আপডেট : ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ১২:৫৩
চড়ুই পাখির অভয়াশ্রম
মীর আনোয়ার আলী, রংপুর

চড়ুই পাখির অভয়াশ্রম

কৃষ্ণচূড়া গাছে চড়ুই পাখির অভয়াশ্রম। গতকাল রংপুর নগরীর মডার্ন মোড় এলাকায়। ছবি: দৈনিক বাংলা

গ্রামের সাধারণ মানুষ একসময় বসবাস করত কুঁড়েঘরে, আর সেই ঘরে ছাদের কোনায় বসবাস করে চড়ুই পাখি। সময়ের বিবর্তনে আবহাওয়া-জলবায়ু পরিবেশের যেমন পরিবর্তন ঘটেছে, ঠিক তেমনি পাখিদের বসবাসের ক্ষেত্র পরিবর্তন লক্ষ করা যাচ্ছে। টিয়া, ময়না, কোকিলের মতো চড়ুই পাখি, নগরের মানুষের কাছাকাছি থাকতে শুরু করেছে।

রংপুর নগরীর মডার্ন মোড় এলাকায় একটি কৃষ্ণচূড়া গাছে চড়ুই পাখি অভয়াশ্রম গড়ে তুলেছে। সেখানে নির্ভয়ে বসবাস করছে কয়েক হাজার চড়ুই পাখি। এমনকি পাখিগুলোর জন্য এখানে পাহারার ব্যবস্থা আছে। রংপুর শহর থেকে মডার্ন মোড়ের দূরত্ব প্রায় ৫ কিলোমিটার। সেখানে হাত বাড়ালেই ছোঁয়া যায় কৃষ্ণচূড়া গাছের ডালে বসে থাকা পাখিগুলোকে। কিন্তু মানুষের ধরা-ছোঁয়া নিষেধ। ভুল করে কেউ যদি ধরেও পেলেন, শুনতে হয় গালমন্দ। কারণ, এই গাছেই দুই দশক ধরে হাজার হাজার চড়ুই পাখি বসবাস করছে। স্থানীয় ব্যক্তিরা নিজ দায়িত্বে পাখিগুলোকে নিরাপত্তা নিশ্চিত করে বসবাস করতে সহায়তা করছেন।

গতকাল সোমবার মডার্ন মোড় এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, গোধূলি নামতেই ঝাঁকে ঝাঁকে ছুটে আসে কৃষ্ণচূড়া গাছের দিকে পাখির দল। দেখে মনে হয়, কৃষ্ণচূড়া গাছটি যেন তাদের অভয়াশ্রম। এরা এক ডাল থেকে আরেক ডালে ছোটাছুটি শুরু করে। কিচিরমিচির ডাকে মাতিয়ে তোলে পুরো এলাকা। ভোর হতেই খাবারের সন্ধানে বেরিয়ে পড়ে ডেরা ছেড়ে। সন্ধ্যা হলেই সেখানে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে যান পথচারীরা। যারা নতুন আসেন এই এলাকায়, তারা দীর্ঘ সময় ধরে পাখির উড়াউড়ি দেখেন, মোবাইলে ভিডিও ধারণ করেন, তোলেন ছবিও।

স্থানীয় ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ২০ বছর ধরে চড়ুই পাখিগুলো এখানে বসবাস করছে। প্রথমদিকে ৪০০ থেকে ৫০০ পাখি বসবাস করলেও এখন সেখানে তাদের সংখ্যা আনুমানিক ১৫ হাজারের মতো। এদের কেউ যাতে বিরক্ত করতে না পারে, সে জন্য স্থানীয় লোকজন সবাইকে সতর্ক করেন।

মডার্ন মোড়ে কথা হয় পাখিপ্রেমী বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী সাদিকুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আগে গ্রামে কুঁড়েঘরে দেখা মিলত চড়ুই পাখির। এখন তেমন কুঁড়েঘর নেই, তাই তেমন দেখাও মেলে না। কৃষ্ণচূড়া গাছে পাখিগুলোকে দেখে খুব ভালো লাগল। তাই এখানে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে দেখছি।’

কৃষ্ণচূড়া গাছের নিচে ফল ব্যবসায়ী সবুজ মিয়া বলেন, ‘প্রতিদিন পড়ন্ত বিকেলে পাখিরা এখানে এসে আশ্রয় নেয়। সন্ধ্যায় পুরো এলাকা পাখির কলকাকলিতে মুখর হয়ে ওঠে। নির্বিঘ্নে রাত কাটায় আর ভোর হলেই উড়ে যায় এরা। দিনের শেষে আবার নীড়ে ফেরে।’

রংপুর জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডাক্তার এনামুল হক বলেন, ‘গাছপালা, পশুপাখি প্রকৃতির ভারসাম্য ও বৈচিত্র্য সৃষ্টি করে। চড়ুই পাখিরা দলবদ্ধভাবে বসবাস করতে ভালোবাসে। তাই এরা একসঙ্গে থাকে। মডার্ন মোড়ে কৃষ্ণচূড়ার একটি গাছে হাজারো চড়ুই পাখি বসবাস করছে, এটি দারুণ ভালো লাগার বিষয়। এদেরকে আমাদের সংরক্ষণ করতে হবে।