গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার আন্দোলনে বিএনপি শুধু একা নয়, গণতান্ত্রিক বিশ্ব সঙ্গে আছে বলে মন্তব্য করেছেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেছেন, বাংলাদেশের গণতন্ত্র লাইফ সাপোর্টে আছে। এই আন্দোলনে সবাইকে ঝাঁপিয়ে পড়ার প্রস্তুতি নিতে হবে।
আন্তর্জাতিক গণতন্ত্র দিবস উপলক্ষে শুক্রবার বিকেলে রাজধানীতে এক সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আসুন আমরা সবাই একযোগে বাংলাদেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য ঝাঁপিয়ে পড়ি- এই হোক আজকে গণতন্ত্র দিবসে আমাদের শপথ।’
নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপির উদ্যোগে সরকার পদত্যাগের ‘এক দফা’ এবং মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমানসহ নেতা-কর্মীদের মুক্তির দাবিতে এই সমাবেশ হয়। কাকরাইল থেকে ফকিরাপুল মোড় পর্যন্ত নয়াপল্টনের দীর্ঘ সড়কে হাজার হাজার নেতা-কর্মীর উপস্থিতিতে সমাবেশস্থল কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়।
মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক আবদুস সালামের সভাপতিত্বে ও উত্তরের সদস্য সচিব আমিনুল হকের সঞ্চালনায় সমাবেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, ড. আবদুল মঈন খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, কেন্দ্রীয় নেতা আবদুল আউয়াল মিন্টু, আবুল খায়ের ভুঁইয়া, হাবিবুর রহমান হাবিব, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন, শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, আবদুস সালাম আজাদ, শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানী, মহিলা দলের আফরোজা আব্বাস, যুবদলের শফিকুল ইসলাম মিল্টন, স্বেচ্ছাসেবক দলের রাজীব আহসান, কৃষক দলের শহিদুল ইসলাম বাবুল, মুক্তিযোদ্ধা দলের সাদেক আহমেদ খান, ওলামা দলের শাহ নেছারুল হক, তাঁতী দলের আবুল কালাম আজাদ, মৎস্যজীবী দলের আবদুর রহিম, শ্রমিক দলের মোস্তাফিজুল করীম মজুমদার, জাতীয়তাবাদী সাংস্কৃতিক সংস্থার (জাসাস) জাকির হোসেন রোকন, ছাত্রদলের রাকিবুল ইসলাম রাকিব প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘গণতান্ত্রিক দিবসে আমাদের শপথ হচ্ছে- যেকোনো মূল্যে এই সরকারের অধীনে আমরা নির্বাচনে যাব না। কোনো নির্বাচন হবে না নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে ছাড়া। এখনো বলছি- পদত্যাগ করুন, সংসদ ভেঙে দিন, নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের হাতে ক্ষমতা দিন। কেন দিতে চান না। যদি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন হয়, যদি জনগণ ভোট দিতে যেতে পারে তাহলে তারা ১০টি আসনও পাবে না। সে জন্য তারা প্রশাসনকে নিজেদের মতো করে সাজাচ্ছে।’
মানবাধিকার সংস্থা ‘অধিকার’-এর প্রধান আদিলুর রহমান খান ও পরিচালক এ এস এম নাসির উদ্দিনকে কারাদণ্ড দেয়া প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, বাংলাদেশের মানুষের ভোটাধিকার, গণতান্ত্রিক অধিকার, মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা ও বিচারবহির্ভূত হত্যার বিরুদ্ধে যিনি কথা বলেছেন, নির্বিচারে মানুষ হত্যা তথা হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হামলা-আক্রমণের বিরুদ্ধে তারা কথা বলেছিলেন। আজকে এই সরকার এত ভীতসন্ত্রস্ত যে তাদের দুই বছর করে কারাদণ্ড দিয়েছে। সারা বিশ্ব এই সরকারকে নিন্দা জানিয়ে অবিলম্বে তাদের মুক্ত করতে বলেছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) রেজল্যুশন করেছে যে, অবিলম্বে এই মামলা বাতিল করে তাদের মুক্ত করা হোক এবং বাংলাদেশে গণতন্ত্র ও মানুষের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠা করা হোক।
‘প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য বছরের শ্রেষ্ঠ কৌতুক’ মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রী আক্ষেপের সুরে বলেছেন যে, আমি এত ভালো ভালো নির্বাচন করি আর দেশে-বিদেশে প্রশ্ন করে নির্বাচন ভালো হয় না। এটাই হচ্ছে এই বছরের শ্রেষ্ঠ কৌতুক। শেখ হাসিনা ভালো নির্বাচন করে, আওয়ামী লীগ ভালো নির্বাচন করে- এ কথা ঘোড়াও বিশ্বাস করে না। ওরা শুনলে হাসে।
বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমান, সাতক্ষীরার সাবেক সংসদ সদস্য হাবিবুল ইসলাম হাবিবসহ নেতাদের মিথ্যা মামলায় কারাদণ্ড প্রদানের পরিসংখ্যান তুলে ধরেন তিনি।
বিএনপির মহাসচিব বলেন, নির্বাচন ঘনিয়ে আসায় বিভিন্ন অজুহাতে সারা দেশে যত গণতান্ত্রিক কর্মী, বিএনপির নেতা-কর্মী আছে তাদের বিরুদ্ধে গায়েবি ও মিথ্যা মামলা দিয়ে আটক করে রাখছে। কারণ একটাই সামনে নির্বাচন। এই নির্বাচনে সব বিরোধী দলকে দূরে সরিয়ে রাখতে হবে আর নিরপেক্ষ নির্দলীয় সরকারের আন্দোলনে যেন বিরোধী দলের নেতারা অংশ নিতে না পারে। এই যে ঢাকা মহানগর বিএনপি ও যুবদলের নেতাদের আটক করে রেখেছেন তাতে কি আজকে মহানগরের এই সমাবেশে লোক কম হয়েছে? হয়নি। মামলা দিয়ে আটক করে এই সরকার তার পতন ঠেকাতে পারবে না।
সমাবেশে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা ড. এ বি এম ওবায়দুল ইসলাম, কাদের গণি চৌধুরী, প্রকৌশলী আশরাফ উদ্দিন বকুল, আবু নাসের মুহাম্মদ রহমাতুল্লাহ, পেশাজীবী নেতা প্রকৌশলী আলমগীর হাছিন আহমেদ, প্রকৌশলী মো. মোস্তাফা-ই জামান সেলিম, কে এম আসাদুজ্জামান চুন্নুসহ বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের হাজারও নেতা-কর্মী উপস্থিত ছিলেন।
১৮ সেপ্টেম্বর থেকে লাগাতার কর্মসূচি
এদিকে গতকাল সকালে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, সরকার পতনের ‘এক দফা’ দাবি আদায়ে যুগপৎ আন্দোলনের পরবর্তী লাগাতার কর্মসূচি আগামী ১৮ সেপ্টেম্বর ঘোষণা করা হবে।
ঢাকা, জামালপুরসহ বিভিন্ন স্থানে বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের নামে ঢালাওভাবে মামলা দেয়া এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিপীড়নের চিত্রও তুলে ধরেন বিএনপি মহাসচিব। সরকারের পক্ষে ভোট চাওয়া জামালপুরের ডিসিকে প্রত্যাহারের ঘটনা ‘আইওয়াশ’ বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
১৯৮/সি, তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮
©দৈনিক বাংলা