আপডেট : ৯ অক্টোবর, ২০২২ ০৮:১৮
মানসিক সমস্যায় ৭৬ শতাংশ শিক্ষার্থী

মানসিক সমস্যায় ৭৬ শতাংশ শিক্ষার্থী

করোনা-পরবর্তী সময়ে পড়াশোনার চাপের কারণে ৭৫ দশমিক ৮৫ শতাংশ শিক্ষার্থী মানসিক সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন।

করোনা-পরবর্তী সময়ে পড়াশোনার চাপের কারণে ৭৫ দশমিক ৮৫ শতাংশ শিক্ষার্থী মানসিক সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন। করোনায় দীর্ঘ বিরতির কারণে সৃষ্ট সেশনজট, পড়াশোনায় অনীহা, পরীক্ষার ফল নিয়ে হতাশা ও শিক্ষাঙ্গনে পঠিত বিষয় বুঝতে না পারার কারণে তারা এই সমস্যায় পড়ছেন।

এ ছাড়া করোনা-পরবর্তী সময়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা ভয়াবহভাবে বেড়েছে। চলতি বছরে জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত গত ৯ মাসে ৪০৪ জন শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছে। যাদের মধ্যে ৫৭ জন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী, ২১৯ জন স্কুল, ৪৪ জন মাদ্রাসা ও ৮৪ জন কলেজপড়ুয়া শিক্ষার্থী রয়েছে।

‘করোনা-পরবর্তী বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর একাডেমিক চাপের প্রভাব ও তাদের আত্মহত্যার প্রবণতা’ শীর্ষক এক জরিপে এসব তথ্য উঠে এসেছে।

শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করা আঁচল ফাউন্ডেশন গতকাল শনিবার জরিপের তথ্য প্রকাশ করেছে। নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক ও আঁচল ফাউন্ডেশনের গবেষক আব্দুল ওহাব ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে জরিপের বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত তুলে ধরেন।

৩৮টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়, ৪৭টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় এবং মাদ্রাসা ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ১ হাজার ৬৪০ জন শিক্ষার্থীর ওপর জরিপ চালায় আঁচল।

জরিপের তথ্যানুযায়ী, করোনার পরে শিক্ষার্থীরা পরীক্ষার সময় অতিরিক্ত পড়াশোনা ও কম সময়ে সিলেবাস শেষ করতে এক ধরনের চাপের মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন। এই সময় শিক্ষার্থীদের আগের তুলনায় পড়াশেনার প্রতি মনোযোগ কমেছে। ফলে কম সময়ে বড় কোর্স শেষ করতে গিয়ে পড়া বুঝতে পারছেন না। ঘন ঘন পরীক্ষার কারণে পড়াশোনায় খাপ খাওয়াতে পারছেন না। শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে অতিরিক্ত ভয় পাচ্ছেন শিক্ষার্থীরা। যার কারণে হঠাৎ মন খারাপ, শরীর ক্লান্ত হয়ে যাচ্ছে। যেটা শিক্ষাজীবনে প্রভাব ফেলছে।

এ ছাড়াও করোনার সময়ে ডিজিটাল বা ইলেকট্রনিক ডিভাইসের অতিরিক্ত ব্যবহারের কারণে শিক্ষার্থীদের মানসিক সমস্যা বাড়িয়ে তুলেছে। যার কারণে নিত্যদিনের ঘুমের অভ্যাসের পরিবর্তন হয়েছে। শিক্ষার্থীরা অনেক বেশি নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছে। যা মানসিক সমস্যার প্রাথমিক ধাপ হিসেবে মনে করা হয়। শুধু তাই নয়, করোনা-পরবর্তী সময়ে শিক্ষার্থীদের ওপর অভিভাবকদের অযাচিত চাপ বেড়েছে। যা শিক্ষাজীবনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।

এ ছাড়া করোনার কারণে শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশায় ছেদ পড়ায় বেড়েছে ক্যারিয়ার নিয়েও দুশ্চিন্তা। দুশ্চিন্তায় ছেলেদের তুলনায় মেয়েরা বেশি এগিয়ে বলে সমীক্ষায় উঠে এসেছে।

জরিপে আরও বলা হয়েছে, ৭৭.৬৮ শতাংশ শিক্ষার্থী পরীক্ষার ভালো ফল না হওয়ার ভয়ে থাকছেন। করোনার কারণে দীর্ঘদিন পড়াশোনা থেকে দূরে থাকায় আত্মবিশ্বাস কমে যাওয়ার কারণে এই ভয় তৈরি হচ্ছে। শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন মেয়াদে সেশনজটের শিকার হচ্ছেন। ফলে শিক্ষার্থীদের পারিবারিক ও সামাজিক চাপ বাড়ছে। বেশির ভাগ শিক্ষার্থী মানসিক সমস্যা নিয়ে কোনো শিক্ষকের সঙ্গে আলোচনা করতে পারে না। সে কারণে তাদের ব্যক্তিত্বের পরিবর্তন ও আত্মবিশ্বাসে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। যারা সমস্যা অন্যের সঙ্গে ভাগাভাগি করতে পারেন তাদের মানসিক স্বাস্থ্য তুলনামূলক ভালো অবস্থায় আছে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই মন খারাপ হলে শিক্ষার্থীরা সমস্যাগুলো ভাগাভাগি করতে কাউকে পাশে পায় না। যার ফলে শিক্ষার্থীরা হতাশায় ভুগে কিংবা আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়।

জরিপে উঠে আসা শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতির জন্য দায়ী সমস্যাগুলো সমাধানে ১০টি প্রস্তাব তুলে ধরেছে আঁচল ফাউন্ডেশন।

প্রস্তাবনাগুলোর মধ্যে আছে, ‘শিক্ষক-শিক্ষার্থীর স্বাভাবিক সম্পর্ক তৈরি করা; অতিরিক্ত পাঠ্যসূচি কমিয়ে যথাসময়ে পরীক্ষা নিয়ে সেশনজট মুক্ত করা; পড়াশোনাকে আনন্দময় ও বাস্তবমুখী করে তোলা; প্রথাগত পাঠ্যসূচির পরিবর্তে চাকরিবাজার উপযোগী পাঠ্যসূচি তৈরি করা; শিক্ষাঋণ চালু করা; নিজ নিজ ক্যাম্পাসে খণ্ডকালীন চাকরির ব্যবস্থা করা; ক্যারিয়ার গঠনে পরামর্শ ও সহায়তা পেতে বিভাগের উদ্যোগে অ্যালামনাইদের সঙ্গে যোগাযোগ জোরদার করা; জরুরিভিত্তিতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে মনোবিজ্ঞানী নিয়োগ দেয়া; মানসিক স্বাস্থ্য সচেতনতা বাড়াতে সভা-সেমিনার আয়োজন করা ও শিক্ষকদের মানসিক স্বাস্থ্যসেবা-সংক্রান্ত প্রশিক্ষণ দেয়া।’

এ ছাড়া ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ মনোবিজ্ঞান সমিতির সভাপতি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি বিভাগের অধ্যাপক (অব.) মো. মাহমুদুর রহমান, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহকারী অধ্যাপক মো. শাহনেওয়াজ খান চন্দন এবং আঁচল ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি তানসেন রোজ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।