ঢাকার বাইরে প্রধানমন্ত্রীর একমাত্র বাসভবন দিঘাপতিয়া রাজবাড়ি বা উত্তরা গণভবন। এই রাজবাড়ি বরাবরই দেশি-বিদেশি পর্যটকদের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু। ১৭৩৪ সালে নির্মিত স্থাপত্যকলার অন্যতম নিদর্শন উত্তরা গণভবন ঢেলে সাজানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন নাটোর জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ।
জেলা প্রশাসক জানান, এখন এই রাজবাড়ির ৮০ ভাগ স্থান দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত। বঙ্গবন্ধুর নিজ হাতে লাগানো হৈমন্তী গাছ রক্ষা, কবি ইন্দুপ্রভা দেবীর চিঠি ও কবিতাসহ রাজরাজড়াদের আমলের বিভিন্ন জিনিসপত্র দিয়ে গড়ে তোলা হয়েছে সংগ্রহশালা, যা এখানে আসা দর্শনার্থীরা দেখতে পারেন।
এ ছাড়া মিনি চিড়িয়াখানা, বৃক্ষরোপণ ও পাখিদের জন্য অভয়াশ্রম করে গণভবনকে আরও আকর্ষণীয় করে তোলা হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক।
নাটোর শহর থেকে তিন কিলোমিটার উত্তরে উত্তরা গণভবন। সুদৃশ্য কারুকার্যখচিত প্রধান ফটক, রাজ প্যালেস, ইতালিয়ান গার্ডেন এই রাজপ্রাসাদের অন্যতম আকর্ষণ। স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দিঘাপতিয়া রাজবাড়িকে ‘উত্তরা গণভবন’ হিসেবে ঘোষণা করেন। এরপর থেকেই নিরাপত্তার কারণে গণভবনে জনসাধারণের প্রবেশ নিষেধ ছিল।
তবে স্থানীয়দের দাবিতে মন্ত্রিপরিষদ সচিবালয়ের সিদ্ধান্তে ২০১২ সালের ২৫ অক্টোবর গণভবন সাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হয়। উত্তরা গণভবনের হিসাব সহকারী নুর মোহাম্মদ জানিয়েছেন, বর্তমানে জনপ্রতি ২০ টাকা প্রবেশ মূল্যের বিনিময়ে সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত গণভবন দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত রয়েছে। তবে ইতালিয়ান গার্ডেন এবং ভবনের ভেতরের অংশ দেখতে আগেভাগেই জেলা প্রশাসনের অনুমতি নিতে হয়।
রাজবাড়ির দৃষ্টিনন্দন মূল ফটকের ওপরে রয়েছে ইতালির ফ্লোরেন্স থেকে আনা বিশাল ঘড়ি। এখনো সঠিক সময় দিচ্ছে ঘড়িটি। এর ঘণ্টাধ্বনিও দূর থেকে শোনা যায়। প্রতি বুধবার দায়িত্বপ্রাপ্ত একজন ব্যক্তি চাবি ঘোরান।
রাজবাড়ির চারদিকে রয়েছে সুউচ্চ প্রাচীর ও সুগভীর পরিখা। রাজবাড়ির ভবনগুলোর মধ্যে রয়েছে প্রধান প্রাসাদ ভবন, কুমার প্যালেস, কাচারি ভবন, তিনটি কর্তারানী বাড়ি, রান্নাঘর, মোটর গ্যারেজসহ বিভিন্ন স্থাপনা।
প্যালেসের দক্ষিণে রয়েছে ইতালিয়ান গার্ডেন। সেখানে রয়েছে বিভিন্ন মূল্যবান মার্বেল পাথরে কারুকাজ করা ভাস্কর্য আর দেশি-বিদেশি নানা জাতের শোভাবর্ধক গাছ। ভাস্কর্যগুলো পাথরখণ্ড কেটে তৈরি।
প্রধান ভবনের সামনে রয়েছে ১৮৫৪ সালে ব্রিটিশদের নির্মিত দুটি কামান। এ ছাড়া রাজবাড়িতে রয়েছে আরও চারটি কামান। মূল রাজপ্রাসাদে প্রবেশের পথে সিঁড়ির দুপাশে দুটি কালো কৃষ্ণমূর্তি ছিল। একটি ভেঙে যায়। অন্যটি বর্তমানে সংগ্রহশালায় রয়েছে।
নাটোর সচেতন নাগরিক কমিটির সভাপতি রণেন রায় দৈনিক বাংলাকে জানান, দিঘাপতিয়া রাজবাড়ি বঙ্গবন্ধু অনেক পছন্দ করতেন। বঙ্গবন্ধু এখানে দুর্লভ প্রজাতির একটি হৈমন্তী গাছও রোপণ করেন, যা তার স্মৃতিকে ধরে রেখেছে।
১৯৮/সি, তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮
©দৈনিক বাংলা