আপডেট : ১৬ অক্টোবর, ২০২২ ১৮:৩৮
মহাকাশে আঙুলের ছাপ

মহাকাশে আঙুলের ছাপ

উলফ-রায়ট ১৪০ নক্ষত্র যুগল

সম্প্রতি জেমস ওয়েব টেলিস্কোপের একটা ছবি প্রকাশ করেছে নাসা। ছবিটা একটা যুগল তারার। তার চারপাশে প্রায় ১৭টি বলয়। পুরো জিনিসটা দেখতে অনেকটাই মানুষের আঙুলের ছাপের মতো। পৃথিবী থেকে ৫০০০ আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত এই নক্ষত্র জোড়া উলফ-রায়ট ১৪০ নামে পরিচিত।

এরাই শুধু নয়, এ ধরনের যুগল তারাদের উলফ-রায়ট নক্ষত্র বলে। যখন নক্ষত্র দুটি কাছাকাছি অবস্থান করে তখন তাদের মধ্যকার বায়ুমণ্ডলে অবস্থিত গ্যাস এবং ধূলিকণা সংকুচিত হয়ে বলয় তৈরি করে। উলফ-রায়ট ১৪০-এর ক্ষেত্রে প্রতি আট এই বলয়গুলো দৃশ্যমান হয়। ছবিতে যে বলয় দেখা যাচ্ছে, শুধু আঙুলের ছাপের সঙ্গে নয়, গাছের কাটা কাণ্ডের সঙ্গেও মিল আছে। ছবিটা ভালো করে লক্ষ্য করুন, গাছের গুঁড়ি কাটলে এমন কিছু বলয় থাকে। সেগুলো দেখে বোঝা যায়, গাছের বয়স কত। এই ছবির বলয়গুলো আসলে সময়ের পথকেই নির্দেশ করছে।

এই ভল জেমস ওয়েব টেলিস্কোপের মিড ইনফ্রারেড ইনস্ট্রুমেন্ট (MIRI) ক্যামেরার সাহায্যে এই ছবি তোলা হয়ছে। ছবিতে বলয়গুলো সরু মনে হলেও আদতে অনেক বেশি চওড়া ও ঘন।

এই উলফ-রায়ট ১৪০ নক্ষত্র যুগলের ভর সূর্যের ২৫ গুণ। উলফ-রায়ট নক্ষত্র জোড়া তাদের জীবনকালের সবচেয়ে বেশি উত্তপ্ত অবস্থায় আছে এবং অনবরত শক্তি নির্গত করছে। এই প্রক্রিয়া চলমান থাকলে নক্ষত্র জোড়াটি তার অর্ধেকেরও বেশি ভর হারাবে।

গ্যাস এবং ধূলিকণাকে বলয়ে রূপান্তরিত করার ব্যাপারটি মূলত আটা-ময়দাকে রুটিতে রূপান্তর করার মতো। নক্ষত্রে পাওয়া সবচেয়ে সাধারণ উপাদান হচ্ছে হাইড্রোজেন। কিন্তু উলফ-রায়ট ১৪০ নক্ষত্র যুগল এত বেশি শক্তি বিকিরণ করছে যে, কার্বনসহ নক্ষত্রের অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন উপাদানও মুক্ত হচ্ছে। এই উপাদানগুলো মহাকাশে ছড়িয়ে পড়ার পর তাপ হারাতে থাকে, শীতল এবং সংকুচিত হয়ে আটা-ময়দার মণ্ডের মতো কিছু একটা তৈরি করে।

অন্যান্য উলফ-রায়ট নক্ষত্রও একইভাবে কাজ করে। কিন্তু উলফ-রায়ট ১৪০-এর মতো বলয় সচরাচর তৈরি করে না। এদের কক্ষপথ মূলত দীর্ঘায়িত হয়, তবে বৃত্তাকার হয় না। যখন নক্ষত্র জোড়া কাছাকাছি দূরত্বে আসে তখনই চালু হয় এই প্রক্রিয়াটি। এই দূরত্ব মূলত সূর্য এবং পৃথিবীর মধ্যকার দূরত্বের সমান। অন্যান্য উলফ-রায়ট নক্ষত্র ক্রমাগত ধূলিকণা একত্রিত করতে পারে।