দেশের বিভিন্ন প্রত্যন্ত অঞ্চলের দরিদ্রদের উচ্চ বেতনে বিদেশে চাকরি দেয়ার নাম করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে একটি চক্র। চক্রটি অন্তত ৬০০ মানুষের সঙ্গে এমন প্রতারণা করেছে। অভিযোগ পেয়ে মূল হোতা মাহাবুব আল হাসান ও সহযোগী মাহমুদ করিমকে রাজধানীর শান্তিনগর এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। এ সময় বিপুল পরিমাণ পাসপোর্ট, ভুয়া কোর্সের সনদ, ভুয়া মেডিকেল সার্টিফিকেট উদ্ধার করা হয়েছে।
র্যাব বলছে, বিভিন্ন কোম্পানির সঙ্গে চাকরির ভুয়া নিয়োগপত্র, ভুয়া মেডিকেল সার্টিফিকেটসহ বিভিন্ন ভুয়া কাগজপত্র দেখিয়ে বিদেশ গমনেচ্ছুদের কাছে থেকে টাকা হাতিয়ে নিত চক্রটি।
রাজধানীর কারওয়ান বাজার র্যাব মিডিয়া সেন্টারে শুক্রবার আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে র্যাব-৩-এর অধিনায়ক লে. কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন এসব তথ্য জানিয়ে বলেন, চক্রটি দালালের মাধ্যমে ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে যেতে ইচ্ছুক এমন ব্যক্তিদের পাসপোর্ট সংগ্রহ করত। গত ২ বছরে ৫২১টি পাসপোর্ট সংগ্রহ করেছে তারা। এর মধ্যে যারা মধ্যপ্রাচ্যে যেতে আগ্রহী, তাদের কাছ থেকে দুই-তিন লাখ টাকা করে আদায় করত তারা। ইউরোপ গমনেচ্ছুদের কাছ থেকে নিত ছয় থেকে সাত লাখ টাকা।
লে. কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন বলেন, ভুক্তভোগীদের আশ্বাস দিয়ে সময় ক্ষেপণ করা হতো। যখন ভুক্তভোগীরা টাকা ফেরতের জন্য তাগাদা দিতেন, তখন আর টাকা ফেরত দিত না। গত দুই বছরে পাসপোর্ট ও অর্থ জমাদানকারী কোনো ভুক্তভোগীকে চক্রটি বিদেশে পাঠাতে পারেনি।
র্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, আসামি মাহবুব ২০০০ সাল থেকে সংঘবদ্ধ মানব পাচার ও প্রতারক চক্রের সদস্য। সে প্রথমে বিদেশে উচ্চ বেতনের চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে প্রতারণার মাধ্যমে কিছু লোক পাঠায়। সেই সুবাদে অন্যদের ও তাদের অভিভাবকদের বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে রাজি করিয়ে পাসপোর্ট এবং প্রাথমিক খরচ বাবদ এক থেকে দুই লাখ টাকা হাতিয়ে নিত। এ ছাড়া বিদেশে অবস্থানরত বিভিন্ন দালালের মাধ্যমে ফোন দিয়ে অভিভাবকদের আশ্বস্ত করত, তাদের মাধ্যমে বিদেশে গিয়ে তারা খুব ভালো আছেন এবং অনেক অর্থ উপার্জন করে নিজেদের ভাগ্য বদল করতে সক্ষম হয়েছেন।
আরিফ মহিউদ্দিন বলেন, পরবর্তী সময়ে দেখা যায়, এই চক্রের মাধ্যমে বিদেশে পৌঁছানোর পর বিদেশে অবস্থানরত এজেন্ট দ্বারা তাদের পুনরায় প্রতারিত করা হয়। তাদের কাজের নামে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে বন্দি করে রাখা হয়। বন্দি করে রেখে শারীরিক এবং মানসিক নির্যাতন করা হয়। এ সময়ে মাহবুবের সঙ্গে যোগাযোগ করলে সে ভুক্তভোগীদের অপেক্ষা করতে বলে। সে জানায়, কিছুদিন পরে কোম্পানি চালু হবে। তখন তারা বেতন ও কাজের সুযোগ পাবেন।
১৯৮/সি, তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮
©দৈনিক বাংলা