আপডেট : ১৩ নভেম্বর, ২০২৩ ১৫:৫৮
কুড়িগ্রামে এক শিক্ষক দিয়ে চলছে বিদ্যালয়
কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি


কুড়িগ্রামে এক শিক্ষক দিয়ে চলছে বিদ্যালয়

ক্যাপশন: উলিপুরের পান্ডুল ইউনিয়নের সিদ্ধান্ত মালতীবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে রয়েছেন একজন শিক্ষক। ছবি: দৈনিক বাংলা

কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার পান্ডুল ইউনিয়নের সিদ্ধান্ত মালতীবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এক শিক্ষককে দিয়ে চলছে পাঠদান কার্যক্রম। শুধু তাই নয়, পাঠদানের পাশাপাশি তাকে করতে হয় স্কুলের পরিষ্কার-পরিছন্নতা, পতাকা উত্তোলনসহ সব দাপ্তরিক কাজ। শিশুশ্রেণি থেকে ৫ম শ্রেণি পর্যন্ত ৬টি ক্লাসে ১০৪ জন শিক্ষার্থীর পাঠদান সামলাতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে ওই শিক্ষককে। এক ক্লাসে গেলে অন্য ক্লাস থাকে ফাঁকা। ফলে একদিকে যেমন শিক্ষার্থীরা কাঙ্ক্ষিত পড়াশোনা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে, অন্যদিকে প্রতিষ্ঠানটি নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন অভিভাবকরা।

সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা যায়, ১৯৮৯ সালে স্থাপিত হওয়া সিদ্ধান্ত মালতীবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এই বিদ্যালয়ে শিক্ষক ছিল ৪ জন। এর মধ্যে সহকারী শিক্ষক জান্নাতুল আল ফেরদৌস মাতৃত্বকালীন ছুটিতে আছেন। আর বাকি তিনজন শিক্ষকের মধ্যে ২ জন ডেপুটেশনে অন্যত্র চলে গেছেন। এর মধ্যে শিক্ষিকা শ্রীমতি মালা রানী গোড়াই পাঁচপীর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এবং বিলকিছ জাহানকে আনন্দবাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সংযুক্তি করা হয়েছে। ফলে সিদ্ধান্ত মালতীবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিক তামান্না ফেরদৌসী একাই সামলাচ্ছেন শতাধিক শিক্ষার্থীকে। শিক্ষক না থাকায় শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা করতে গিয়ে অলস সময় কেটে ঘরে ফিরতে হচ্ছে। এ বিষয়ে বাচ্চাদের পড়াশোনা নিয়ে উদ্বিগ্নতার মধ্যে আছেন অভিভাবকসহ এলাকাবাসী।

৪র্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী হরিপ্রিয়া জানায়, ১ম ও দ্বিতীয় অধিবেশনে শিশুশ্রেণি থেকে ৫ম শ্রেণির ৬টি ক্লাস একজন শিক্ষকই নেয়। অনেক সময় ম্যাডাম আমাদের পড়া দিয়ে আবার অন্য ক্লাসে চলে যান। এ জন্য ম্যাডাম আমাদের ক্লাসের পড়া ভালোভাবে আদায় করার আগেই ক্লাসের সময় চলে যায়। সামনে আমাদের পরীক্ষা, প্রস্তুতিও নেই তেমনটা। শিক্ষক কম থাকায় অনেক শিক্ষার্থী বিদ্যালয়ে আসা বন্ধ করেছে। শিক্ষক না থাকায় আমাদের পড়ালেখার খুব ক্ষতি হচ্ছে।

অভিভাবক শ্যামল চন্দ্র বলেন, ‘এই বিদ্যালয়ে দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষকসংকট থাকলেও শিক্ষা অফিস কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না। শিক্ষকসংকটের কারণে অনেক অভিভাবক তাদের সন্তানদের প্রাইভেট মাস্টার দিয়ে পড়াশোনা করাচ্ছেন। সামনে বার্ষিক পরীক্ষা। আমাদের সন্তানের ভবিষ্যৎ নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি।’

অভিভাবক আমিনুর রহমান বলেন, ‘সরকার কোটি টাকা খরচ করে সুন্দর একটি ভবন দিয়েছে পড়াশোনা শেখার জন্য। কিন্তু শিক্ষা অফিসারদের গাফলতির কারণে আমাদের সন্তানরা শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।’

বিদ্যালয়ের একমাত্র সহকারী শিক্ষক তামান্না ফেরদৌসী জানান, একাই শিশু থেকে ৫ম শ্রেণি পর্যন্ত ক্লাসগুলো নিতে হচ্ছে। শিক্ষকসংকটে বিদ্যালয়ের সার্বিক শিক্ষা কার্যক্রম বিঘ্নিত হচ্ছে। কেননা দ্বিতীয় তলায় ক্লাস নিতে গেলে নিচতলায় শিক্ষার্থীরা বিশৃঙ্খলা করে। বিদ্যালয়ে গেট খোলা, পতাকা উত্তোলন, পাঠদানসহ সব কাজ আমি একাই সামলাচ্ছি। এতে করে একার পক্ষে বিদ্যালয় সামলানো অসম্ভব হয়ে পড়েছে। তাই দ্রুত শিক্ষক দেয়ার অনুরোধ করেছেন তিনি।

বিদ্যালয়ের জমিদাতা ও সাবেক প্রধান শিক্ষক আব্দুস সামাদ বলেন, ‘ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষক দুজনে স্কুল উন্নয়নের স্লিপের টাকা অনিয়ম করায় স্কুল কমিটির সঙ্গে দ্বন্দ্ব হয়। এ ছাড়া সাম্প্রদায়িক ইস্যু তৈরি করে তারা ডেপুটেশনের নামে নিজের পছন্দসই স্কুলে বদলি হয়েছেন। শিক্ষা অফিস তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে উল্টো ওই শিক্ষকদের পুরস্কৃত করেছে। ফলে একজন মাত্র শিক্ষক দিয়ে চলছে বিদ্যালয়ের পাঠদান। পর্যাপ্ত শিক্ষক না থাকায় ছাত্র-ছাত্রীদের পড়াশোনা ব্যাহত হচ্ছে।’

উলিপুর উপজেলায় শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা যায়, জেলা শিক্ষা অফিসার স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে চলতি বছরের ২৬ অক্টোবর সহকারী শিক্ষক শ্রীমতি মালা রানীকে গোড়াই পাঁচপীর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এবং বিলকিছ জাহানকে আনন্দবাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ডেপুটেশনে সংযুক্তি করা হয়। তাদের ৩১ অক্টোবর নতুন কর্মস্থলে যোগদানের নির্দেশ দেয়া হয়। আগামী বছরের ৩১ অক্টোবর এই ডেপুটেশনের মেয়াদ শেষ হবে বলেও অফিস আদেশে বলা হয়েছে।

কুড়িগ্রাম জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা নবেজ উদ্দিন সরকার বিদ্যালয়ে এক শিক্ষক দিয়ে পাঠদানের কথা স্বীকার করে বলেন, ‘ডেপুটেশনে বদলি হওয়া ওই শিক্ষকদের স্থানে অন্য একজনকে দেয়া হয়েছে। আরেকজন শিক্ষকের সুপারিশ দিলেই পদায়ন করা হবে। তবে উলিপুর শিক্ষা অফিস থেকে স্লিপের টাকা আত্মসাৎ কিংবা সাম্প্রদায়িকতার কোনো অভিযোগ আমাকে দেয়া হয়নি।’