বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিবিজড়িত ঐতিহ্যবাহী রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ বাজার রেলওয়ে স্টেশন এখন পরিত্যক্ত। বঙ্গবন্ধুসহ বহু জাতীয় নেতা যাতায়াত করতেন এই রুট দিয়ে। লোকবল ও ট্রেনসংকটে ঐতিহ্যবাহী এই রেলস্টেশনের আজ বেহাল দশা। গোয়ালন্দ বাজার রেলওয়ে স্টেশনের মাস্টার পূর্ববর্তী পাঁচুরিয়া রেলওয়ের স্টেশনে প্রেষণে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি শুধু পরিত্যক্ত স্টেশনটিতে থাকা সরকারি ট্রেনের টিকিটগুলো দেখভাল করেন। এ ছাড়া রেলওয়ের কোনো কার্যক্রম নেই এখানে।
স্টেশনের ঘরটি তালাবদ্ধ জরাজীর্ণ অবস্থায় পড়ে আছে। দক্ষিণাঞ্চলের এ রেলপথে চলাচল করে দুটি আন্তঃনগর এক্সপ্রেস ট্রেন ও চারটি মেইল ট্রেন, আন্তঃনগর এক্সপ্রেস দুটি ও মেইল ট্রেন দুটি প্রত্যাহার করে নিয়েছে রেল কর্তৃপক্ষ। এতে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে এ রেলপথে যাতায়াতকারী যাত্রী ও ব্যবসায়ীদের। পুনরায় আন্তঃনগর এক্সপ্রেস ট্রেনসহ মেইল ট্রেন চালু করার দাবি স্থানীয়দের।
ব্রিটিশ আমল থেকে ভারতবর্ষের রেল যোগাযোগের গুরুত্বপূর্ণ রুট হিসেবে পরিচিত গোয়ালন্দ ঘাট রেলওয়ে স্টেশন। তৎকালীন ভারতবর্ষের রাজধানী মুর্শিদাবাদ, কলকাতার সঙ্গে ঢাকায় যাতায়াতের জন্য সদরঘাট, নারায়ণগঞ্জ, চাঁদপুর নৌপথ হয়ে গোয়ালন্দ ঘাট রেলস্টেশন ছিল যাতায়াতের জন্য অন্যতম। গোয়ালন্দ থেকে সরাসরি ট্রেন চলত পশ্চিমবঙ্গের শিয়ালদহ স্টেশনে। পদ্মার রূপালি ইলিশ মাছসহ বহু পণ্য রপ্তানি হতো এ রেলপথ দিয়ে। দেশ ভাগের পর এই যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়।
১৯৮৪ সালে রেলওয়ের পরিধি বাড়িয়ে গোয়ালন্দ বাজার থেকে গোয়ালন্দঘাট পর্যন্ত ৫ কিলোমিটার নতুন করে বৃদ্ধি করা হয়, এতে দক্ষিণ ও উত্তরাঞ্চলের সঙ্গে রেল যোগাযোগের অন্যতম রুট হয় গোয়ালন্দ ঘাট রেলস্টেশন। খুলনা থেকে নকশীকাঁথা মেইল ও আন্তঃনগর তিতুমীর এক্সপ্রেস, লালন শাহ এক্সপ্রেস, রাজশাহী থেকে আন্তঃনগর যমুনা এক্সপ্রেস, সৈয়দপুর থেকে পণ্যবাহী শিলিগুড়ি চলাচল করত এই রেলপথে।
বর্তমানে এ রুটে কোনো আন্তঃনগর এক্সপ্রেস ট্রেন নেই। প্রথমে খুলনগামী আন্তঃনগর তিতুমীর ও ২০২০ সালে রাজশাহীগামী যমুনা এক্সপ্রেস ট্রেন প্রত্যাহার করে নিয়েছে রেল কর্তৃপক্ষ। পণ্যবাহী শিলিগুড়ি লোকাল ট্রেনটিও বন্ধ রয়েছে দীর্ঘদিন। খুলনা ও রাজশাহীগামী যাত্রীদের সরাসরি যাতায়াতের ট্রেন বন্ধ থাকায় এই রেলপথে যাতায়াতকারী যাত্রীদের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।
গোয়ালন্দ উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা আ. সামাদ মোল্লা, বীর মুক্তিযোদ্ধা আ. রব মিয়া, জেলা আওয়ামী লীগের নেতা নির্মল কুমার চক্রবর্তী জানান, গোয়ালন্দ বাজার রেলওয়ে স্টেশনটি বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিবিজড়িত। বঙ্গবন্ধু এই রেলওয়ে স্টেশনে দাঁড়িয়ে বক্তব্য দিয়েছেন। এমনকি ভারতবর্ষের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মহাত্মা গান্ধী কুমিল্লার দাঙ্গার সময় এ গোয়ালন্দ ঘাট দিয়ে যাতায়াত করেছেন। দুঃখের বিষয়, রেলওয়ে ষ্টেশনটি এখন পরিত্যক্ত। গোয়ালন্দ ঘাট থেকে আন্তঃনগর এক্সপ্রেস ট্রেনও প্রত্যাহার করে নেয়া হয়। আন্তঃনগর এক্সপ্রেস ট্রেন পুনরায় চালু করার দাবি জানান তারা।
ব্যাংক কর্মকর্তা সাদেকুল্লা মোবারক বলেন, গোয়ালন্দ ঘাট থেকে আগে সরাসরি রাজশাহী যাতায়াত করতে পারতাম। রাজশাহীগামী ট্রেনটি প্রত্যাহার করে নেয়ায় অনেক ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।
রেলওয়ে স্টেশনের ব্যবসায়ীরা জানান, খুলনা ও রাজশাহীগামী ট্রেন প্রত্যাহার করে নেয়ার পর ওই রোডে যাতায়াতকারী যাত্রী না থাকায় ব্যবসায়ীরা লোকসানের মুখে পড়েছেন এবং পণ্যবাহী ট্রেন না থাকায় ব্যবসায়ীদের সড়কপথে মালামাল আনতে কয়েক গুণ খরচ বেশি হচ্ছে।
গোয়ালন্দ বাজার রেলওয়ে স্টেশনের সহকারী ষ্টেশন মাস্টার বর্তমান পাঁচুরিয়া রেলওয়ে স্টেশনে প্রেষণে দায়িত্ব পালন করছেন সুজাত শেখ। তিনি বলেন, ‘গোয়ালন্দ বাজার রেলওয়ে স্টেশনটি জনবল সংকটের কারণে কর্তৃপক্ষ বন্ধ করে রেখেছে। এখানে রেলওয়ের কোনো কার্যক্রম নেই। শুধু স্টেশনটিতে কিছু সরকারি টিকিট থাকায় ওগুলো দেখার জন্য আমি দায়িত্ব পালন করছি।’
দৌলতদিয়া রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার সিএম আক্তার হায়দার বলেন, খুলনাগামী তিতুমীর এক্সপ্রেস ও রাজশাহীগামী যমুনা এক্সপ্রেস ট্রেনটি এখান থেকে প্রত্যাহার করে নিয়েছে। গোয়ালন্দ ঘাট থেকে কোনো আন্তঃনগর এক্সপ্রেস ট্রেন নেই। সৈয়দপুর থেকে পণ্যবাহী শিলিগুড়ি ট্রেনটি বিট্রিশ আমল থেকে এ রেলপথে চলাচল করত। এখন এ রেলপথ পথে নকশীকাঁথা মেইল ও একটি লোকাল ট্রেন যাতায়াত করছে।
১৯৮/সি, তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮
©দৈনিক বাংলা