আপডেট : ২৯ অক্টোবর, ২০২৩ ০৯:১৪
স্মার্ট বাংলাদেশ: স্বপ্নের ডানায় চড়ে বাস্তবের দেশে
ড. রাশিদ আসকারী

স্মার্ট বাংলাদেশ: স্বপ্নের ডানায় চড়ে বাস্তবের দেশে

‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ কিংবা ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ এখন আর কেবল চটকদার শব্দ নয়। নয় কোনো অধরা স্বপ্ন। এটি এখন স্বপ্নের ডানায় ভর করে আসা এক স্পর্শযোগ্য, নিরেট বাস্তবতা। আর এই স্বপ্নজাত বাস্তবতার রচয়িতা একজন নারী, যিনি যেমন স্বপ্ন বুনতে জানেন তেমনি জানেন তা ফলাতে। যদি তাঁকে এক কথায় প্রকাশ করতে বলা হয়- যদিও তা অসম্ভব- তবে আমি হয়তো সেই সুপরিচিত প্রবাদ- ‘The hand that rocks the cradle rules the world’, অর্থাৎ ‘যে হাত দোলনা দোলায়, তা বিশ্ব শাসনও করে’- এর আশ্রয় নেব। আক্ষরিক অর্থেই দোলনা দোলানো এক নারী প্রয়োজনে যে দিগ্বিজয়ী হয়ে উঠতে পারেন, শেখ হাসিনার জীবনে তার প্রমাণ মেলে।

তিনি সেই কৃতী মানবী, যিনি আটপৌরে একজন নারী হিসেবে সংসারধর্ম পালন করেছেন, সন্তানদের মানুষ করেছেন, আবার দীর্ঘতম সময় ধরে সর্বাধিক দায় ও দক্ষতার সঙ্গে দেশ পরিচালনা করছেন এবং পরবর্তী প্রজন্মের জন্য একটি বাসযোগ্য পৃথিবী রচনার দায়িত্ব পালন করে চলেছেন, যে পৃথিবীতে বাংলাদেশের পরিচয় হবে একটি স্মার্ট দেশ হিসেবে। আর এই স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে নিরন্তর বিনিয়োগ করে চলেছেন তাঁর মেধা, প্রজ্ঞা, পরিশ্রম, বুদ্ধিমত্তা, সাহস ও সৃজনশীলতা। উইকিলিকসের এক সাম্প্রতিক জরিপে তাঁকে বিশ্বের সবচাইতে দীর্ঘমেয়াদি নারী প্রধানমন্ত্রী এবং বিশ্ব নারী জাগরণের আইকন হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে। বিশ্বখ্যাত মার্কিন বিজনেজ ম্যাগাজিন ফোরবস বিশ্বের ১০০ জন প্রভাবশালী নারীর তালিকায় শেখ হাসিনাকে রেখেছে। শেখ হাসিনার ব্যক্তিত্ব বস্তুত তীক্ষ্ণ বুদ্ধি, সুগভীর জ্ঞান, চৌকস নেতৃত্ব আর সর্বজনীন মানবিক বোধের যোগফল। একজন সত্যিকারের দূরদর্শী নেত্রী হিসেবে তিনি যে রাজনৈতিক উদ্ভাবনের একটি উত্তরাধিকার প্রতিষ্ঠা করেছেন, যা দেশের অন্য কোনো রাজনীতিবিদের সঙ্গে তুলনীয় নয়। তাঁর এই সফট স্কিলই একদিন বাস্তবতা দেবে স্মার্ট বাংলাদেশের স্বপ্নসৌধের, যেমন দিয়েছে ডিজিটাল বাংলাদেশের।

প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শেখ হাসিনা বাংলাদেশের দীর্ঘতম সময়ের প্রধানমন্ত্রী। প্রথম দফায় ৫ বছর (১৯৯৬-২০০১) এবং দ্বিতীয় দফায় ১৪ বছর, মোট ১৯ বছর সাফল্যের সঙ্গে অতিক্রম করে ২০ বছরের নির্ধারিত মেয়াদ পূর্ণ করতে চলেছেন। তাঁর শাসনকালের এই দীর্ঘতা কেবল সময়ের বিচারেই গুরুত্বপূর্ণ নয়, কীর্তি-কর্মের বিচারেও অগ্রগণ্য। বাংলাদেশের প্রায় সব বৃহত্তম সরকারি সাফল্যকর্ম- বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট, পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, কর্ণফুলী টানেল, পায়রা বন্দর, রূপপুর নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্লান্ট, প্রভৃতি শেখ হাসিনার অবদান। চৌকস নেতৃত্ব, সুনিপুণ পরিকল্পনা এবং কার্যকর বাস্তবায়নের মাধ্যমে তলাবিহীন ঝুড়ির তকমা মিথ্যা প্রমাণ করে, তাঁর উদ্ভাবিত উন্নয়নের রোডম্যাপ ধরে তিনি বাংলাদেশকে টেনে তুলেছেন উন্নয়নশীল দেশের সারণিতে। এলডিসির তালিকা থেকে এনালগ বাংলাদেশকে উন্নীত করেছেন ডিজিটাল বাংলাদেশে। সেই হাসিনা যখন আরও দৌড়াতে চান, আরও কিছুটা এগোতে চান, রবার্ট ফ্রস্টের ভাষায়, ঘুমুবার আগে- কিংবা চিরনিদ্রার আগে- তাঁর স্বপ্নময় ডিজিটাল বাংলাদেশকে উন্নীত করতে চান স্মার্ট বাংলাদেশে- তখন একজন দায়িত্বশীল নাগরিক হিসেবে তা গুরুত্বের সঙ্গে নেয়া আমাদের জাতীয় কর্তব্য হয়ে দাঁড়ায়। আর সে জন্যই ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’-এর একটা ধারণাগত রূপরেখা দাঁড় করানো দরকার। এই প্রবন্ধ তারই এক ক্ষুদ্র প্রয়াস।

ডিসেম্বর আমাদের বাঙালির বিজয়ের মাস। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর আমরা বাঙালি জাতির ভাগ্য-নির্ধারক বিজয় অর্জন করি, যা আমাদের ইতিহাসের গতিপথ পাল্টে দেয়। ১২ ডিসেম্বর ২০০৮, জননেত্রী শেখ হাসিনা ডিজিটাল বাংলাদেশের রূপরেখা নিয়ে ‘ভিশন-২০২১’-এর ধারণা সংবলিত পরিবর্তনের ইশতেহার (Charter for Change) ঘোষণা করেন। ১৪ বছর পর, ‘ভিশন-২০২১’-এর সফল বাস্তবায়নের পর আবার আরেক ডিসেম্বরের (২০২২) ১২ তারিখে তিনি একটি ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গঠনে তাঁর সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি ঘোষণা করেন।

স্মার্ট বাংলাদেশ! এক অদ্ভুত নজরকাড়া শব্দ। ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ দিবস-২০২২’ উদযাপনের অংশ হিসেবে একটি আইসিটি এবং ইনকিউবেশন সেন্টার, একটি হাই-টেক পার্ক এবং একটি ডিজিটাল জাদুঘর উন্মোচন করার সময় তিনি ঘোষণা করেন, ‘আমরা ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি উন্নত দেশে পরিণত করব এবং সেটি হবে স্মার্ট বাংলাদেশ।’ ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ বলতে তিনি যা বোঝাতে চান তা খুব স্পষ্ট। দ্রুত বর্ধনশীল প্রযুক্তির এই স্বর্ণযুগে জীবন ও জগতের সবকিছুকে চলমান প্রযুক্তির সঙ্গে সম্পর্কিত করা উচিত এবং বিদ্যমান প্রযুক্তির সর্বোচ্চ সুবিধাগুলো গ্রহণ করা উচিত।

তবে এটি চলমান ভিশন-২০৪১ থেকে আলাদা কোনো নতুন দৃষ্টিভঙ্গি নয়। বরং একটি উন্নত-প্রযুক্তিনির্ভর উন্নয়ন মন্ত্র, যা ‘ভিশন-২০৪১’ বাস্তবায়নের কর্মকাণ্ডকে নতুন গতি দেবে। স্মার্ট বাংলাদেশের যাত্রা একটি জ্ঞানভিত্তিক অর্থনীতি এবং বহুমাত্রিক উদ্ভাবক সমাজের সূচনা করেছে। ডিজিটাল বাংলাদেশ থেকে স্মার্ট বাংলাদেশে রূপান্তর ভিশন-২০২১ থেকে ভিশন-২০৪১ ডিজিটাল অর্থনীতি থেকে জ্ঞান অর্থনীতিতে। শেখ হাসিনা বাংলাদেশের জনগণের অব্যাহত সমর্থনকে তাঁর পরিকল্পনার সাফল্যের চাবিকাঠি মনে করেন এবং বাংলাদেশের তরুণদের ‘২০৪১ সালের সৈনিক’ হিসেবে উল্লেখ করেন, যা তিনি আশা করেন, নিজেদের স্মার্ট নাগরিক হিসেবে প্রস্তুত করে বিশ্বের দরবারে তুলে ধরবেন এবং দেশকে নিয়ে যাবেন এক গর্বিত অবস্থানে, যাকে নাম দেয়া যায় স্মার্ট বাংলাদেশ।

একজন রাজনীতিবিদ হিসেবে শেখ হাসিনা সামাজিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও পরিবেশ বিষয়ে এক অগ্রসর ভাবনার মানুষ। বর্তমানে আমাদের জীবনে বিপ্লব সৃষ্টিকারী কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, রোবোটিকস, ইন্টারনেট অব থিংস, স্বয়ংক্রিয় যানবাহন, ন্যানো প্রযুক্তি, কোয়ান্টাম কম্পিউটিং এবং থ্রিডি প্রিন্টিংসহ আজকের দিনের উচ্চ প্রযুক্তিনির্ভর অভূতপূর্ব, বিস্ময়কর আবিষ্কারগুলো সম্পর্কে তিনি ভালোভাবে জানেন। তিনি জানেন একটি দেশকে কীভাবে সবচেয়ে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে টিকে থাকার জন্য স্মার্ট হতে হয়। নতুন প্রযুক্তির এই যুগে শুধু প্রযুক্তিগতভাবে উন্নত একটি দেশই টিকে থাকার সুযোগ পায়।

‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ ধারণাটি ‘ডিজিটাল বাংলাদেশের’ উন্নয়নের একটি অগ্রসর পর্যায়। তথ্য ও যোগাযোগ পদ্ধতির হাত ধরে আমাদের জাতীয় উন্নয়নের অগ্রযাত্রার এক কাঙ্ক্ষিত মাত্রা। এর পেছনে কাজ করেছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্ভাবনী নেতৃত্ব, তাঁর পুত্র এবং প্রধানমন্ত্রীর আইসিটি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের নিরন্তর প্রচেষ্টা আর উন্নয়ন-প্রত্যাশী এক দেশ মানুষের প্রবল সদিচ্ছা।

বঙ্গবন্ধু স্বাধীন বাংলাদেশ রচনা করে তাকে মানচিত্রে স্থান দিয়েছিলেন এবং শেখ হাসিনা হয়েছেন এর উন্নয়নের মুকুটহীন সম্রাজ্ঞী, আর তাঁর সুযোগ্য পুত্র জয় একটি তথ্য-প্রযুক্তিনির্ভর সমাজের কল্পনা করছেন, যা গত এক দশক ধরে বিশ্বব্যাপী আলোচনার শীর্ষে রয়েছে। জয় বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো নিয়ে এসেছেন সিলিকন ভ্যালির স্পিরিট- উচ্চ প্রযুক্তি, উদ্ভাবন, উদ্যোগ, পুঁজি ও সোশ্যাল মিডিয়া এবং ডিজিটাল বাংলাদেশের রূপকল্প বাস্তবায়নে তা সফলভাবে প্রয়োগ করেছেন।

‘স্মার্ট বাংলাদেশ’-এর ধারণাটি চারটি স্তম্ভের ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে, যেমন স্মার্ট নাগরিক তৈরি করা, একটি স্মার্ট সরকার নিশ্চিত করা, একটি স্মার্ট অর্থনীতি চালানো এবং একটি স্মার্ট সমাজ তৈরি করা। একজন স্মার্ট নাগরিক মানে আইসিটি জ্ঞানসম্পন্ন নাগরিক এবং উন্নত মানবসম্পদ। স্মার্ট নাগরিক তৈরির লক্ষ্যে বাংলাদেশ শতভাগ ইন্টারনেট সংযোগ নিশ্চিত করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। ৫০ মিলিয়ন সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারকারী এবং ১৬৫ মিলিয়ন মোবাইল গ্রাহক বাংলাদেশকে এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের পঞ্চম বৃহত্তম এবং বিশ্বের নবম বৃহত্তম মোবাইল বাজারে পরিণত করেছে। বাংলাদেশ সাবমেরিন ক্যাবল কোম্পানি লিমিটেড (বিএসসিসিএল) উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন ফাইবার অপটিক সাবমেরিন ক্যাবল ব্যান্ডউইথ এবং সবচেয়ে উন্নত ইন্টারনেট ট্রানজিট সুবিধা প্রদানের মাধ্যমে বাংলাদেশের জনগণকে ‘ইনফরমেশন সুপার হাইওয়েতে সংযুক্ত করতে সক্ষম হয়েছে। এটা ভাবতেই শিহরণ জাগে যে, বাংলাদেশ তৃতীয় সাবমেরিন ক্যাবলের সঙ্গে সংযোগ স্থাপনের দ্বারপ্রান্তে রয়েছে, যার মাধ্যমে আমরা ১২ টেরাবাইট ইন্টারনেট ব্যান্ডউইথ ব্যবহার করতে পারব এবং নিজেদের স্মার্ট নাগরিকে পরিণত করতে পারব।

এ ছাড়া আমরা ই-গভর্নেন্সে একটি উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছি, যা ওয়ার্ল্ড সামিট অন দ্য ইনফরমেশন সোসাইটি (WSIS) কর্তৃক স্বীকৃত হয়েছে। নাগরিকদের ৬০০টিরও বেশি ডিজিটাল পরিষেবা প্রদানের জন্য সারা দেশে প্রায় ৬০০০টি ডিজিটাল সেন্টার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে এবং ডিজিটাল বিভাজনের সমস্যাটি যথাযথভাবে সমাধান করা হচ্ছে। সরকারি সেবা প্রদান, তথ্য বিনিময়, লেনদেন, পূর্বে বিদ্যমান সেবা এবং তথ্য পোর্টালগুলোর একীকরণের জন্য যোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তির কার্যকর প্রয়োগের মাধ্যমে ই-গভর্নেন্সের অনুশীলনকে আরও উন্নত করা যেতে পারে। এটি পুরো প্রশাসনিক প্রক্রিয়াকে সুবিধাজনক, দক্ষ, স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক করে তুলবে এবং এর ফলে একটি স্মার্ট সরকার গঠনে সহায়তা হবে।

একটি দক্ষ ও ডিজিটাল-প্রস্তুত কর্মীবাহিনী এবং প্রযুক্তি-সমর্থিত কৃষি-শিল্প ও ব্যবসা-বাণিজ্যের পরিবেশ তৈরি করে একটি স্মার্ট অর্থনীতি গড়ে তোলার জন্য সরকার বহুমুখী উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। প্রতিবছর পাঁচ লাখেরও বেশি স্নাতক তৈরি হচ্ছে, যার মধ্যে প্রায় পঁচাত্তর হাজার তথ্য প্রযুক্তি-সক্ষম পরিষেবা (আইটিইএস)প্রাপ্ত পেশাদার জনশক্তি হিসেবে প্রশিক্ষিত। অক্সফোর্ড ইন্টারনেট ইনস্টিটিউটের মতে, বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অনলাইন কর্মীর পুল রয়েছে বাংলাদেশে। প্রায় ৬ লাখ ৫০ হাজার ফ্রিল্যান্সার আউটসোর্সিং সেক্টর থেকে প্রায় ৫০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার আয় করছে। এক হাজার পাঁচশত কোটি টাকা বিনিয়োগে সারা দেশে নির্মিত ৩৯টি হাই-টেক বা আইটি পার্কের মধ্যে ৯টিতে ১৬৬টি দেশি-বিদেশি কোম্পানি ব্যবসায়িক কার্যক্রম শুরু করেছে। ২০ হাজারেরও বেশি মানুষ সবেতন কর্মসংস্থানে এবং ৩২ হাজার দক্ষ কর্মী জনশক্তির পুলে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। এ ছাড়া আইসিটি খাতে ২০ লাখ নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে এবং নারীর ক্ষমতায়ন প্রকল্পের মাধ্যমে ১১ হাজার নারী প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছে। দ্রুত বর্ধনশীল আইসিটি শিল্প মানুষকে আর্থিক, টেলিযোগাযোগ এবং স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করছে।

এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে যে, সজীব ওয়াজেদ জয় আমাদের স্মার্ট অর্থনীতি বিনির্মাণে অনেক অবদান রেখে চলেছেন। তার নেতৃত্বে আমাদের আইসিটি শিল্প একটি বর্ধিষ্ণু শিল্পে পরিণত হচ্ছে। গত এক দশকে বাংলাদেশ প্রযুক্তিগত অগ্রগতিতে একটি বড় অগ্রগতি অর্জন করেছে, যার মধ্যে রয়েছে মোবাইল ফোন এবং ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর ক্রমবর্ধমান সংখ্যা, সরকারি পরিষেবাগুলোয় ডিজিটাল সুবিধা প্রদান, মোবাইল ব্যাংকিং এবং আইসিটি রপ্তানি। বর্তমানে বাংলাদেশে ১২০টিরও বেশি কোম্পানি ৩৫টি দেশে প্রায় ১.৩ বিলিয়ন ডলার মূল্যের আইসিটি পণ্য রপ্তানি করছে এবং ২০২৫ সাল নাগাদ এটি ৫ বিলিয়নে উন্নীত হবে বলে আশা করা হচ্ছে। ভবিষ্যতে আরও ৩০০টি স্কুল, ১ লাখ ৯০ হাজার ওয়াই-ফাই সংযোগ, এবং ২৫০০টি ডিজিটাল ল্যাব প্রতিষ্ঠা করার মাধ্যমে শতভাগ অনলাইন পরিষেবা প্রদানের লক্ষ্যে একটি বড় মাপের আইসিটিনির্ভর কর্মসংস্থানের (৩ কোটি) জন্য সরকার বদ্ধপরিকর। আইসিটি শিল্পের টেকসই প্রবৃদ্ধি ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশের একটি স্মার্ট অর্থনীতিতে রূপান্তরের ক্ষেত্রে যথেষ্ট অবদান রাখবে।

স্মার্ট বাংলাদেশের চতুর্থ স্তম্ভ হলো একটি স্মার্ট সোসাইটি গঠন, যার অর্থ তথ্য-সমাজ থেকে জ্ঞান-সমাজে রূপান্তর। ডিজিটাল বাংলাদেশের রূপকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে আমরা একটি তথ্য সমাজের মৌলিক গুণাবলি অর্জন করেছি। এখন সময় এসেছে জীবনব্যাপী শিক্ষণ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে মানব উন্নয়নের জন্য জ্ঞান তৈরি এবং প্রয়োগের নিমিত্তে তথ্য শনাক্তকরণ, উৎপাদন, প্রক্রিয়াকরণ, রূপান্তর, প্রচার এবং ব্যবহার করার স্থায়ী দক্ষতা অর্জনের। সে জন্য দরকার একটি শক্তিশালী সামাজিক দর্শন, যেখানে সাংস্কৃতিক বহুত্ববাদ, সামাজিক ও রাজনৈতিক সংহতি এবং নাগরিক অংশীদারত্বের সুসমন্বয় থাকে। এগুলোই একটি স্মার্ট সমাজের বৈশিষ্ট্য এবং বাংলাদেশ সেদিকেই এগোচ্ছে।

২০৪১ সালের মধ্যে স্মার্ট বাংলাদেশ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সরকার ১৪টি কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। ডিজিটাল বাংলাদেশের রূপকল্প যেমন ডিজিটাল শিক্ষা, ডিজিটাল স্বাস্থ্যসেবা, ডিজিটাল কৃষি ইত্যাদি নিশ্চিত করেছে, তেমনি স্মার্ট বাংলাদেশের অপরিহার্য উপাদান হবে স্মার্ট শিক্ষা, স্মার্ট স্বাস্থ্যসেবা, স্মার্ট কৃষি, স্মার্ট ট্রেড, স্মার্ট পরিবহন এবং স্মার্ট ব্যবস্থাপনা নীতি। ডিজিটাল বাংলাদেশের সফল সমাপ্তির মাধ্যমে প্রযুক্তিভিত্তিক উন্নয়নের ঐতিহ্য ও ধারাবাহিকতা স্মার্ট বাংলাদেশের অগ্রযাত্রাকে পথ দেখাবে, যা বাংলাদেশের উন্নয়নের মাঠে একটি বড় উল্লম্ফন। আমরা যদি চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা এবং আমাদের ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্টের সর্বোত্তম ব্যবহারের মাধ্যমে একটি বর্ধিষ্ণু অর্থনীতি ও অপ্রতিরোধ্য দেশ গড়তে চাই, তাহলে শেখ হাসিনার ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’- উন্নয়ন রেসিপি বাস্তবায়নের কোনো বিকল্প নেই।

লেখক: মুক্তবুদ্ধি লেখক, কলামিস্ট, কথাসাহিত্যিক, অনুবাদক এবং সাবেক উপাচার্য, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া।