১০ বছর আগে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং মধ্য এশিয়া এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতে তার সফরের সময় বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ (বিআরআই) উন্মোচন করেছিলেন। এ প্রকল্প আন্তর্জাতিক সহযোগিতার একটি নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ সহযোগিতার জন্য একটি উন্মুক্ত এবং বৈশ্বিক প্ল্যাটফর্ম হয়ে উঠেছে যা ভৌগোলিক সীমাবদ্ধতা অতিক্রম করে, সাংস্কৃতিক পার্থক্য ভেদ করে এবং উন্নয়নের প্রয়োজনগুলোকে একীভূত করেছে।
চলতি বছরে বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের ১০ বছর। এ প্রকল্পের ১০ বছর পূর্ণ উপলক্ষে শীর্ষ চাইনিজ কোম্পানির অংশগ্রহণে বৃহস্পতিবার থেকে তিন দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত হবে দি বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ ইন বাংলাদেশ এক্সিবিশন-২০২৩। পূর্বাচলে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টারে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে যৌথভাবে বাংলাদেশ-চায়না চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি ও দি অ্যাম্বাসি অব চায়না ইন বাংলাদেশ।
বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ (বিআরআই) হচ্ছে একটি চৈনিক প্রকল্প। ২০১৩ সালে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং এ প্রকল্পের সূচনা করেন। প্রকল্পের উদ্দেশ্য বিশ্বের ১৫০টির বেশি দেশকে আর্থিক সহায়তা দিয়ে উন্নতি সাধনের চেষ্টা করা। প্রায় ৪ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার ব্যয়ে করার পরিকল্পনা আছে। এটি বাস্তবায়ন করতে ইতোপূর্বে আরও দুটি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। থার্ড সম্মেলন হবে চীনের বেইজিংয়ে। ইতোমধ্যে ওই সম্মেলনে অংশ নিতে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালকে চিঠি দিয়েছে চীন সরকার।
বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ কর্মসূচির আওতায় ২০১৬ সালে ঢাকা সফরে আসেন চীনের প্রেসিডেন্ট। ওই সময় এ দেশে ৪ হাজার কোটি ডলার বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি দেন। এর মধ্যে ২৪৪৫ কোটি ডলার অবকাঠামো প্রকল্পে এবং ১৩৬০ কোটি ডলার যৌথ উদ্যোগ বিনিয়োগের জন্য বরাদ্দ দেয়া হয়। পাশাপাশি চীন বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য ২০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ঋণ দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) তথ্যমতে, ২০০৫-২৩ সাল পর্যন্ত ১৮ বছরে দেশে ৭০০ কোটি ডলারের কিছু বেশি বিনিয়োগ করেছে চীন। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে, যার পরিমাণ ৩২৭ কোটি ডলার। এ ছাড়া ধাতু (নির্মাণসংশ্লিষ্ট) সরবরাহ খাতে ২১৩ কোটি ডলার, পরিবহন ও যোগাযোগ খাতে ১১০ কোটি ডলার, আর্থিক খাতে ১৬ কোটি ও অন্যান্য খাতে ৪১ কোটি ডলার বিনিয়োগ রয়েছে। সর্বশেষ গত বছরের জুনে দেশের জ্বালানি খাতে ১৭ কোটি ডলার বিনিয়োগ করে চীনা প্রতিষ্ঠান চায়না জেনারেল টেকনোলজি। এর আগে জানুয়ারিতে পরিবহন ও জ্বালানি খাতে যথাক্রমে ২৪ কোটি ও ১২ কোটি ডলারের দুটি বিনিয়োগ এসেছিল।
ইআরডি সূত্রমতে, বিআরআইয়ের প্রতিশ্রুতির আওতায় চীন নয়টি প্রকল্পের জন্য ৮০৮ কোটি ডলার ঋণ দিয়েছে। ইতোমধ্যে একটি প্রকল্পের কাজ শেষ হয়েছে এবং ৮টি চলমান। চলতি বছরের জুন পর্যন্ত ছাড় হয়েছে ৪৪৭ কোটি ডলার। ২০২৬ সালের মধ্যে সব প্রকল্প বাস্তবায়ন হওয়ার কথা। চলমান প্রকল্পের মধ্যে চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর তলদেশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল নির্মাণকাজ শেষের পথে। ২৮ অক্টোবরে যান চলাচলের জন্য খুলে দেয়া হবে। প্রকল্পটির ব্যয় ৭০ কোটি ৫৮ লাখ ডলার। ইনস্টলেশন অব সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং উইথ ডাবল লাইন প্রকল্পের প্রায় ৯৮ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। এর খরচ ধরা হয় ৪৬ কোটি ৫৪ লাখ ডলার। এর পরই আছে পদ্মা সেতু রেল সংযোগ। জুন পর্যন্ত ৮০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। রেললাইনটির খরচ ২৬৭ কোটি ডলার। জুন পর্যন্ত ১৯৯ কোটি ডলার পাওয়া গেছে। এ ছাড়া ঢাকা থেকে আশুলিয়া পর্যন্ত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ প্রকল্পের অগ্রগতি ১৫ শতাংশ হয়েছে। এর খরচ ১২০ কোটি ডলারের মধ্যে জুন পর্যন্ত ১৭ কোটি ডলার পাওয়া গেছে। শেষ হবে ২০২৬ সালের জুনে।
এ প্রকল্পে আওতায় এখন পর্যন্ত, চীন ১৫১টি দেশ এবং ৩২টি আন্তর্জাতিক সংস্থার সঙ্গে যৌথভাবে বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ নির্মাণে ২০০ টিরও বেশি সহযোগিতা চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। এটি ৪ লাখ ২০ হাজার মানুষের চাকরির সুযোগ তৈরি করেছে এবং প্রায় ৪০ মিলিয়ন মানুষকে দারিদ্র্য থেকে তুলেছে৷
১৯৮/সি, তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮
©দৈনিক বাংলা