বনজঙ্গল কেটে সাফ, মহাসাগরগুলোয় দূষণ প্রভৃতি কারণে বিশ্বজুড়ে বন্যপ্রাণীর সংখ্যা ১৯৭০ সাল থেকে এ পর্যন্ত কমপক্ষে দুই-তৃতীয়াংশ কমে গেছে। বিশ্ব বন্যপ্রাণী তহবিল (ডব্লিউডব্লিউএফ) ও জুওলোজিক্যাল সোসাইটি অব লন্ডনের (জেডএসএল) এক মূল্যায়ন প্রতিবেদনে বৃহস্পতিবার (১৩ অক্টোবর) এ তথ্য জানানো হয়েছে। খবর দ্য গার্ডিয়ানের।
জেডএসএলের সংরক্ষণ ও নীতিনির্ধারণী শাখার পরিচালক অ্যান্ড্রু টেরি বলেন, ‘বন্যপ্রাণীর সংখ্যায় এই গুরুতর হ্রাস থেকে আমাদের কাছে এটা স্পষ্ট হয় যে প্রকৃতির বাস্তব অবস্থা স্পষ্ট হচ্ছে আর প্রাণীজগৎ শূন্য হয়ে যাচ্ছে।’
ডব্লিউডব্লিউএফের ওই প্রতিবেদনে জেডএসএলের ২০১৮ সালের তথ্য-উপাত্ত ব্যবহার করা হয়েছে। এতে অন্তত ৫ হাজার প্রজাতির ৩২ হাজার বন্যপ্রাণীর উল্লেখ রয়েছে। গবেষকরা দেখতে পান, বুনো প্রাণীর মোট সংখ্যা গড়ে ৬৯ শতাংশ কমেছে। এই ক্ষতির সবচেয়ে বড় কারণগুলো হচ্ছে অরণ্যের বিনাশ, মানুষের শোষণ, দূষণ এবং জলবায়ু পরিবর্তন।
লাতিন আমেরিকা ও ক্যারিবীয় অঞ্চলের বন্যপ্রাণীরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সেখানে ৫ দশকে ৯৪ শতাংশ বুনো প্রাণী কমেছে। ব্রাজিলের আমাজন অঞ্চলের নদীগুলোয় গোলাপি ডলফিন ১৯৯৪ থেকে ২০১৬ সালের মধ্যে খুব দ্রুতগতিতে কমেছে যার হার ৬৫ শতাংশ।
অ্যান্ড্রু টেরি বলেন, ‘২০২০ সালে ডব্লিউডব্লিউএফ যে মূল্যায়ন করেছিল তার সঙ্গে গতকাল প্রকাশিত মূল্যায়ন প্রতিবেদনের মিল রয়েছে। ওই প্রতিবেদনে বুনো প্রাণীর সংখ্যা বছরে প্রায় আড়াই শতাংশ হ্রাসের কথা বলা হয়েছিল।
ডব্লিউডব্লিউএফের যুক্তরাজ্য শাখার বিজ্ঞান বিভাগের পরিচালক মার্ক রাইট বলেন, প্রকৃতি আগেও বড় সংকটের মধ্যে ছিল এবং এখনো আছে। এ যুদ্ধে নিশ্চিত পরাজয় হচ্ছে।’
অবশ্য ওই প্রতিবেদনে কিছু আশার ইঙ্গিতও আছে। যেমন— শিকারিদের কারণে ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক অব কঙ্গোর কাহুজিবিয়েগা ন্যাশনাল পার্কের পূর্বাঞ্চলীয় নিম্নভূমির গরিলার সংখ্যা ১৯৯৪ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে ৮০ শতাংশ কমে যায়। আবার একই দেশের ভিরুঙ্গা ন্যাশনাল পার্কের পার্বত্য গরিলার সংখ্যা ২০১০ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে অন্তত ৬০০টি বেড়েছে।
বাস্তবতা হলো— এখনো বিপুলসংখ্যায় বন্যপ্রাণী কমে যাচ্ছে। আর সেটা বন্ধ করতে প্রকৃতির জন্য সহায়তা বৃদ্ধির তাগিদ বাড়ছে। আসছে ডিসেম্বরে সারা বিশ্বের প্রতিনিধিরা কানাডার মন্ট্রিয়াল শহরে জড়ো হয়ে বিশ্বের বন্যপ্রাণী ও উদ্ভিদ প্রজাতিগুলোর সুরক্ষায় একটি নতুন বৈশ্বিক কৌশল প্রণয়নের বন্দোবস্ত করবেন। সে ক্ষেত্রে বৈশ্বিক সংরক্ষণ প্রচেষ্টায় আর্থিক জোগান বৃদ্ধির বিষয়টি একটি গুরুত্বপূর্ণ আহ্বান হবে। ডব্লিউডব্লিউএফের আফ্রিকা অঞ্চলের পরিচালক অ্যালিস রুহওয়েজা বলেন, ‘আমাদের প্রকৃতি সুরক্ষার জন্য আমরা সমৃদ্ধ দেশগুলোর কাছে আর্থিক সহায়তা চেয়ে আহ্বান জানাচ্ছি।’
১৯৮/সি, তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮
©দৈনিক বাংলা