নিয়োগ পরীক্ষায় মোছা. জেসমিন আক্তার নম্বর পেয়েছিলেন ১৯। তার এই নম্বরকে উল্টে ৯১ করে দেয়া হয়। আর তাতেই তিনি নিয়োগ পান খাদ্য পরিদর্শক হিসেবে। বর্তমানে কর্মরত আছেন নীলফামারীর জলঢাকা উপজেলায় খাদ্য পরিদর্শক হিসেবে।
তাজুল ইসলাম নিয়োগ লিখিত পরীক্ষায় ৫৫ নম্বর পেলেও চাকরি দেয়ার জন্য তাকে দেয়া হয় ৮৯। তিনি এখন শরীয়তপুর উপজেলার খাদ্য পরিদর্শক।
পরীক্ষার নম্বর জালিয়াতি করে এরকমভাবে ৪৪ জনকে খাদ্য পরিদর্শক হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। এর মধ্যে একজন চাকরিতে যোগ দেননি। অন্যরা গত এক দশক ধরে খাদ্য পরিদর্শক হিসেবে চাকরি করে আসছেন দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলায়।
ওই নিয়োগে জালিয়াতির অভিযোগ ওঠায় দীর্ঘ অনুসন্ধান শেষে ২০১৫ সালে ৫৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) উপপরিচালক মো. মনিরুল হক। কয়েক হাত ঘুরে মামলার শেষ তদন্ত করেন আরেক উপপরিচালক আলী আকবর। তার তদন্তে তিনি তিনজনকে অব্যাহতি দিয়ে ৫০ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্রে আসামি করেন।
গতকাল সোমবার আলী আকবর ওই মামলার অভিযোগপত্র আদালতে জমা দেন। দুদক সচিব মাহবুব হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, দীর্ঘ তদন্ত শেষে যাদের নাম নিশ্চিতভাবে অপরাধী হিসেবে শনাক্ত হয়েছে, তাদের অভিযোগপত্রে আসামি করা হয়েছে।
দুদক সূত্র জানায়, নিয়োগ পরীক্ষার জন্য গঠিত বাছাই কমিটির কয়েকজন সদস্য ও পরীক্ষা নেয়ার সময় তথ্য প্রযুক্তি সহায়তা দেয়া ডেভেলপমেন্ট প্ল্যানার্স অ্যান্ড কনসালটেন্টসের কর্মকর্তারা সরাসরি নিয়োগ জালিয়াতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।
চার্জশিটভুক্ত আসামিদের মধ্যে আছেন নিয়োগ কমিটির সভাপতি ও খাদ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (সংগ্রহ) ইলাহী দাদ খান, কমিটির সদস্য ও খাদ্য বিভাগের সাবেক উপসচিব (বর্তমানে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব) নাসিমা বেগম, খাদ্য অধিদপ্তরের সাবেক উপপরিচালক ইফতেখার আহমেদ, এবং ডেভেলপমেন্ট প্ল্যানার্স অ্যান্ড কনসালটেন্টসের ম্যানেজার মো. আইউব আলী, সাবেক সিস্টেম এনালিস্ট ও টেকনিক্যাল ম্যানেজার আসাদুর রহমান, সাবেক হার্ডওয়ার ইঞ্জিনিয়ার মো. আরিফ হোসেন এবং অ্যাসিস্ট্যান্ট ডাটাবেজ অ্যাডমিন মো. আবুল কাসেম।
এ ছাড়া খাদ্য পরিদর্শক হিসেবে নিয়োগ পাওয়া ৪৩ খাদ্য পরিদর্শক চার্জশিটে আসামি হয়েছেন। এরা হলেন- শরীয়তপুর উপজেলার মুহাম্মদ তাজুল ইসলাম, সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার মো. জহিরুল ইসলাম, সিলেট সদরের অপূর্ব কুমার রায়, সাভার উপজেলার আবু জাকির মোহাম্মদ রিজওয়ানুর রহমান, ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলার আসমা রহমান, মানিকগঞ্জ হরিরামপুরের আসমা ইসলাম, সিলেটের বিয়ানীবাজারের জাহানারা জলি, শেরপুর নয়াবিল টিপিসির অলিউর রহমান, জামালপুর সদর উপজেলার সানজিদা সুলতানা, কিশোরগঞ্জের কটিয়াদি উপজেলার উম্মে হানী, সিলেট বিশ্বনাথ উপজেলার মোহাম্মদ মোহাইমিনুল ইসলাম ভূঞা, হবিগঞ্জ আজমিরীগঞ্জের প্রতাপ কুমার সরকার, পাবনার চাটমোহরের কোহিনুর আক্তার, সুনামগঞ্জ ধর্মপাশার মির আরিফুর রহমান, নেত্রকোনার কলমাকান্দা উপজেলার মোহাম্মদ আব্দুল ওয়াহাব, ময়মনসিংহ গয়েশপুরের এলএসডির মো. সাজ্জাদ হোসেন খান পাঠান, নেত্রকোনা সদর উপজেলার হিমেল চন্দ্র সরকার, ঢাকা সিএসডির মোহাম্মদ রইছ উদ্দিন, শেরপুর সদর উপজেলার সালমা আক্তার, জামালপুর এলএসডির শামছুন নাহার, টাঙ্গাইল ঘাটাইলের ইয়াসির আরাফাত, টাঙ্গাইল নাগরপুর উপজেলার মো. এদিব মাহমুদ, পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলার হালিমা আহমেদ, ঝালকাঠি সদর উপজেলার রবীন্দ্রনাথ বিশ্বাস, কুমিল্লার বরুড়া উপজেলার মোহাম্মদ তৈয়ব উল্যাহ খান, নওগাঁর ধামইরহাট উপজেলার শেখ মো. জাকারিয়া হাসান, নওগাঁর বদলগাছীর মোহাম্মদ নুরুজ্জামান, নওগাঁর পোরশা উপজেলার মো. আতিকুর রহমান, বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার মোছা. মমতাজ বেগম, জামালগঞ্জ এলএসডির কানিজ শারমিন, পাবনার আটঘরিয়া উপজেলার মো. জুনায়েদ কবীর, মানিকগঞ্জ সিংগাইর উপজেলার সেলিনা আক্তার, সিরাজগঞ্জ কাজীপুর উপজেলার মোহাম্মদ আলী মিঞা, রংপুর মিঠাপুকুরের মোছা. জাকিয়া সুলতানা, কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার অনিমেষ কুমার সরকার, নীলফামারীর জলঢাকা উপজেলার মোছা. জেসমিন আক্তার, নীলফামারীর সৈয়দপুর উপজেলার মো. রায়হান কবির, রংপুর পীরগঞ্জ মিঠাপুকুর টিপিসির মো. শরিফুল ইসলাম, সাতক্ষীরা দেবহাটার বিল্লাল হোসেন, বাগেরহাটের মোংলা উপজেলার মো. আবুল হাশেম, পটুয়াখালী কাঁঠালতলি উপজেলার ইসরাত জাহান মনা, বরগুনা সদর উপজেলার আরিফা সুলতানা এবং সুনামগঞ্জ দিরাই উপজেলার খাদ্য পরিদর্শক আশীষ কুমার রায়।
দুদক সূত্র জানায়, খাদ্য অধিদপ্তরের ২০১০ সালের ১৬ সেপ্টেম্বরে ১ হাজার ৫৫২টি শূন্য পদ পূরণের জন্য খাদ্য অধিদপ্তর নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেয়। এর পরই খাদ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন) ইলাহী দাদ খানকে সভাপতি করে পাঁচ সদস্যের নিয়োগ কমিটি গঠন করা হয়।
২০১১ সালের ২৩ ডিসেম্বর লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এরপর মৌখিক পরীক্ষা শেষে ২০১২ সালের ১১ জানুয়ারি উত্তীর্ণদের নাম ঘোষণা করা হয়।
১৯৮/সি, তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮
©দৈনিক বাংলা