প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমরা যুদ্ধের বিরুদ্ধে, আমরা শান্তি চাই। কারণ যুদ্ধের ভয়াবহতা আমরা জীবন দিয়ে দেখেছি। ইসরাইল যেভাবে ফিলিস্তিনের ওপর হামলা করে বিশেষ করে হাসপাতালে হামলা করে শিশু, নারী এবং মানুষ হত্যা করেছে আমরা তার নিন্দা জানিয়েছি। আমাদের কথা হচ্ছে, দ্রুত এই যুদ্ধ বন্ধ করতে হবে। আর ফিলিস্তিনবাসী তাদের ভূমি যেন তারা ফেরত পায়। যে জায়গাগুলো দখল হয়ে গেছে সেগুলো তাদের ফেরত দিতে হবে।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বৃহস্পতিবার সকালে রাজধানীর তেজগাঁওস্থ সড়ক ভবনে সারা দেশের ৮টি বিভাগের ৩৯টি জেলায় একযোগে নবনির্মিত দেড় শ সেতু এবং ১৪টি ওভারপাস উদ্বোধনকালে প্রধান অতিথির ভাষণে এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, ফিলিস্তিনের ওপর বারবার হামলা আর সহ্য করা যায় না। আমি দেখি অনেকেই (বিএনপি) চুপ থাকেন। কারণ যারা এ ধরনের ঘটনা ঘটাচ্ছে, তারা যদি আবার নাখোশ হয়। তাই যারা নির্যাতিত তাদের কথা বলার সাহস নাই। আর তারা আন্দোলন করে পদত্যাগের ডাক দেয়। এটাই হচ্ছে সবচেয়ে দুর্ভাগ্যের বিষয়।’
শেখ হাসিনা বলেন, বোমা মেরে মানুষ-শিশু হত্যা করা হল, রক্তাক্ত শিশুদের সেই চেহারা সহ্য করা যায় না। সেজন্য আগামী শুক্রবার আমি সকলকে অনুরোধ করব জুমার পর দেশের প্রতিটি মসজিদে এবং অন্যান্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোতে যেন দোয়া ও প্রার্থনা করা হয়। কেননা শুধু মুসলিম নয়, হতাহতদের মধ্যে অন্য ধর্মবলম্বীরাও রয়েছে। আর শনিবার আমরা শোকদিবস ঘোষণা করেছি, সেদিন আমাদের জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত থাকবে। পাশাপাশি ফিলিস্তিনের যেসব নারী ও শিশুসহ জনগণ এখন কষ্ট পাচ্ছে, তাদের জন্য আমরা ওষুধসহ শুকনো খাবার এবং শিশু ও নারীদেও জন্য কিছু প্রয়োজনীয় পণ্য আমরা পাঠাব।
কারণ আমাদের যেটুকুই সম্পদ তা নিয়ে আমরা সবসময় দুর্গত মানুষের পাশে আছি। যতটুকু পারি সাহায্য আমরা করব। এজন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এবং তার কার্যালয় থেকে ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ প্রদান করেছেন বলেও জানান তিনি।
ওআইসি ভক্ত দেশের রাষ্ট্রদূত এবং চার্জ দ্যা অ্যাফেয়ার্সের সঙ্গে গতকালও বৈঠক করেছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা সকলে এক হয়ে ফিলিস্তিনের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য তাদের পাশে আছি। এভাবে তাদের ওপর বার বার আঘাত হানা এটা কখনো মেনে নেয়া যায় না, আমরা মানতে পারি না।
যুদ্ধ ও অস্ত্র প্রতিযোগিতা বন্ধ করে সে অর্থ বিশ্বের শিশুদের কল্যাণে ব্যয় করার আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করে তিনি বলেন, এই অস্ত্র প্রতিযোগিতা এবং যুদ্ধ বন্ধ করে যে টাকা অস্ত্র বানানোর এবং ধ্বংসাত্মক কাজে ব্যয় হয় তা যদি বিশ্বের শিশুদের শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের জন্য ব্যয় করা হয়, তাহলে সব শিশুই উন্নত জীবন পেতে পারে, সেটাই আমাদের দাবি, আমি সবসময় একথা বলে আসছি।
আজকে দেড় শ সেতু এবং এরআগে গত বছরের ৭ নভেম্বর ও ২১ ডিসেম্বর সারা দেশে ১০০ সেতু ও একশোটি সড়ক-মহাসড়ক উদ্বোধনের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমাদের নিজস্ব অর্থায়নে অনেক সেতু ও সড়ক-মহাসড়ক নির্মাণ করেছি। সেগুলো মানুষের যোগাযোগ ও পণ্য পরিবহনে সুবিধা দেবে।
তিনি সড়ক ভবন চত্বরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের একটি সুদৃশ্য ম্যুরাল ‘তৃতীয় নেত্র’ উদ্বোধন করেন।
তিনি একই সঙ্গে অনুষ্ঠানে ডিটিসিএ ভবন, বিআরটিএ’র স্বয়ংক্রিয় মোটরযান ফিটনেস পরীক্ষা কেন্দ্র এবং বিআরটিসির বাস ডিপো ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র উদ্বোধনসহ ময়মনসিংহ জেলার ব্রম্মপুত্র নদের ওপর কেওয়াটকালি সেতু ও রহমতপুর সেতু নির্মাণের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।
প্রধানমন্ত্রী সড়ক দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত ১৬২ জন বা তাদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ হিসেবে ৭.০৮ কোটি টাকা দিয়ে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ক্ষতিপূরণ কর্মসূচি চালু করেন এই অনুষ্ঠান থেকে।
গত ১৫ বছরে আওয়ামী লীগ সরকারের সড়ক পরিবহন ও সেতু খাতের উন্নয়ন সম্বলিত ‘উন্নয়ন দর্পন’ নামে একটি বইয়ের মোড়কও উন্মোচন করেন তিনি।
সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান এবং সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান রওশন আরা মান্নান বিশেষ অতিথি হিসেবে অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন।
এ ছাড়া সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের (আরএইচডি) সচিব এবিএম আমিন উল্লাহ নূরী এবং এর প্রধান প্রকৌশলী সৈয়দ মঈনুল হাসানও বক্তব্য রাখেন।
ঢাকার মিরপুর বিআরটিএ এবং ময়মনসিংহ সার্কিট হাউস মাঠ থেকে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ ও সাধারণ মানুষ এ কর্মসূচিতে ভার্চুয়ালি যুক্ত ছিলেন। যাদের সঙ্গে পরে মতবিনিময় করেন প্রধানমন্ত্রী।
১৯৮/সি, তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮
©দৈনিক বাংলা