আপডেট : ১০ নভেম্বর, ২০২৩ ১০:৩২
নেত্রকোনা-১ আসনে আবারও জয়ের খোঁজে আ.লীগ
মাঠে আছে বিএনপি-জাপাও
সালাহউদ্দীন খান রুবেল, নেত্রকোনা

নেত্রকোনা-১ আসনে আবারও জয়ের খোঁজে আ.লীগ

গারো পাহাড়ের পাদদেশ ঘেঁষা বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী জেলা নেত্রকোনা। সাদা-গোলাপি পাহাড়, নীল জলের পুকুর ও প্রকৃতির নৈসর্গিক সৌন্দর্যভরা এই জেলায় ৫টি সংসদীয় আসন। এর মধ্যে কলমাকান্দা ও দুর্গাপুর মিলে নেত্রকোনা-১ সংসদীয় আসন। ধবধবে সাদা সিলিকন বালু, হাওর-বাঁওড় ও খনিজসম্পদ সমৃদ্ধ এলাকাটিতে এখন চলছে জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে ব্যাপক আলোচনা। এই আসনটি থেকে কোন দলে কারা প্রার্থী হচ্ছেন, চায়ের দোকানগুলোতে তা নিয়ে চলছে আলোচনার ঝড়।

আসনটিতে সব দলেরই রয়েছে একাধিক মনোনয়নপ্রত্যাশী প্রার্থী। আওয়ামী লীগের একাধিক নেতার সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, আসনটিতে দলের মনোনয়নপ্রত্যাশীর সংখ্যাও অনেক। ক্ষমতাসীন দলটির মনোনয়নপ্রত্যাশী হিসেবে আছেন বর্তমান সংসদ সদস্য মানু মজুমদার।

এই দৌড়ে আরও আছেন সাবেক সংসদ সদস্য মোশতাক আহমেদ রুহী, ছবি বিশ্বাস, শাহ্ কুতুবউদ্দিন তালুকদার রুয়েল, নেত্রকোনা জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও কলমাকান্দা উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি অ্যাডভোকেট মহিদুর রহমান তালুকদার লিটন। এ ছাড়াও কলমাকান্দা উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি এরশাদুর রহমান মিন্টু, আওয়ামী যুবলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আতাউর রহমান খান আঁখিরসহ অনেকেই মনোনয়নপ্রত্যাশী।

এলাকাবাসী জানিয়েছে, সরকার সমর্থক মনোনয়নপ্রত্যাশীরা প্রায়ই নির্বাচনী এলাকায় গণসংযোগ, মোটরসাইকেলে শোভাযাত্রাসহ তৃণমূল পর্যায়ের জনগণের মাঝে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকারের নানান উন্নয়ন চিত্র তুলে ধরে লিফলেট বিতরণ করছেন।

এলাকাবাসী জাতীয় পার্টির সম্ভাব্য মনোনয়নপ্রত্যাশী নেতাকর্মীদের নিয়ে তৃণমূল পর্যায়ে গণসংযোগ করার কথা জানিয়েছেন।

বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীদেরও ২৮ অক্টোবরে ঢাকায় মহাসমাবেশ পণ্ড হওয়ার আগে নিয়মিত নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখাসহ দলের কেন্দ্রীয় কর্মসূচি বাস্তবায়নে দলের নেতাকর্মীদের নিয়ে মাঠে কাজ করতে দেখা গেছে। তবে বর্তমানে ধরপাকড়ের ভয়ে তাদের বেশির ভাগই আত্মগোপনে আছেন।

বিএনপির কয়েকজন জেলা পর্যায়ের নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যদি বিএনপি অংশগ্রহণ করে, তবে কে প্রার্থী হবেন তা এখনো অনির্ধারিত। তবে মনোয়নপ্রত্যাশী অনেক। এদের মধ্যে রয়েছেন কেন্দ্রীয় বিএনপির আইনবিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল, জেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম খান মাসুদ, ঢাকা মহানগর আদাবর থানা বিএনপির সাবেক সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য লুৎফুর রহমান খান ডিপটি। আছেন আরও কয়েকজন স্থানীয় মুখ।

জাতীয় পার্টি সূত্রে জানা যায়, সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা জাতীয় পাটির সহসভাপতি গোলাম রব্বানীসহ আরও দু-একজন মনোনয়ন প্রত্যাশী রয়েছেন।

আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী প্রয়াত সাবেক এমপি জালাল উদ্দীন তালুকদারের ছেলে শাহ্ কুতুব উদ্দিন তালুকদার রুয়েল দৈনিক বাংলাকে জানান, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে জনসাধারণের সমর্থন আদায়ের লক্ষ্যে সব পর্যায়ের আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী অঙ্গ সংগঠনের নেতা-কর্মীদের নিয়ে কাজ করে যাচ্ছি। সরকারের উন্নয়নমূলক কার্যক্রম আমার নির্বাচনী এলাকায় বেশ ভালোভাবেই প্রচার করছি। আমার বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধা মরহুম জালাল উদ্দীন তালুকদার সফল সংসদ সদস্য ছিলেন। তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বিশ্বাসী ও বিশ্বস্ত ছিলেন। তাই আমি আশা করছি, তার সন্তান হিসেবে আমাকে আগামী নির্বাচনের জন্য মনোনয়ন দেবে কেন্দ্র।’

একই দল থেকে মনোনয়নপ্রত্যাশী রোটারিয়ান আতাউর রহমান খান আঁখির দৈনিক বাংলাকে বলেন, ‘নেত্রকোনা-১ আসন আওয়ামী লীগের দুর্গ হিসেবে খ্যাত। শিল্প, সাহিত্য, সমৃদ্ধ ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপার সম্ভাবনাময় এই পর্যটন অঞ্চলটিকে বাংলাদেশের মানচিত্রের একটি সমৃদ্ধশালী অর্থনৈতিক অঞ্চল হিসেবে গড়ে তুলতে বিগত এক যুগেরও বেশি সময় ধরে আমি তৃণমূলে কাজ করে আসছি। আমি মনে-প্রাণে বিশ্বাস করি, আমাকে এই আসনে নৌকার মনোনয়ন দিলে সব অপশক্তি এবং চক্রান্তের বিরুদ্ধে নৌকার বিজয় সুনিশ্চিত করতে পারব।’

বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী ঢাকা মহানগর আদাবর থানার বিএনপির সাবেক সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য লুৎফুর রহমান খান বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে বিএনপি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে না। তবে কেন্দ্র যদি নির্বাচনে অংশ নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়, তাহলে বিএনপির কেন্দ্রীয় হাইকমান্ড নেত্রকোনা-১ আসনে আমাকে মনোনয়ন দেবেন বলে বিশ্বাস করি।’ তিনি নির্বাচিত হলে কলমাকান্দা-দুর্গাপুর সংসদীয় আসনকে আধুনিক ও মডেল এলাকায় রূপান্তরের প্রতিশ্রুতি দেন।

এদিকে আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থী নির্বাচনে তৃণমূলের কাছে জনপ্রিয় প্রার্থী বাছাইয়ের দাবি জানিয়েছেন কলমাকান্দা উপজেলার কৈলাটি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কমল খান। তিনি দৈনিক বাংলাকে বলেন, ‘সাবেক এমপি বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ জালাল উদ্দীন তালুকদারের মৃত্যুর পর এ আসনে যারাই আওয়ামী লীগের মনোনীত এমপি হয়েছেন তাদের প্রত্যেকেরই পরিবার ও আত্মীয়-স্বজনদের নিয়ন্ত্রণে ছিল কলমাকান্দা-দুর্গাপুর সংসদীয় আসন। এখানে আওয়ামী লীগের দুর্দিনে ত্যাগী নির্যাতিত পরীক্ষিত নেতা-কর্মীরা উপেক্ষিত হয়েছেন। তাই আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সভাপতি শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বোর্ডের কাছে দাবি জানাচ্ছি, তৃণমূল পর্যায়ের গ্রহণযোগ্য গণমানুষের কোনো নেতাকে যেন মনোনয়ন দেয়া হয়।’