লালমনিরহাটে পরকীয়ার সম্পর্কের অবসান ঘটাতে এক কবিরাজ নারীকে হত্যায় স্বামী ও স্ত্রীকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। পাশাপাশি প্রত্যেককে ১০ হাজার টাকা করে জরিমানা, অনাদায়ে আরও এক বছর করে সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
সোমবার লালমনিরহাট জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. মিজানুর রহমান এ রায় দেন।
দণ্ডিত দুজন হলেন লালমনিরহাট সদর উপজেলার খোঁচাবাড়ি এলাকার মৃত মহির উদ্দিনের ছেলে দবিয়ার রহমান (৪০) ও তার স্ত্রী শাহিনা বেগম (৩৩)।
মামলার নথি থেকে জানা যায়, ২০২০ সালের ৬ নভেম্বর হত্যাকাণ্ডের শিকার হন শাহিনা বেওয়া নামে ওই তরুণী। তিনি ছিলেন আদিতমারী উপজেলার খাতাপাড়া শিল্পকুঠি এলাকার মৃত ভ্যানচালক তৈয়ব আলীর স্ত্রী এবং একই উপজেলার পূর্ব ভেলাবাড়ি গ্রামের একরামুল হকের বোন।
তিনি স্বামীর মৃত্যুর পর ছোট ভাই একরামুল হকের বাড়ির সঙ্গে বাড়ি বানিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করে আসছিলেন। অন্যের বাড়িতে ঝিয়ের কাজ ও কবিরাজি করে এক ছেলে ও দুই মেয়ের বিয়ে দিয়েছিলেন শাহিনা বেওয়া।
নথি থেকে আরও জানা যায়, কবিরাজি করতে গিয়ে অভিযুক্ত দবিয়ার রহমানের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে শাহিনা বেওয়ার। এক পর্যায়ে শাহিনা বেওয়া বিয়ের জন্য চাপ দিলে ক্ষিপ্ত হন দবিয়ার। বিষয়টি এলাকায় জানাজানি হলে দবিয়ারের স্ত্রীও ক্ষেপে যান। এরপর স্বামী-স্ত্রী পরামর্শ করে শাহিনা বেওয়াকে ২০২০ সালের ৬ নভেম্বর বাড়িতে ডেকে নেন। পরে তারা কৌশলে ওইদিন রাতে শাহিনা বেওয়াকে সদর উপজেলার খুনিয়াগাছ ইউনিয়নের কালমাটি পাকার মাথা এলাকায় তিস্তা নদীর চরে নিয়ে হাত-পা বেঁধে শ্বাসরোধে হত্যা করে পালিয়ে যান। পরদিন সকালে স্থানীয়রা মরদেহ দেখতে পেয়ে থানায় খবর দিলে পুলিশ শাহিনা বেওয়ার মরদেহ উদ্ধার করে।
ওই দিন অজ্ঞাতনামা কয়েজনকে আসামি করে সদর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন শাহিনা বেওয়ার ছোট ভাই একরামুল হক। পরে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা উপ-পরিদর্শক (এসআই) মশিউর রহমান উন্নত প্রযুক্তির সাহায্যে হত্যার রহস্য উদঘাটন করে অভিযুক্ত দবিয়ার রহমান ও তার স্ত্রী শাহিনা বেগমকে গ্রেপ্তার করেন।
২০২১ সালের ৩১ মার্চ দবিয়ার ও তার স্ত্রী শাহিনার বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন তদন্ত কর্মকর্তা। এ মামলায় ২২ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করেন আদালত। দীর্ঘ শুনানি শেষে অভিযুক্তদের উপস্থিতিতে মামলার রায় ঘোষণা করেন বিচারক।
রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি (পিপি) অ্যাডভোকেট আকমল হোসেন আহমেদ দৈনিক বাংলাকে বলেন, আসামিরা সরাসরি এ হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকায় আদালত রায় ঘোষণা করেছেন। মৃত্যুদণ্ড হওয়ার অপরাধ করলেও আসামিদের নাবালক সন্তান থাকায় বিজ্ঞ আদালত যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন।
১৯৮/সি, তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮
©দৈনিক বাংলা