মানুষের মস্তিষ্কের ভেতরে জীবন্ত কৃমি! শুনতে অবিশ্বাস্য মনে হলেও সেটিই ঘটেছে অস্ট্রেলিয়ায়। বিশ্বে প্রথমবার এক নারীর মগজে ৮ সেন্টিমিটার (৩ ইঞ্চি) লম্বা একটি জীবন্ত কৃমি পেয়েছেন চিকিৎসকরা।
গত বছর ক্যানবেরায় অস্ত্রোপচারের সময় তার মগজে ক্ষতিগ্রস্ত ফ্রন্টাল লোব টিস্যু থেকে সুতা বা দড়ির মতো লাল ওই পরজীবীকে বের করা হয়। সেটি দুই মাস ধরে ওই নারীর মগজে ছিল বলে ধারণা করছেন চিকিৎসকরা।
গবেষকদের বরাতে বিবিসি জানিয়েছে, এ ঘটনা প্রাণী থেকে মানুষের মধ্যে সংক্রমণের বিপদের বিষয়টি সামনে এসেছে।
ক্যানবেরা হাসপাতালের সংক্রামক রোগ চিকিৎসক সঞ্জয় সেনানায়েক বলেন, ওই নারীর মাথায় অস্ত্রোপচারের সময় চিকিৎসক যখন চিমটা নিয়ে অস্বাভাবিক কিছু তুলে আনছিলেন, তখন উপস্থিত চিকিৎসকদের সবাই চমকে যান। কারণ অস্বাভাবিক সেই জিনিসটি ছিল বাঁকানো ৮ সেন্টিমিটার লম্বা উজ্জ্বল একটি লাল কৃমি। মানুষের মস্তিষ্কে এই পরজীবী সংক্রমণ আগে কখনো দেখা যায়নি বলে জানান সেনানায়েক।
বিবিসি জানায়, ওফিডাসকারিস রবার্তসি প্রজাতির গোলকৃমি কার্পেট পাইথনের (অজগর) মধ্যে খুব সাধারণ। অস্ট্রেলিয়াজুড়ে দেখা মেলে এই অজগর। যদিও এটি বিষধর সাপ নয়।
বিজ্ঞানীদের ধারণা, খুব সম্ভবত ওই নারী যেখানে থাকেন, সেখানে লেকের পাশে স্থানীয় সবজি ‘ওয়ারিগাল গ্রিনস’ তুলতে গিয়ে তিনি সংক্রমিত হয়েছিলেন।
‘এমার্জিং ইনফেকশাস ডিজিজেস’ জার্নালে অস্ট্রেলিয়ান প্যারাসাটোলজি বিশেষজ্ঞ মেহরাব হোসেন জানান, ওয়ারিগাল গ্রিনস রান্না করার পর সেই পরজীবীর ‘আকস্মিক বাহক’ হয়েছিলেন ওই নারী। ওয়ারিগাল গ্রিনসে অজগরের মল ও পরজীবীর ডিম ছিল বলে তার ধারণা।
ওই নারীর সংক্রমিত হওয়ার পর পেটে প্রচণ্ড ব্যথা ও কাশি হতো। পাশাপাশি রাতে প্রচুর ঘাম এবং ডায়রিয়াও হয় ওই নারীর। এর ফলে তার স্মৃতিভ্রষ্টতা ও বিষণ্নতাও বাড়ছিল।
২০২১ সালের জানুয়ারির শেষ দিকে ওই নারীকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে মস্তিষ্কে স্ক্যান করলে মগজের ডান ফ্রন্টাল লোবে একটি ক্ষত দেখা যায়। পরের বছরের জুনে বায়োপসি করার সময় তার শারীরিক অসুস্থতার কারণ প্রকাশ পায়। তবে অস্ত্রোপচারের পর ওই নারী ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠছেন।
১৯৮/সি, তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮
©দৈনিক বাংলা