বিএনপির চিন্তা-চেতনায় দৈন্যতা আছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আওয়ামী লীগ কমিউনিটি ক্লিনিক করেছে। এগুলোতে যারা চিকিৎসা নেবে তারা আওয়ামী লীগকে ভোট দিতে পারে সে আতঙ্কে খালেদা জিয়া ২০০১ পরবর্তী সময় ক্ষমতায় এসে জনস্বার্থের কথা চিন্তা না করে ’৯৬ পরবর্তী সময়ে তার সরকার প্রতিষ্ঠিত কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো বন্ধ করে দিয়েছিল।
তিনি বলেন, এখন সারা দেশে ৫ হাজারের বেশি কমিউনিটি ক্লিনিক প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে এবং সেখান থেকে ৩০ ধরনের ওষুধ বিনামূল্যে দেয়াসহ নানা স্বাস্থ্যসেবা দেয়া হচ্ছে। ভবিষ্যতে এসব কমিউনিটি ক্লিনিক যাতে আর কেউ বন্ধ করতে না পারে সেজন্য ট্রাস্ট ফান্ড করে দেয়া হয়েছে।
সোমবার সকালে গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে পানি সম্পদ মনন্ত্রণালয়ের ৮০টি উন্নয়ন প্রকল্প ও পুনঃখনন করা ৪৩০টি ছোট নদী-খাল-জলাশয়ের উদ্বোধন এবং নতুন অনুমোদিত ২০টি উন্নয়ন প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন অতিনি এসব কথা বলেন। একই অনুষ্ঠান থেকে স্বাস্থ্য ও পরিকার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীন দেশের প্রতিটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ‘কমিউনিটি আই সেন্টার স্থাপন’ কার্যক্রমের চতুর্থ পর্যায়ে ৬৫টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে স্থাপিত ‘কমিউনিটি আই সেন্টার’ এর উদ্বোধন করেন।
প্রধানমন্ত্রী দেশের নদীগুলোকে মানবদেহের সঙ্গে তুলনা করে এগুলোকে বাঁচিয়ে রাখতে পানির প্রবাহ যথাযথভাবে প্রবাহমান রাখতে সংশ্লিষ্ট সবাইকে ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘হার্টে ব্লক তৈরি হলে মানুষ মারা যায়। আমাদের নদী ও খালগুলো মানুষের প্রাণের মতো। এগুলোকে প্রবাহিত রাখতে আমাদের ব্যবস্থা নিতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশ নদীমাতৃক, নদীই আমাদের জীবন। এগুলো ঠিক শরীরের ধ্বমনি-শিরা-উপশিরার মত।’
প্রধানমন্ত্রী উদাহারণ দিয়ে বলেন, ‘হার্টের ধ্বমনি ব্লক হলে রক্ত যেমন সঞ্চালন হতে না পেরে মানুষ মারা যায়। আমাদের দেশের নদী-নালাও আমাদের জীবনের মতোই। তাদের সচল রাখার ব্যবস্থা করতে হবে। নদীর প্রবাহ যেন অব্যাহত থাকে সেদিকে লক্ষ্য রেখেই আমাদের প্রতিটি প্রকল্প গ্রহণ ও শেষ করতে হবে।’
এজন্য বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের ওপর গুরুত্বারোপ করে সরকারপ্রধান বলেন, ‘আমাদের প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে বা উন্নয়নের নাম করে কিন্তু সমস্ত খাল, বিল, নদী-নালা, পুকুর পর্যন্ত ভরাট করে ফেলা হয়। আমি মনে করি এটা অত্যন্ত গর্হিত একটি কাজ। আমাদের দেশে যখনই যে প্রকল্প নেয়া হবে অবশ্যই এই পানি সম্পদকে রক্ষার ব্যবস্থা সেখানে নিতে হবে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘শুধু পাড় বাাঁধিয়েই হবে না। তাহলে তো নদী ভরাট হয়ে যাবে। বাংলাদেশ একটা ব-দ্বীপ, পলিদ্বারা সৃষ্ট। আমরা সরকারে এসেই জাতির পিতার পদাংক অনুসরণ করেই প্রত্যেকটা এলাকায় নদী, খাল, বিল, পুকুর, জলাধার, হাওড়, বাওড় যা কিছু আছে সেগুলোতে যেন পানির প্রবাহ সচল থাকে সঙ্গে খালগুলোর সঙ্গে নদীর সংযোগ খনন ও পুনঃখননের উদ্যোগ গ্রহণ করি। যখনই আমরা সরকারে এসেছি নদী মাতৃক এই দেশে নদীর সংযোগগুলো সচল করারও উদ্যোগ নেই।’
শেখ হাসিনা বলেন, তার সরকার ২০১৮ সালে বাংলাদেশ ব-দ্বীপ উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রণয়ন করে, যা পরবর্তীতে ২১০০ সাল পর্যন্ত এই বদ্বীপকে ধরে রাখা এবং উন্নত করার জন্য ‘ডেল্টাপ্ল্যান-২১০০’ এ রূপান্তর করা হয়।
সরকারপ্রধান বলেন, ‘গত ১৪ বছরের বেশি সময় দেশ পরিচালনায় তার সরকার ৯৯০ কিলোমিটার নদী তীর সংরক্ষণ করেছে। ১ হাজার ৫৪৪ কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে। ১০ হাজার ৫৭১ কিলোমিটার বাঁধ মেরামত করায় ৩১টি জেলাকে নদী ভাঙনের হাত থেকে সুরক্ষা করা সম্ভব হয়েছে। ৫ হাজার ৩০০ কিলোমিটার নদী ড্রেজিং করা হয়েছে। ড্রেজিংকৃত মাটি যত্রতত্র না ফেলে তার সঠিক ব্যবহারের মাধ্যমে ১ হাজার ০৮৬ বর্গ কিলোমিটার ভূমি পুনঃরুদ্ধার করতে পেরেছে, যেটা আমাদের অর্থনৈতিক কাজে ব্যবহার হচ্ছে।’
শেখ হাসিনা বলেন, যখন কোনো প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়া হয় রাস্তা-ঘাট, রেললাইন, স্থাপনা যাই করা হোক সেখানে যেন কোনোভাবেই পানির প্রবাহ বাধাপ্রাপ্ত না হয়। কালভার্ট বা ব্রিজ করে দেয়ার জন্য তার নির্দেশনা রয়েছে। অথবা বন্যার সময় রাস্তা ভেঙে গেলে যে জায়গাটা ভেঙে যাচ্ছে সেখানে আর মাটি ভরাট না করে কালভার্ট বা ব্রিজ করে দেয়ারও নির্দেশনা দেওয়া রয়েছে, যেন পরবর্তীতে বানের পানি সঠিকভাবে নেমে যেতে পারে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার ৪১ সেট ড্রেজার কিনেছে, যা ব্যবহার করে ৫ হাজার ৩৫৫ কিলোমিটার নতুন সেচ খাল খনন ও ১ হাজার ৯৪২ সেচখাল পুনঃখনন করেছে এবং পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় বন্যার আগাম সতর্ক বার্তা মোবাইলে এসএমএসের মাধ্যমে জনগণকে পাঠানোর উদ্যোগ নিয়েছে।
জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সরকার পানি খাতকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়েছে উল্লেখ করে সরকারপ্রধান আরও বলেন, একবার ক্যাপিটাল ড্রেজিংয়ের পর প্রতিবছর মেনটেইনেন্স ড্রেজিংয়ের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তন জনিত অভিঘাত মোকাবিলার জন্য আমাদের যে প্রস্তুতি তার অংশ হিসেবেই এগুলো করা হচ্ছে এবং গৃহহীণদের মধ্যে বিনামূল্যে ঘর বিতরণকালে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় দুর্যোগ সহনীয় ঘর-বাড়ি নির্মাণ করে দেয়া হচ্ছে।’
‘প্রকৃতিকে তার আপন খেয়ালে চলতে দিতে হবে এবং এরই মধ্যে আমাদের সম্পদ রক্ষারও ব্যবস্থা নিতে হবে।’ চলাচলের সময় জলপথে বা নদীতে এমনকি সড়ক-মহাসড়কে বর্জ্য না ফেলার জন্য এবং বর্জ্য ফেলার নির্দিষ্ট স্থানে বর্জ্য ফেলে পরিবেশকে দূষণমুক্ত রাখার জন্যও তিনি সবার প্রতি আহ্বান জানান।
যত্রতত্র যেন শিল্প কারখানা গড়ে না ওঠে সেদিকে নজর দিয়ে সরকার সারা দেশে একশটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলার উদ্যোগ নিয়েছে উল্লেখ করে সরকারপ্রধান আরও বলেন, ‘জিয়া, খালেদা জিয়া বা এরশাদ এরা কেউই এদিকে নজর দেয়নি। কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকারে আসার পরই দূষণ প্রতিরোধে সচেতনতা সৃষ্টির উদ্যোগ নিয়েছে। আপনাদেরও খেয়াল রাখতে হবে কোনোমতেই আমাদের পানি সম্পদ যেন দূষিত না হয়।’
যশোরের শার্শা উপজেলা, পাবনার সাঁথিয়া উপজেলা ও মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলা অনুষ্ঠানে ভাচুয়ালি যুক্ত ছিল। ওই সময় তিনি উপস্থিত স্থানীয়দের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। প্রধানমন্ত্রী গত ১৫ বছরে বাস্তবায়িত উন্নয়ন পরিকল্পনা সমন্বিত ‘জয়যাত্রা’ নামে একটি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করেন।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী জাহিদ মালেক এবং পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক।
১৯৮/সি, তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮
©দৈনিক বাংলা