বহুল আলোচিত নওগাঁর আদিবাসী নেতা ৩৬ বছর বয়সী আলফ্রেড সরেনের ২৩তম মৃত্যুবার্ষিকী ছিল গত শুক্রবার। ২৩ বছর আগে সন্ত্রাসীদের দ্বারা নির্মমভাবে হত্যার শিকার হন অলফ্রেড। তবে ঘটনার ২৩ বছর হলেও এখনো মামলার কোনো সুরাহা হয়নি। আন্তর্জাতিকভাবে আলোচিত এ মামলার ভবিষ্যৎ নিয়ে আদিবাসীদের মধ্যে রয়েছে সংশয়।
স্থানীয়দের অভিযোগ, এ মামলায় জামিনে থাকা আসামিরা তাদের অব্যাহতভাবে হুমকি দেয়ায় ইতোমধ্যে অনেক আদিবাসী পরিবার ভীমপুর আদিবাসী পল্লি ছেড়ে অন্যত্র চলে গেছেন। বর্তমানে যে ১২টি পরিবার এখনো বসবাস করছে, তারা ভূমিদস্যুদের ভয়ে জমিতে চাষাবাদ করতেও পারছে না। ফলে চরম অভাব ও নিরাপত্তাহীনতার মধ্য দিয়ে দিন অতিবাহিত করছেন তারা।
পল্লি ছেড়ে মামলার সাক্ষীরা চলে যাওয়ায় আলফ্রেড সরেনের মামলার ভবিষ্যৎ নিয়ে সন্দিহান হত্যা মামলার বাদী আলফ্রেডের ছোট বোন রেবেকা সরেন।
নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলার ভীমপুর আদিবাসী পল্লিতে সরেজমিনে দেখা যায়, নিস্তব্ধ পল্লিটিতে আগের মতো আর প্রাণচাঞ্চল্য নেই। ঝোপঝাড়ের মধ্যে যে কয়েকটি পরিবার এখনো বসবাস করছে, তারাও বেশ ভীত। রেবেকা সরেন ও তার ছোট ভাই মহেশ্বর সরেন শত হুমকির মধ্যেও সেখানে রয়েছেন শুধু তার ভাইয়ের হত্যার বিচার দেখে যাওয়ার অপেক্ষায়।
পল্লির একধারে বাঁশঝাড়ের ছায়ায় অযত্নে পড়ে রয়েছে আদিবাসী নেতা আলফ্রেড সরেনের সমাধি। এখানকার আদিবাসীদের চোখেমুখে অতঙ্কের ছাপ।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে সেখানকার কয়েকজন বাসিন্দা জানান, আলফ্রেড সরেন হত্যা মামলায় জামিনে থাকা আসামিদের অব্যাহত হুমকিতে ২৪টি পরিবারের মধ্যে বর্তমানে নতুন ও পুরাতন মিলে সেখানে বসবাস করছে মাত্র ১২টি পরিবার। বাকিরা প্রাণভয়ে অন্যত্র চলে গেছে।
আলফ্রেডের ছোট বোন রেবেকা সরেন সেদিনের ভয়াবহ ঘটনার বিবরণ দিতে গিয়ে বলেন, ‘গত ১৮ আগস্ট ২০০০ সালে ভীমপুর আদিবাসী পল্লিতে ভূমিদস্যু হাতেম ও গদাই গংদের সন্ত্রাসী হামলায় তার ভাই আদিবাসী নেতা আলফ্রেড সরেন নৃশংসভাবে খুন হন। ওই ঘটনায় সন্ত্রাসীরা ব্যাপক তাণ্ডব চালিয়ে আদিবাসী পল্লির ১১টি পরিবারের বাড়িঘর ভাঙচুর ও লুটপাটসহ অগ্নিসংযোগ করে। ওই সময় তাদের হামলায় আদিবাসী নারী ও শিশুসহ প্রায় ৩০ জন মারাত্মক আহত হয়। ঘটনার সময় আদিবাসীদের কয়েকটি শিশুকে পল্লির পার্শ্ববর্তী পুকুরে নিক্ষেপ করে সন্ত্রাসীরা।
আলফ্রেড সরেন হত্যার ঘটনায় তার ছোট বোন রেবেকা সরেন বাদী হয়ে হত্যা ও জননিরাপত্তা আইনে পৃথক দুটি মামলা করেন।
মামলায় পুলিশ ৯১ জন আসামির নামে আদালতে চার্জশিট দাখিল করে। এর মধ্যে কয়েকজন আসামিকে গ্রেপ্তারও করে পুলিশ। ওই সময় নওগাঁর দায়রা জজ আদালতে মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়। সে সময় ৪১ জন সাক্ষীর মধ্যে ১৩ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ সম্পন্ন হয়েছিল।
২০০১ সালে ক্ষমতায় আসার পর জননিরাপত্তা আইন বাতিল করে জোট সরকার। ওই সময় পলাতক শীতেষ চন্দ্র ভট্টাচার্য ওরফে গদাই (বর্তমানে প্রয়াত) ও হাতেম আলীসহ ৬০ জনের বেশি আসামি জননিরাপত্তা আইনের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে রিট পিটিশন করলে মামলাটি হাইকোর্ট ৩ মাসের জন্য স্থগিতাদেশ দেন। এরপর আসামিরা জামিনে বেরিয়ে আসেন।
এ মামলার বাদীপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মহসীন রেজা জানান, বর্তমানে আলফ্রেড সরেন হত্যা মামলাটি আপিল ডিভিশন শুনানি নিষ্পত্তি করে পুনরায় পূর্ণাঙ্গ শুনানির জন্য হাইকোর্ট ডিভিশনে প্রেরণ করেছে।
১৯৮/সি, তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮
©দৈনিক বাংলা