ফরিদপুরের সদরপুর দিয়ারা নারিকেলবাড়িয়া ইউনিয়নে গত এক সপ্তাহে ৩ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে পদ্মায় নদীভাঙনে দুই শতাধিক ঘরবাড়ি বিলীন হয়েছে। চলতি বর্ষা মৌসুমে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও প্রবল বর্ষণের ফলে তীব্র স্রোতে নদীভাঙন শুরু হয়েছে ইউনিয়টিতে।
এ ছাড়া ভাঙনঝুঁকিতে রয়েছে পদ্মা পাড়ের শত শত ঘর, ফসলি জমি ও বিভিন্ন স্থাপনা। সব হারিয়ে ভাঙনকবলিতরা আশ্রয় নিয়েছেন স্থানীয় স্কুলঘর ও খোলা মাঠে। তারা খাদ্য, চিকিৎসা, বিদ্যুৎসহ বিভিন্ন ধরনের সংকট রয়েছে। তাদের সাহায্যে কোনো সরকারি-বেসরকারি সংস্থা এগিয়ে আসছে না বলে জানান স্থানীয়রা।
পদ্মার তীব্র স্রোতে ইউনিয়নটির নন্দলাপুর, নুরুদ্দিন সরদারের কান্দি, জহুরুল হক ব্যাপারীর কান্দি ও কুদ্দুস মোল্যার কান্দি গ্রামের প্রায় শতাধিক মানুষ নদী ভাঙনের কবলে পড়েছেন। এ ছাড়া নদীভাঙনের শঙ্কায় পদ্মার পাড় থেকে সরে যাচ্ছেন হাজার হাজার মানুষ। ভাঙনের ফলে ইউনিয়নটিতে প্রায় ১০ দিন ধরে বিছিন্ন রয়েছে বিদ্যুৎ সংযোগ। তবে ভাঙন রোধে এখনো নেয়া হয়নি কোনো কার্যকরী পদক্ষেপ।
ইউনিয়নের নন্দলাপুর গ্রামের বাসিন্দা শেখ বেলাল বলেন, গত সোমবার রাত ৯টার দিকে হঠাৎ করে আমাদের গ্রামে ভাঙন দেখা দিয়েছে। মুহূর্তের মধ্যে আমার ও আমার প্রতিবেশীদের বাড়ি ভাঙা শুরু হয়। ছেলেমেয়ে, গরু-ছাগল ও ঘরের মালামাল নিয়ে বেরিয়ে আসি। তাড়াহুড়ো করে ঘরের কিছু অংশ ভেঙে এনেছিলাম, তা দিয়েই পরিবার নিয়ে খোলা মাঠে আশ্রয় নিয়েছি। এখন আমরা খুব অসহায় অবস্থায় দিন পার করছি।’
নুরুদ্দিন সরদার কান্দি গ্রামের ইলিয়াস আলী বলেন, ‘নদীতে আমাদের সব নিয়ে গেছে। এদিকে কোনো কর্মও নেই। পরিবার নিয়ে অনাহারে দিন কাটাচ্ছি। এখনো সরকারিভাবে কোনো সাহায্য-সহযোগিতা পাইনি। এভাবে চলতে থাকলে পরিবার নিয়ে না খেয়ে মরতে হবে। আমরা সরকারের কাছে সাহায্য চাই।’
কুদ্দুস মোল্যার কান্দি গ্রামের রহিমা খাতুর বলেন, ‘সন্তানদের নিয়ে রাতের খাবার খেয়ে ঘুমানোর প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। হঠাৎ করে এলাকাবাসীর ডাক-চিৎকার শুনে বাইরে আসি। দেখি নদীতে সবকিছু বিলীন হয়ে যাচ্ছে। স্বামী, সন্তান নিয়ে দ্রুত ঘরের মালামাল সরিয়ে নিতেই সব শেষ হয়ে যায়। এখন খুব অসহায় অবস্থায় জীবনযাপন করছি। আমি ভাঙন রোধে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও সরকারের কাছে স্থায়ী সমাধান প্রার্থনা করছি, যাতে আর কেউ ভিটেমাটি হারা না হই।’
নারিকেলবাড়িয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. নাসির হোসেন বলেন, ‘আমাদের ইউনিয়নটি পদ্মা নদীবেষ্টিত হওয়ায় প্রতিবছরই ভাঙনের শিকার হয়। ভাঙন রোধে টেকসই বাঁধ নির্মাণের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও সরকারের কাছে আবেদন করেছি। আসা করছি, ভাঙন রোধে খুব শিগগির সরকার কার্যকারী পদক্ষেপ নেবে।’
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আহসান মাহমুদ রাসেল বলেন, ‘ক্ষতিগ্রস্তদের নামের তালিকা করার জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছি, এই কাজ চলমান রয়েছে। দ্রুত ভাঙনকবলিতদের পাশে দাঁড়াব। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে ভাঙন প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
১৯৮/সি, তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮
©দৈনিক বাংলা