‘দেখা যাক...।’ ‘আশা করছি...।’ ‘... আরও উন্নতি করতে হবে।’ ‘ভালো যদি করি, তাহলে গল্পটা ভিন্ন হবে...।’
যদি, কিন্তু আর অপেক্ষা। টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের বর্তমান কাটছে নুরুল হাসান সোহানের এই কথাগুলোর মতো। হারের ব্যাখ্যা দিতে দিতে শব্দও যেন ফুরিয়ে গেছে। ভিন্ন গল্প কবে লেখা হবে? সেদিন হয়তো ভিন্ন কথাও শোনা যাবে সোহানদের কণ্ঠে।
সর্বশেষ ২৪টি টি-টোয়েন্টিতে মাত্র ৬ জয়ের স্মৃতি নিয়ে নিউজিল্যান্ডে ত্রিদেশীয় সিরিজ খেলতে গেছে বাংলাদেশ। কাল পাকিস্তানের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে ২১ রানে হেরে হতাশার ভারই আরও বেড়েছে। ২৫ ম্যাচে হারের সংখ্যা ১৮-তে দাঁড়াল (একটি পরিত্যক্ত)।
শেষ পর্যন্ত এই সংখ্যা কোথায় গিয়ে ঠেকে, সে প্রশ্ন আপাতত গৌণ। জয়-হার ছাপিয়ে ত্রিদেশীয় সিরিজটাকে বিশ্বকাপের প্রস্তুতি হিসেবেই দেখছে বাংলাদেশ। টিম ম্যানেজমেন্ট থেকে বলা হচ্ছে, ত্রিদেশীয় সিরিজ প্রস্তুতি ও পরীক্ষার মঞ্চ। সেই প্রস্তুতি আর পরীক্ষায় বিশ্লেষণ কী বলে– পাকিস্তানের বিপক্ষে কোথায় হারল বাংলাদেশ?
ওপেনিং
উদ্বোধনী জুটিতে বাংলাদেশের হতশ্রী অবস্থা দীর্ঘদিনের। সে দৈন্যতা ঘোচাতে ‘মেইক শিফট’ ওপেনার হিসেবে কাজ চালাচ্ছেন সাব্বির রহমান ও মেহেদী হাসান মিরাজ। আগের তিন ইনিংসে সাব্বির-মিরাজ জুটি থেকে এসেছে ১৯, ১১ ও ২৭ রান। কাল দুজনের ওপেনিং জুটি থামে ২৫ রানে।
রান কম, তার চেয়েও কম রান তোলার গতি। ১৬৮ রানের লক্ষ্যে নেমেও জয়ের তাড়না দেখা যায়নি দুজনের ব্যাটে। দুজনেরই স্ট্রাইক রেট ১০০-এর নিচে! মিরাজ পেস বোলিংয়ের বিপক্ষে কতটা দুর্বল সেটা কাল আরো একবার স্পষ্ট হয়েছে। সাব্বির রহমান জাতীয় দলে ফিরে ৪টি ইনিংস খেললেও এখনো নিষ্প্রভ। ক্রাইস্টচার্চে কাল তার ১৮ বলে ১৪ রানের ইনিংসটা যেন বারবার বলছিল, নিজের জায়গা শক্ত করতেই মনোযোগী সাব্বির।
সাব্বির-মিরাজসহ সর্বশেষ ২৫ ম্যাচে ১১ জন ওপেনারকে বাজিয়ে দেখেছে বাংলাদেশ। এই ২৫ ইনিংসে একবারও ওপেনিং জুটি পঞ্চাশ ছুঁতে পারেনি।
ব্যাটিং অর্ডার
সাকিব আল হাসান না থাকায় বিশ্বকাপে ব্যাটিং অর্ডার কেমন হবে সেটা স্পষ্ট হয়নি। তবে ওপেনিংয়ে যে লিটন দাস থাকছেন না সেটা ত্রিদেশীয় সিরিজের আগে স্পষ্ট করেছেন ব্যাটিং কোচ জেমি সিডন্স। ওপেনিং সফল লিটন কাল তিনে খেলেছেন। ফিরেছেন ২৬ বলে ৩৫ রান করে।
তিন নম্বরে ৯ ইনিংসে ১১৯-এর নিচে স্ট্রাইক রেটে মাত্র ১ ফিফটি লিটনের। অথচ ওপেনিংয়ে ১৩২-এর ওপর স্ট্রাইক রেটে ৪০ ইনিংসে পঞ্চাশ পেরিয়েছেন ৫ বার। ‘মেইক শিফট’ ওপেনারদের ব্যর্থতা লিটনকে ব্যাটিং অর্ডারের নিচে নামানোকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে আরেকবার।
তবে ইয়াসির আলী রাব্বির ব্যাটিং বাংলাদেশকে আশা দেখাচ্ছে। ব্যাটসম্যানদের মধ্যে কাল সফল ছিলেন তিনি। সাত নম্বরে নেমে ২০০ স্ট্রাইক রেটে তার অপরাজিত ৪২ রান যদিও এসেছে হার প্রায় নিশ্চিত হয়ে যাওয়ার পর, তবু ২১ বলে ৫ চার ও ২ ছক্কার ইনিংসটি এতটুকু ভরসা দিয়েছে যে, শেষদিকে রানের গতি বাড়ানোর মতো একজন আছেন!
পাওয়ার প্লে
সেপ্টেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে মিরপুরে তিন দিনের একটি প্রস্তুতি ক্যাম্প করেছিল বাংলাদেশ দল। প্রথম দিনে পাওয়ার প্লে নিয়ে কাজ করেছিলেন ব্যাটসম্যানরা। টিম ডিরেক্টর খালেদ মাহমুদ সুজন জানিয়েছিলেন, ৬ ওভারে পঞ্চাশ রানের গণ্ডি পার করাই লক্ষ্য তাদের। কাল সেটি হয়নি, পাওয়ার প্লে-তে ২ উইকেট হারিয়ে তুলতে পেরেছে ৩৮ রান।
পেস বোলিং
বিশ্বকাপের এত কাছে এসেও পেসারদের নিয়ে এখনো পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশের টিম ম্যানেজমেন্ট। ডানহাতি পেসার হাসান মাহমুদ চোট কাটিয়ে ফেরায় বাদ পড়েছেন ইবাদত হোসেন। ছন্দহীন মোহাম্মদ সাইফউদ্দিনের জায়গা মেলেনি কাল হ্যাগলি ওভালে। আরেক ডানহাতি তাসকিন ছিলেন সাবলীল।
বাঁহাতি পেসার মোস্তাফিজুর রহমানের অফ ফর্ম চিন্তা বাড়াচ্ছে। কাল ৪ ওভারে দিয়েছেন ৪৮ রান, ছিলেন উইকেট শূন্য। বোলিংয়ে ধার হারানো মুস্তাফিজের কাটার-স্লোয়ারে আগের মতো বিষ নেই। এ নিয়ে সর্বশেষ ১৭ ইনিংসে ১২ উইকেট নিয়ে নিভতে থাকা প্রদীপের মতো জ্বলছেন মোস্তাফিজ।
স্পিন
সাকিব-আল হাসানের অনুপস্থিতিতে নাসুম আহমেদ একাদশে সুযোগ পান। দেশের বাইরে এই বাঁহাতি স্পিনারের পরিসংখ্যান সুখকর নয়। ঘরের মাঠে ১৩ ম্যাচে যেখানে ২০ উইকেট নিয়েছেন ১০.৯০ গড়ে, সেখানে ঘরের বাইরে ১০ ম্যাচে ৫১-এর ওপর গড়ে ৬ উইকেট। কাল ক্রাইস্টচার্চের স্পোর্টিং উইকেটে নাসুম অবশ্য ভালোই করেছেন, ৪ ওভারের কোটা শেষ করেছেন ২২ রান দিয়ে, নিয়েছেন ১ উইকেট।
বক্স: সাকিব কেন খেলেননি?
যুক্তরাষ্ট্র থেকে বৃহস্পতিবার বিকেলে দলের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন সাকিব-আল হাসান। তবে কাল পাকিস্তানের বিপক্ষে একাদশে ছিলেন না। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, যুক্তরাষ্ট্র থেকে দীর্ঘ বিমানযাত্রা শেষে ক্রাইস্টচার্চে পৌঁছানো সাকিবের ভ্রমণক্লান্তি এড়াতে প্রথম ম্যাচে তাকে বিশ্রাম দিয়েছে টিম ম্যানেজমেন্ট। কাল একাদশে না খেললেও ইনডোরে অনুশীলন করেছেন সাকিব।
১৯৮/সি, তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮
©দৈনিক বাংলা