শ্রেণিকক্ষে পড়া নেয়ার সময় আস্তে শুনতে পাওয়ায় দুই শিক্ষার্থীকে মারধরের অভিযোগ উঠেছে এক সহকারী শিক্ষকের বিরুদ্ধে। মারধরের শিকার দুই শিক্ষার্থীকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এদের মধ্যে একজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। অভিযুক্ত শিক্ষক অবশ্য বলছেন, শ্রেণিকক্ষে হইচই করার জন্য তিনি ‘হালকা শাসন’ করেছেন। বুধবার (১২ অক্টোবর) নওগাঁ সদর উপজেলার চকপ্রাণ উচ্চ বিদ্যালয়ে এ ঘটনা ঘটেছে। পরে সন্ধ্যায় ভুক্তভোগী এক শিশুর পরিবার ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ করেছে।
নওগাঁ সদর মডেল থানার ওসি (অপারেশন) আব্দুল গফুর বলেন, ‘চকপ্রাণ উচ্চ বিদ্যালয়ের দুই শিশু শিক্ষার্থীকে মারধরের বিষয়ে থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দেয়া হয়েছে। আমরা বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেব।’
অভিযোগে বলা হয়েছে, নওগাঁ সদর উপজেলার চকপ্রাণ উচ্চবিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক রফিকুল ইসলাম বুধবার দুপুর আড়াইটার দিকে শ্রেণিকক্ষে পাঠদান করছিলেন। এ সময় ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী মোছা. রিসিতা আক্তার (১৩) ও মোছা. মারিয়া আক্তার (১৩) আস্তে পড়া দেওয়ার কারণে শিক্ষক রফিকুল ইসলাম উত্তেজিত হয়ে তাদের অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন এবং মারধর করেন। একপর্যায়ে দুই শিক্ষার্থী অজ্ঞান হয়ে পড়লে প্রধান শিক্ষকসহ কয়েকজন তাদের উদ্ধার করে বিকেল ৩টার দিকে নওগাঁ সদর হাসপাতালে ভর্তি করেন। দুজনের মধ্যে রিসিতার অবস্থা গুরুতর হওয়ায় তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য রাত ৮টার দিকে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
রিসিতার মামা জালাল হোসেন বলেন, আমার দুলাভাই রেজাউল ইসলাম ও ছোট বোন শিল্পী বানু ঢাকায় পোশাক কারখানায় কাজ করেন। শহরের লাটাপাড়া মহল্লায় আমাদের বাসায় থেকেই ভাগনি রিসিতা পড়ালেখা করে। সে ও তার বান্ধবী মারিয়া আস্তে পড়া দেয়ায় শিক্ষক রফিকুল ইসলামের শুনতে সমস্যা হয়। সে কারণে তাদের মারধর করেছেন। এটি একজন শিক্ষকের গ্রহণযোগ্য আচরণ হতে পারে না। বোন, দুলাভাই ও মারিয়ার মা-বাবার সঙ্গে কথা বলে থানায় অভিযোগ করেছি।
রিসিতার মা শিল্পী বানু মোবাইল ফোনে বলেন, ‘আমার মেয়েটাকে এভাবে মারল কেন? আমি শিক্ষক রফিকুল ইসলামের শাস্তি চাই। আমরা বগুড়া হাসপাতালে যাওয়ার জন্য রওনা দিয়েছি।’
শিক্ষার্থী মারিয়ার বাবা শহরের আরজী-নওগাঁ মহল্লার বাসিন্দা জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘আমার মেয়ে হাসপাতালে ভর্তি আছে। সে খুব ভয় পেয়ে আছে। এ কেমন শিক্ষক যে নিজের শিক্ষার্থীদের প্রতি কোনো মায়া নেই! আমরা ওই শিক্ষকের অপসারণ দাবি করছি।’
জানতে চাইলে অভিযুক্ত শিক্ষক রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আস্তে পড়া দেয়ার জন্য কাউকে মারধর করা হয়নি। সাধারণ বিজ্ঞান বইয়ের পড়া নেয়ার সময় কিছুক্ষণের জন্য শ্রেণিকক্ষের বাইরে গিয়েছিলাম। ফিরে এসে দেখি সবাই হইচই করছে। এ কারণে চার শিক্ষার্থীকে শাসন হিসেবে হালকা করে চড়-থাপ্পড় দিয়েছি। কিছুক্ষণ পর তারা অজ্ঞান হয়ে যায়। সঙ্গে সঙ্গে তাদের হাসপাতালে ভর্তি করি।’ গায়ে হাত তোলার নিয়ম না থাকলেও কেন তিনি সেই নিয়ম অমান্য করেছেন— এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘বাচ্চাদের একটু-আধটু শাসন তো করতেই হয়।’
স্কুলের প্রধান শিক্ষক আব্দুস সামাদ বলেন, ‘ঘটনার সময় আমি অফিস কক্ষে দাপ্তরিক কাজে ব্যস্ত ছিলাম। দুপুর আড়াইটার দিকে জানতে পারি রিসিতা ও মারিয়া অজ্ঞান হয়ে গেছে। আমরা তাদের উদ্ধার হাসপাতালে ভর্তি করেছি। শিশুরা সম্ভবত শ্রেণিকক্ষে হইচই করছিল। এ কারণে হয়তো শিক্ষক রফিকুল তাদের শাসন করেছেন। তারপরও আমরা সার্বিক বিষয়ে তদন্ত করব।’
নওগাঁ সদর হাসপাতালের চিকিৎসক ফারহানা শারমিন বলেন, ‘দুই শিশু শিক্ষার্থী খুবই ভয় পেয়েছে। দুজনের মধ্যে মারিয়াকে সদর হাসপাতালে ভর্তি রাখা হয়েছে। রিসিতাকে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়েছে।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে নওগাঁ সদর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মোহাম্মদ ওয়াসিউর রহমান বলেন, ‘দুই শিক্ষার্থীকে মারধরের বিষয়টি জানার পর স্কুলের প্রধান শিক্ষককে নির্দেশ দিয়েছি যেন রফিকুল ইসলাম কিছুদিন পাঠদান থেকে বিরত থাকেন এবং স্কুলে না যান। আমরা বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।’
১৯৮/সি, তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮
©দৈনিক বাংলা