নওগাঁ-৬ (আত্রাই-রানীনগর) আসনে সরাসরি প্রচার এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নৌকার মনোনয়ন চেয়ে মানুষের দোয়া চাচ্ছেন হাফ ডজনের বেশি প্রার্থী। দিচ্ছেন নানা প্রতিশ্রুতি।
দুই উপজেলা নিয়ে গঠিত এ আসনে বর্তমান এমপি আনোয়ার হোসেন হেলাল ছাড়াও আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন চাইতে পারেন সংরক্ষিত মহিলা আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি শাহিন মনোয়ারা হক, রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা নওশের আলী, নওগাঁ জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি সুলতানা পারভীন বিউটি, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণবিষয়ক সম্পাদক ওমর ফারুক সুমন, আত্রাই উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নাহিদ ইসলাম বিপ্লব, অবসরপ্রাপ্ত অতিরিক্ত সচিব ও রানীনগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ড. ইউনুস আলী প্রামাণিক এবং রানীনগর আওয়ামী লীগের সিনিয়র উপদেষ্টা আব্দুর রহমান।
সরকারদলীয় এমপি আনোয়ার হোসেন হেলাল বলেন, ‘জন্মলগ্ন থেকেই আমাদের পরিবার আওয়ামী লীগের সঙ্গে সম্পৃক্ত। শুধু দলকে আঁকড়ে ধরে রাখায় আমার ছোট ভাই রানীনগর উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি নজরুল ইসলাম হত্যার শিকার হয়েছে। গত উপনির্বাচনে দল থেকে মনোনয়ন নিয়ে বিপুল ভোটে জয়লাভ করেছি। এমপি নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে এলাকার সার্বিক উন্নয়নকে বেগবান করেছি। আশা করছি আগামী নির্বাচনে তৃণমূলের মতামতের ভিত্তিতে দল আবারও আমাকে মনোনয়ন দেবে।’
বীর মুক্তিযোদ্ধা নওশের আলী বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে এবং পরবর্তী সময়ে দেশকে পূর্ণ গঠনে নানাভাবে কাজ করেছি। এর আগে কয়েকবার মনোনয়ন চেয়েছিলাম। সেই থেকেই এলাকার মানুষের সঙ্গে মিশে আছি এবং জনগণের ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি। প্রধানমন্ত্রী যেহেতু দলের একজন সৎ মানুষকে মনোনয়ন দেবেন, সেহেতু আশা করছি এবার মনোনয়ন পাব।’
সুলতানা পারভীন বিউটি বলেন, ‘আমার স্বামী প্রয়াত ইসরাফিল আলম এমপির সঙ্গে শুরু থেকেই তার রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে যুক্ত ছিলাম এবং এখনো আছি। স্বামী ইসরাফিল আলমের উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে কাজ করে যাচ্ছি। মনোনয়ন পেলে এলাকার লোকজন সর্বোচ্চ ভোটে নির্বাচিত করবেন বলে আশা করছি।’
ওমর ফারুক সুমন বলেন, ‘যোগ্যতা ও তৃণমূলের জনপ্রিয়তার ভিত্তিতে মনোনয়ন দিলে আমিই মনোনয়ন পাব ইনশাল্লাহ।’
ড. ইউনুস আলী প্রামাণিক বলেন, ‘সরকারের উন্নয়ন তুলে ধরে নিয়মিত গণসংযোগ করে যাচ্ছি। আশা করছি সবকিছু বিবেচনা করে দল আমাকেই মনোনয়ন দেবে।’
১৯৯১ সাল থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত নওগাঁ-৬ (আত্রাই-রানীনগর) আসন ছিল বিএনপির দখলে। একটানা ১৫ বছর এ আসনে বিএনপির এমপি ছিলেন তৎকালীন চারদলীয় জোটের সাবেক গৃহায়ন ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী আলমগীর কবীর। এরপর বিএনপি সরকারের শেষ মুহূর্তে ২০০৬ সালের ডিসেম্বরে আলমগীর কবীর দল ত্যাগ করেন এবং পরে এলডিপিতে যোগদান করেন। পরে ২০০৮ সালে নির্বাচনে তৎকালীন ঢাকা মহানগর শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক ইসরাফিল আলম আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন নিয়ে এ আসনে নির্বাচন করেন। ওই নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী আনোয়ার হোসেন বুলুকে পরাজিত করে এমপি নির্বাচিত হন। সেই থেকে ১৫ বছর ধরে আওয়ামী লীগের দখলে রয়েছে এই আসনটি।
এরই মধ্যে ২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আলমগীর কবীর আবার বিএনপি থেকে মনোনয়ন নিয়ে নির্বাচনে অংশ নেন। সে সময় আলমগীর কবীরকে পরাজিত করে ইসরাফিল আলম আবারও এমপি নির্বাচিত হন। ২০২০ সালের ২৭ জুলাই এমপি ইসরাফিল আলম মারা গেলে ওই আসনে উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে আনোয়ার হোসেন হেলালকে মনোনয়ন দেয়া হয়। নির্বাচনে বিএনপি থেকে শেখ রেজাউল ইসলাম রেজু, ন্যাশনাল পিপলস্ পাটি থেকে ইন্তেখাব আলম রুবেল, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ থেকে শাহজাহান আলী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। নির্বাচনে এমপি নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগের প্রার্থী আনোয়ার হোসেন হেলাল। তবে বিএনপির নেতা-কর্মীরা বলছেন, সুষ্ঠু নির্বাচন হলে আবার আসনটি ফিরে পাবেন তারা।
বিএনপির নেতা-কর্মীরা তাকিয়ে আছেন দলীয় সিদ্ধান্তের দিকে। দলীয় সিদ্ধান্ত ক্রমে যদি তারা নির্বাচনে অংশ নেয়, এ ক্ষেত্রে এ আসনে বিএনপি থেকে বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য আনোয়ার হোসেন বুলু, সাবেক প্রতিমন্ত্রী আলমগীর কবীর, নওগাঁ জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক শেখ রেজাউল ইসলাম রেজু, কেন্দ্রীয় তাঁতী দলের যুগ্ম আহ্বায়ক এছাহক আলীসহ আরও কয়েকজন মনোনয়ন চাইতে পারেন বলে শোনা যাচ্ছে।
এ ছাড়া রানীনগর উপজেলা জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক আবু হাসান, ন্যাশনাল পিপলস্ পাটির যুগ্ম মহাসচিব ইন্তেখাব আলম রুবেলের নাম শোনা যাচ্ছে।
বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য আনোয়ার হোসেন বুলু বলেন, ‘এ আসনে বিএনপির জনপ্রিয়তা আগেও ছিল, এখনো আছে। আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দল যদি অংশ নেয় আর নির্বাচন সুষ্ঠু হয়, তাহলে আবার আমরাই বিপুল ভোটে জয়লাভ করব।’
জাতীয় পার্টির মনোনয়নপ্রত্যাশী আবু হাসান বলেন, ‘ছাত্রজীবন থেকেই আমি জাতীয় পার্টির রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত। বর্তমানে উপজেলা জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছি। রাজনৈতিক জীবন বিবেচনা করেই দল আমাকে মনোনয়ন দেবে বলে আশা করছি।’
নির্বাচনী এলাকার জুলফিকার আলী, মোমেনা বেগম, পিয়াস হোসেনসহ কয়েকজন সাধারণ ভোটার বলেন, নিবার্চনের সময় ঘনিয়ে এলেই প্রার্থীরা নানান প্রতিশ্রুতি দেন কিন্তু ভোটের পর আর কোনো খবর নেন না। যারা এলাকার উন্নয়নে কাজ করবেন, তাদেরই আমরা নির্বাচিত করব।
১৯৮/সি, তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮
©দৈনিক বাংলা