আপডেট : ২৬ অক্টোবর, ২০২৩ ১৩:০০
২ হাজার ৭০০ মরদেহের গোসল করিয়েছেন আব্দুস সালাম
মোংলা (বাগেরহাট) প্রতিনিধি

২ হাজার ৭০০ মরদেহের গোসল করিয়েছেন আব্দুস সালাম

আব্দুস সালাম ব্যাপারী (৫৭)। মোংলা পোর্ট পৌরসভার ১নং ওয়ার্ডের কুমারখালী এলাকার বাসিন্দা। পেশায় বন্দরের একজন সাধারণ জাহাজি শ্রমিক; কিন্তু কোথাও কেউ মারা যাওয়ার খবর পেলেই মুহূর্তের মধ্যেই সেখানে ছুটে যান। কোনো পারিশ্রমিক ছাড়াই স্বেচ্ছায় মৃত ব্যক্তির শেষ বিদায়ের গোসলের দায়িত্ব পালন করেন তিনি। আর এ কাজটি ৩০ বছর ধরে করে আসছেন তিনি। আব্দুস সালাম ধর্মীয় রীতিনীতি মেনে পরিশুদ্ধভাবে গোসল দিয়ে দাফনের জন্য প্রস্তুত করেন মরদেহ। দীর্ঘদিন ধরে নিজ হাতে ২ হাজার ৭০০ মৃত মানুষের গোসল করিয়েছেন তিনি। জীবনের শেষদিন পর্যন্ত মরদেহের গোসল করিয়ে যেতে চান বলে জানিয়েছেন তিনি।

আব্দুস সালাম ব্যাপারী বলেন, ‘২৭ বছর বয়স থেকে তার শ্বশুর মোংলা বন্দর পুরোনো কবরস্থানের মুসলিম আধ্যাত্মিক রহস্যবাদী মোতাহার দরবেশের ছোট ভাই মোমিন মৌলভির কাছ থেকে মরদেহের গোসলের নিয়মকানুন শেখেন। তার শ্বশুরের অসংখ্য মরদেহের গোসলে সহযোগিতাও করেছেন তিনি। এরপর ২০১৮ সালের ৩ মে তার শ্বশুর মোমিন মৌলভী মারা গেলে মরদেহ গোসলের কাজটি এককভাবে দায়িত্বের সঙ্গে করে আসছেন তিনি। তবে এ কাজে কারও কাছ থেকে কোনো পারিশ্রমিক নেন না বলেও জানান তিনি। সালাম আরও বলেন, করোনায় আক্রান্তে মৃতদের মরদেহের গোসল করাতেও পিছপা হননি তিনি। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে করিয়েছেন অসংখ্য মৃত মানুষের শেষ বিদায়ের গোসল। মরদেহের গোসল সওয়াবের কাজ। এখানে ভয়ের কিছু নেই। আল্লাহকে রাজিখুশি ও সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকেই দীর্ঘ বছর থেকে এ কাজ করে আসছেন বলে জানান তিনি। সালাম ব্যাপারী আরও বলেন, আগে মোংলা শহরে কেউ মারা গেলে তার শ্বশুরকে ডাকতেন। তখন তার সঙ্গে সালামও যেতেন। এভাবেই তিনি সবার মধ্যে পরিচিত হয়ে ওঠেন।

সালামের এমন মানবিক কাজের প্রশংসা করে মোংলার কবরস্থান এলাকার বাসিন্দা ও চট্টগ্রাম বন্দরের ব্যবসায়ী আলহাজ মো. হুমায়ুন কবির, ব্যবসায়ী মশিউর রহমান, সাংবাদিক আহসান হাবিব হাসান বলেন, কোথাও কেউ মারা গেলে সালাম ব্যাপারীকে ডাকা লাগে না। সঙ্গে সঙ্গেই নিঃস্বার্থভাবে ছুটে যান তিনি। মৃত ব্যক্তিকে শেষ গোসল থেকে শুরু করে কবরে রাখা পর্যন্ত সব কাজেই থাকেন তিনি। করোনাকালেও সাহসের সঙ্গে অসংখ্য মানুষকে তিনি গোসল করিয়েছেন, দাফনও দিয়েছেন। এটা অনেকের পক্ষে সম্ভব হয়নি। যুগে যুগে সালামের মতো অনেক মানবিক মানুষ তৈরি হয়েছে; কিন্তু সমাজ তাদের মনে না রাখলেও পরকালে তারা বড় পুরস্কার পাবেন। এমন মানবিক কাজে খুশি হয়েই চলতি মাসে সালামকে ওমরাহ হজ পালন করিয়ে এনেছেন ব্যবসায়ী হুমায়ুন কবির। এ নিয়ে সালাম বলেন, মরদেহ গোসলের মতো একটা ভালো কাজ করে আসছিলাম বলেই আল্লাহ হয়তো হুমায়ুন কবিরের উছিলায় ওমরাহর তৌফিক দিয়েছেন।

সালাম ব্যাপারী স্ত্রী, তিন মেয়ে ও মাকে সঙ্গে নিয়ে থাকেন পৌর শহরের কুমারখালী এলাকায়। আয়ের উৎস বলতে বন্দরের শ্রমিকের সামান্য আয়। তবে মহতী এ কাজের জন্য গত দেড় বছর ধরে ৬ হাজার টাকা করে পৌরসভা থেকে ভাতা দিয়ে আসছেন পৌর মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ আব্দুর রহমান। সামান্য এই ভাতায় সংসার কীভাবে চলে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সমাজের অনেক ভালো মানুষ আছেন যারা তাকে চাল, মাছ, ফল ও ওষুধসহ বাজার করে দেন। তা দিয়ে কোনোভাবে চলে যায় তার সংসার। তবে রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে স্থায়ী কোনো ভাতা চালু করলে তার তিনটি মেয়ের ভবিষ্যৎ নিশ্চয়তার জন্য কিছু করে যেতে চান মানবসেবায় ব্রতী স্বার্থহীন এ মানুষটি।