চট্টগ্রাম নগরীর কুলগাঁও সিটি করপোরেশন কলেজের একটি শ্রেণিকক্ষ। সেই কক্ষে ঝুলে থাকা চারটি বৈদ্যুতিক ফ্যানের প্রতিটি পাখাই নিচ থেকে বাঁকা করে ব্যবহার অনুপযোগী করে দেয়া। তারই কয়েকটা ছবি তুলে কলেজের একটি ফেসবুক পেজে পোস্ট করেন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মো. আমিনুল হক খান। ছবির ক্যাপশনে অভিমান নিয়ে এই শিক্ষক ‘২০২৩-এর ব্যাচের উপহার, কলেজের প্রতি’ শিরোনাম দিয়ে লেখেন, ‘প্রিয় পরীক্ষার্থীরা তোমাদের জন্য অনেক অনেক দোয়া ও ভালোবাসা। নিম্নোক্ত ছবিগুলো মনে হয় তোমাদের পক্ষ থেকে কলেজ ও আমার জন্য বিদায়ের দিনের উপহার। যাক ভালো থেকো। এভাবে আমাদের ভালো রেখ।’
মো. আমিনুল হক খানের এই পোস্ট ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। শুধু একটি পেজেই পোস্টটিতে নানান রি-অ্যাক্ট করেছেন ২৬ হাজার মানুষ। দুই হাজারের ওপর মানুষ মন্তব্য করেছেন। ভাইরাল হওয়া এই ছবিগুলো দেখে কলেজের সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীদের মধ্যে তো বটেই প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে অনেকের মধ্যে। এটাকে তারা শিক্ষার্থীদের পারিবারিক শিক্ষা, মূল্যবোধ ও নৈতিকতার অবক্ষয় হিসেবে দেখছেন। কেউ কেউ বলছেন, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে যে দূরত্ব বাড়ছে, সম্মান কমছে সেটিরই একটা উদাহরণ এটি।
কলেজ থেকে এবার এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নেয়া শিক্ষার্থীদের কয়েকজন এই কাণ্ড ঘটিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। কলেজের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা জানান, ১৭ আগস্ট সকালে কলেজে এইচএসসি পরীক্ষার্থী শিক্ষার্থীদের জন্য বিদায় সংবর্ধনা ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়। স্থানীয় কাউন্সিলর সাহেদ ইকবাল বাবুসহ কলেজের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা সেই অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন। অনুষ্ঠান শেষে কলেজের পিয়নরা শ্রেণিকক্ষ তালা দিতে গিয়ে পাখা বাঁকা করে দেয়ার বিষয়টি দেখতে পান। পরে তারা কলেজের অধ্যক্ষকে এটি জানালে তিনি সেখানে যান। শিক্ষার্থীদের এমন আচরণে মর্মাহত হয়ে পরে কলেজের ফেসবুক পেজে ছবিসহ পোস্টটি দেন অধ্যক্ষ।
জানতে চাইলে কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আমিনুল হক খান দৈনিক বাংলাকে বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের এমন আচরণে কষ্ট পেয়ে ছবিসহ লেখাটি ফেসবুক পেজে পোস্ট করেছিলাম। যারা এই কাজটি করেছে তাদের মধ্যে ভবিষ্যতে যেন পরিবর্তন আসে সেই আশায় এটি করেছিলাম। কিন্তু সেটি যে এভাবে ছড়িয়ে পড়বে ভাবিনি। অনেকেই এই বিষয়ে মন্তব্য করেছেন। আমার মনে হচ্ছে, আমার সেই সব ছাত্র এখন নিজেদের দোষ বুঝতে পেরেছে।’
কলেজ থেকে এবার ১ হাজার ১৪ জন শিক্ষার্থী এইচএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে। তাদের মধ্যে কয়েকজন এই কাজটি করেছে বলে জানিয়েছেন অধ্যক্ষ। তিনি বলেন, ‘কয়েকজনকে আমরা সন্দেহ করেছি। তাদের মধ্যে একজনকে ডেকে পাঠিয়েছিলাম। তাকে আমি বলেছিলাম তুমি কাজটি করে থাকলেও তোমাকে ক্ষমা করে দেব। তবে সে স্বীকার না করলেও কয়েকজনের নাম বলেছে। এখন যেহেতু পরীক্ষা চলছে, তাই তাদের ওপর মানসিক চাপ হতে পেরে ভেবে আর এগোইনি। আর ওরা তো আমার বাচ্চার মতোই। সে জন্য আমি তাদের ক্ষমা করে দিয়েছি।’
১৯৮/সি, তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮
©দৈনিক বাংলা