডার করা কাজ করে দেন।
সরেজমিনে দেখা গেছে, পাঁচবিবির উচাই গ্রামে প্রতিষ্ঠিত একটি পরচুলা তৈরির কারখানায় ৩০ জন বিভিন্ন বয়সী নারী কাজ করছেন। আবার মোহাম্মদপুর ইউনিয়নের বেলখুর গ্রামে প্রতিষ্ঠিত একটি পরচুলা তৈরির কারখানায় কাজ করছেন প্রায় ২০ জন নারী। তাদের মধ্যে গৃহবধূ ছাড়াও আছেন বিভিন্ন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা।
বিভিন্ন আকারের মাথার অবয়বে তৈরি এসব পরচুলার মূল উপাদান প্রসেসিং করা চুল। উদ্যোক্তারা ঢাকা থেকে সংগ্রহ করে কারখানাতে পাঠিয়ে দেন। কারখানায় বসে বিভিন্ন আকারের প্লাস্টিকের মাথার খুলির ওপর বিশেষ ধরনের সুতার তৈরি নেট বসিয়ে চুলগুলো স্থাপন করে তৈরি করা হয় পূর্ণাঙ্গ পরচুলা বা হেয়ার ক্যাপ।
চুয়াডাঙ্গার ফারুক হোসেন তার শ্বশুরবাড়ি বেলখুর গ্রামে এই ক্ষুদ্র শিল্পের কাজ শুরু করেন প্রায় এক বছর আগে। ফারুক দৈনিক বাংলাকে বলেন, ‘এই কারখানায় ৪৮ জন নারীর কাজ করার মতো সুবিধা থাকলেও বর্তমানে ২০ জন কাজ করছেন। এখানকার তৈরি পরচুলাগুলো ঢাকায় চীনা ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করা হয়, যা পরে চীনে রপ্তানি হয়।’
জয়পুরহাট সদরের কাশিয়াবাড়ি কবিরাজ পাড়ায় ৩ মাস আগে একই ধরনের কারখানা স্থাপন করেছেন চুয়াডাঙ্গার আব্দুস সালাম। এই কারখানায় কাজ করছেন ৩০ জন নারী। তাদের একজন জয়পুরহাট সরকারি কলেজের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী হাসি আক্তার (২১)। তিনি বলেন, ‘বড় আপুদের অনুপ্রেরণায় এই কাজে এসেছেন, ভালো লাগছে।’
কাশিয়াবাড়ি উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী ছুম্মা আক্তার (১৬) বলেন, ‘পড়াশোনার পাশাপাশি অবসর সময়ে পরচুলা তৈরির কাজ করে প্রতি মাসে ৪ থেকে ৫ হাজার টাকা আয় হয়, যা দিয়ে নিজের পড়াশোনার খরচ ছাড়াও পরিবারে অবদান রাখা যায়।’
সদরের কবিরাজপাড়ার মেরিনা আক্তার (৩৫) বলেন, ‘পরিবারের ৪ জন সদস্য। স্বামী অসুস্থ। এখন পরচুলা তৈরির কাজ করে পুরো সংসার চালাচ্ছেন। প্রতি মাসে ৬ থেকে ৭ হাজার টাকা আয় করেন।’
কাশিয়াবাড়ি কবিরাজপাড়ার কারখানার সুপারভাইজার কলেমা বেগম (৪০) বলেন, ‘বিভিন্ন আকারের পরচুলা তৈরি করে সর্বনিম্ন ৩৫০-১ হাজার ২০০ টাকা মজুরি পেয়ে থাকেন নারীরা। দক্ষ নারী শ্রমিকরা দৈনিক ৬ ঘণ্টা কাজ করে সর্বোচ্চ ৩-৪ দিনে একটি বড় আকারের পরচুলা তৈরি করতে পারেন। সে হিসেবে কেউ যদি এটাকে মূল পেশা হিসেবে নেন তাহলে এ ধরনের কাজ থেকে পাওয়া আয়ে ৪-৫ সদস্যের একটি পরিবার সচ্ছলভাবে চালাতে পারবেন।’
বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক) জয়পুরহাট জেলার উপব্যবস্থাপক লিটন চন্দ্র ঘোষ দৈনিক বাংলাকে বলেন, ‘বেকার ও কর্মহীন আছেন এমন নারীরা ইচ্ছা করলে এ ধরনের কাজে সম্পৃক্ত হতে পারেন। জয়পুরহাটে নারীদের পরচুলা তৈরির কাজ অন্যদের অনুপ্রেরণা জোগাবে বলে তিনি বিশ্বাস করেন।’
১৯৮/সি, তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮
©দৈনিক বাংলা