চট্টগ্রামে ২৮ অক্টোবর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলের পরই উদ্বোধন করা হতে পারে নির্মাণাধীন দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে। মঙ্গলবার দৈনিক বাংলাকে এমন তথ্যই জানিয়েছেন প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস।
সম্প্রতি দেশের বৃহত্তম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে উদ্বোধনের পর সবার চোখ এখন বন্দরনগরীতে। ৪ হাজার ৩৬৯ কোটি ৭ লাখ ১০ হাজার ৮১৯ টাকা ব্যয়ে এখানেই নির্মিত হচ্ছে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম উড়াল সড়ক। এখনো মূল অবকাঠামোর ২০ শতাংশ কাজ বাকি থাকলেও শুরু হয়েছে উদ্বোধনের তোড়জোড়। বঙ্গবন্ধু টানেলের সুফল পেতে টানেল উদ্বোধনের সঙ্গে নগরীর লালখান বাজার থেকে পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকত পর্যন্ত নির্মিত এই এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কিছু অংশ এখনই যান চলাচলের জন্য খুলে দিতে চায় প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা। যান চলাচলের উপযোগী করতে তিন শিফটে বর্তমানে ৩ হাজারের অধিক শ্রমিক কাজ করছেন এ প্রকল্পে।
প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস বলেন, ‘আমরা প্রকল্পের সামারিসহ প্রস্তাব পাঠিয়েছি। তবে এখনো অনুমোদন আসেনি। আমাদের ধারণা, ২৮ অক্টোবর টানেলের সঙ্গে এলিভেডেট এক্সপ্রেসওয়েও উদ্বোধন হবে। কারণ, এর পরে তো আর সময় নেই।’
কাজের অগ্রগতি বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এখন পর্যন্ত পতেঙ্গা থেকে কাস্টম পর্যন্ত আমাদের কার্পেটিং শেষ। অর্থাৎ এই অংশ যান চলাচলের জন্য পুরোপুরি তৈরি। এদিকেও তৈরি মোটামুটি, তবে আগ্রাবাদ বারেক বিল্ডিং এলাকায় গার্ডারে একটা স্প্যান বাকি আছে, কর্ণফুলীর পর থেকে গার্ডারে স্ল্যাব ঢালাই হয়ে আসছে। দেওয়ান হাটের আগ পর্যন্ত আগামী এক মাসের মধ্যে পুরোপুরি তৈরি করে ফেলব আমরা।’
নির্মাণাধীন উড়ালসড়কের দৈর্ঘ্য ১৬ দশমিক ২ কিলোমিটারের এই উড়ালসড়কের প্রস্থ ১৬ দশমিক ৫ মিটার বা ৫৪ ফুট।
বন্দরের আপত্তিতে নকশায় পরিবর্তন
এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে তৈরির এই পুরো প্রকল্পের কাজ করা সম্পন্ন হচ্ছে ৪টি ধাপে। ২০১৯ সালে কাজ শুরুর পর সহজেই প্রথম দুই ধাপে ভৌত কাজ সম্পন্ন করে বাস্তবায়নকারী সংস্থা। তৃতীয় ধাপে আপত্তি জানায় চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। তাতে প্রতিষ্ঠানটির নিরাপত্তাজনিত কারণে নকশায় পরিবর্তন আনতে হয়। শুরুতে নগরীর বৃহত্তম এই উড়ালসড়ক লালখান বাজার থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত নির্মাণের কথা ছিল। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের আপত্তিতে পরিবর্তিত নকশায় লালখান বাজার থেকে পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকত এলাকা পর্যন্ত ১৬ দশমিক ২ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যে প্রস্তুত হচ্ছে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে। কাজের চতুর্থ ধাপে আগ্রাবাদ এক্সেস রোড ও পোর্ট কানেক্টিং রোডের কাজ শেষ না হওয়ায় নগর ট্রাফিক পুলিশের আপত্তিতে আটকে ছিল কাজ। ২০২০ সালে এই দুই সড়ক চালুর পর ফের শুরু হয় কাজ।
তিন দফায় বেড়েছে সময়
বন্দরনগরীর যানজট কমানো ও নগরীর সঙ্গে দক্ষিণাঞ্চলের যোগাযোগ সহজ করার লক্ষ্যে ২০১৭ সালের জুলাইয়ে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণের এই প্রকল্প একনেক সভায় অনুমোদন পায়। ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে প্রকল্পের নির্মাণকাজ উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
শুরুতে প্রকল্পটির ব্যয় ৩ হাজার ২৫০ কোটি ৮৩ লাখ টাকা নির্ধারণ করা হলেও পরবর্তী সময়ে নানা জটিলতায় ব্যয় বৃদ্ধি করে তা ৪ হাজার ৩৬৯ কোটি ৭ লাখ ১০ হাজার ৮১৯ টাকা করা হয়, যা মূল ব্যয়ের ৩৪ শতাংশেরও কিছু বেশি।
র্যাম্প নির্মাণে বিলম্ব: সুফল নিয়ে সংশয়
বঙ্গবন্ধু টানেল খুলে দেয়া হলে শহরে যানবাহনের চাপ দ্বিগুণের বেশি হতে পারে। এ সমস্যার সমাধান হিসেবে নগরীর দক্ষিণ অংশের সঙ্গে যোগাযোগ সহজ করতে নির্মাণ হচ্ছে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে। এক্সপ্রেসওয়ে ব্যবহার করে কয়েক ঘণ্টার এই পথ ৩০ মিনিটে পাড়ি দেয়া যাবে বলে আশা করা হচ্ছে। বঙ্গবন্ধু টানেল উদ্বোধনের আগে চট্টগ্রামের সবচেয়ে বড় এই উড়ালসড়ক দেওয়ানহাট থেকে পতেঙ্গা পর্যন্ত খুলে দেয়ার কথা থাকলেও এখনো তৈরি হয়নি কোনো র্যাম্প।
প্রকল্পে নির্ধারিত ১৫টি র্যাম্পের বিষয়ে মাহফুজুর রহমান বলেন, ‘পুরো এলিভেডেট এক্সপ্রেসওয়েতে মোট ১৫টি র্যাম্প রয়েছে, তবে এখনো কোনো র্যাম্প তৈরি হয়নি। বর্তমান প্রকল্পের মেয়াদ ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত। এর মধ্যে ফ্লাইওভারের সব কাজ শেষ হয়ে যাবে। তবে র্যাম্পের কিছু কাজ বাকি থাকতে পারে।’
এখনো র্যাম্প নির্মিত না হওয়ায় দেওয়ানহাট থেকে সরাসরি পতেঙ্গা বা পতেঙ্গা থেকে সরাসরি দেওয়ান হাট পর্যন্ত চলাচলের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা যাবে এক্সপ্রেসওয়ে। এতে র্যাম্প নির্মাণ না হওয়া পর্যন্ত আগ্রাবাদের মতো শহরের অন্যতম বৃহৎ বাণিজ্যিক এলাকার ব্যবসায়ীরা ব্যবহার করতে পারবেন না এই উড়ালসড়ক। এমনকি চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর এলাকায়ও যানবাহন ওঠানামা করতে পারবে না র্যাম্পের কারণে। আর তাই এ উড়ালসড়ক খুলে দেয়া হলেও তার সুফল নিয়ে তৈরি হয়েছে সংশয়।
১৯৮/সি, তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮
©দৈনিক বাংলা