আপডেট : ৬ নভেম্বর, ২০২৩ ১১:৩৫
সাফল্যের রঙিন তুলিতে বিজয়ের ছবি এঁকে দেখাবে কে?
চৌধুরী জাফরউল্লাহ শারাফাত

সাফল্যের রঙিন তুলিতে বিজয়ের ছবি এঁকে দেখাবে কে?

শ্রীলঙ্কা দল গত ম্যাচে স্বাগতিক ভারতের সামনে দাঁড়াতেই পারেনি। মাত্র ৫৫ রানে অলআউটের লজ্জায় পড়েছে। আফগানিস্তানের কাছে বাজেভাবে হারের পর তাদের আত্মবিশ্বাসের পারদ যে একেবারে তলানিতে নেমে যায়, সেখান থেকে ‘কাম ব্যাক’ করতে পারেনি। একই সঙ্গে তাদের বেশ কিছু খেলোয়াড় ইনজুরিতে পড়ায় দলের ভারসাম্য নষ্ট হয়েছে। এই বড় দুটি কারণে টুর্নামেন্টে শ্রীলঙ্কা দলটি নামের মতো খেলতে পারছে না। এই সুযোগে লঙ্কানদের বিপক্ষে ভালো কিছু করার সুযোগ রয়েছে বাংলাদেশের। এখন দেখার বিষয়- সেই সুযোগ কতটা কাজে লাগাতে পারে সাকিবের বাহিনী।

দলীয় কিংবা ব্যক্তিগত বলেন- সব দিক থেকেই কিন্তু বিশ্বকাপে আশাহত হয়েছে বাংলাদেশ। হ্যাঁ, বাংলাদেশ যে ভয়াবহ সময় এখন পার করছে- আসলে এই দলটির এর চেয়ে বেশি কিছু করে দেখানোর সামর্থ্য ছিল, এখনো আছে। কিন্তু রহস্যজনক কারণে সেটি শো করতে পারেনি। যে কারণে ম্যাচের পর ম্যাচ ব্যাটিং, বোলিং ও ফিল্ডিংয়ে শুধু হতাশার ছবি এঁকেছে। টানা হারের মধ্যে থাকায় খেলোয়াড়দের আত্মবিশ্বাস ও মানসিকতা দুর্বল হয়ে পড়েছে প্রবলভাবে। এতটাই দুর্বল হয়ে পড়েছে যে ঘুরে দাঁড়ানোর যে চাপ, সেটিই তারা নিতে পারছে না। যে কারণে ব্যাটিংটা ঠিকমতো হচ্ছে না। ফলে রান পাচ্ছেন না ব্যাটাররা। বোলিংয়েও আত্মবিশ্বাসের কোনো ছাপ নেই। তাই উইকেটও পাচ্ছেন না বোলাররা। মাঠে তাদের হতাশার স্পষ্ট শরীরী ভাষা ফুটে উঠতে দেখছি। সবদিক থেকেই পিছিয়ে পড়ছে দলটি। এমন পরিস্থিতিতে স্বাভাবিক অবস্থায় ফেরাটা অনেক কঠিন ব্যাপার। তবে এই দুঃসাধ্য কাজটিই করে দেখাতে হবে সাকিবদের। পিছু হটতে হটতে যখন শেষে দেয়ালে পিঠ ঠেকে যায় কারও- তখন সামনে এগিয়ে যাওয়া ছাড়া উপায় থাকে না। বাংলাদেশ দলের পরিস্থিতি এখন অনেকটাই অনুরূপ। কেননা আগামী বছর চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি টুর্নামেন্টে খেলতে হলে সামনের ম্যাচে জয় ছাড়া বিকল্প নেই। তাই সর্বশক্তি দিয়ে অলআউট ক্রিকেটে খেলে বিজয় নিশ্চিত করতে হবে। আমার মতে, শ্রীলঙ্কাকে হারাতে হলে বেশ কয়েকটি বিষয়ে জোর দিতে হবে বাংলাদেশকে। এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো ব্যাটিং। প্রতি ম্যাচেই আমরা ব্যাটিং অর্ডারে রদবদল দেখি, সেটির স্থায়ী সমাধান হওয়া দরকার। অনেক সময় প্রতিপক্ষ বিবেচনায় কৌশল বদলাতে হয়। কিন্তু বাংলাদেশের মতো ব্যাটিং অর্ডারে ঘন ঘন পরিবর্তনের রেকর্ড কিন্তু আর কেউ গড়তে পারেনি। দুই ওপেনার রানের মধ্যে নেই। তারাও অস্বস্তিবোধ করছেন ফর্মে না থাকায়। তবে আমি মনে করি, তাদের উচিত হবে, বিশ্বকাপের ম্যাচ না মনে করে, স্রেফ একটি স্বাভাবিক ম্যাচ মনে করে খেলার। তাহলে কিছুটা হলেও চাপমুক্ত থাকবে তারা। স্বাভাবিক খেলা বাধাগ্রস্ত হবে না। যা হারানোর তা তো হারিয়ে বসে আছে দল। এখন ইতিবাচক থাকাটাই গুরুত্বপূর্ণ। সাকিব, মুশফিকদের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে আরও সতর্ক হয়ে ব্যাট চালাতে হবে। শট বল খেলার যে দুর্বলতা তাদের মধ্যে দেখা গেছে, সেটি নিয়ে কাজ করার সুযোগ রয়েছে। তবে এসব বল মোকাবিলা করার তো পূর্ব অভিজ্ঞতা আছে তাদের। এখন শুধু আত্মবিশ্বাস দরকার। মাহমুদউল্লাহ ও মিরাজ- এই দুজন দলের জন্য অনুপ্রেরণার উৎস হতে পারেন। কঠিন পরিস্থিতি মোকাবিলা করে ব্যাটিং করার যে দৃঢ় মানসিকতা তারা দেখিয়েছেন আগের ম্যাচে- সেটি সত্যিই প্রশংসার দাবিদার। আর এই কাজটি দলের প্রত্যেককে করে দেখাতে হবে। বোলিংয়ের কথা যদি আলাদা করে বলি, মূল বোলারদের সঙ্গে আমাদের সাইড বেঞ্চের বোলারদের যাছাই করে দেখা যেতে পারে। বিশ্বকাপে আমরা দেখেছি, অনেক সাইড বেঞ্চের খেলোয়াড় ম্যাচসেরা পারফরম্যান্স করে দলের জয় নিশ্চিত করেছেন। সবাইকে ইতিবাচক থেকেই দলের প্রতিনিধিত্ব করতে হবে, দায়িত্ব পালন করতে হবে। আগের ম্যাচগুলোতে কী হয়েছে না হয়েছে, সেটি না ভেবে মাঠে নামতে হবে সাকিবদের। আজ নতুন একটি ম্যাচ। তাই নতুনভাবে চিন্তা-ভাবনা ও ঘুরে দাঁড়ানোর পরিকল্পনা নিয়ে মাঠে নামতে হবে। তবে দিল্লির মাঠে এবারের বিশ্বকাপে নিজেদের প্রথম ম্যাচ খেলেছে শ্রীলঙ্কা। সেখানে তিনশর বেশি স্কোর গড়েছে তারা। এটি তাদের আত্মবিশ্বাস জোগাবে। আমি মনে করি, আশাহত দুদলের ম্যাচটিতে ভালো লড়াই হবে এবং ম্যাচটি জমজমাট হবে।

অন্যদিকে, বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কার মধ্যকার মাঠের লড়াই ছাপিয়ে আলোচনার পাদপ্রদীপে আসছে দিল্লির বায়ু দূষণ। সেখানকার বৈরী পরিবেশ দুদলের জন্যই চ্যালেঞ্জের হবে। তবে এতে তো কারও হাত নেই। প্রতিকূল পরিবেশের বিরুদ্ধে লড়তে হবে। এখানে বাড়তি সতর্ক থাকতে হবে দুদলের খেলোয়াড়দের সুরক্ষার জন্য। খেলোয়াড়রা অসুস্থ হয়ে পড়লে তা খেলায় প্রভাব ফেলবে। নিশ্চয় এ বিষয়টি দুদলের টিম ম্যানেজমেন্টের চিন্তায় থাকবে। পরিশেষে আমি চাই, প্রতিকূল পরিবেশে শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশ গর্জে উঠুক, জেগে উঠুক এবং জয়ের সীমানায় ফিরুক।