আপডেট : ১৫ নভেম্বর, ২০২৩ ২৩:৩৬
ইনোভেটিভ ক্রিকেট খেলে ভারত ফাইনালে
চৌধুরী জাফরউল্লাহ শারাফাত

ইনোভেটিভ ক্রিকেট খেলে ভারত ফাইনালে

রেকর্ড ৫০তম সেঞ্চুরি উদযাপন করছেন বিরাট কোহলি। ছবি: সংগৃহীত

বিশ্বকাপের বিশ্বমঞ্চে এবার অনবদ্য পারফরম্যান্স দেখিয়ে যাচ্ছে ভারত। প্রথম সেমিফাইনালে নিউজিল্যান্ডকে ৭০ রানে হারিয়েছে তারা। এ নিয়ে এবারের বিশ্বকাপে টানা আট ম্যাচ অপরাজিত রোহিত শর্মার দল। ভারতের হয়ে সেঞ্চুরির দেখা পেয়েছেন রোহিত শর্মা ও শ্রেয়াস আইয়ার। আর বল হাতে ৭ উইকেট শিকার করেছেন মোহাম্মদ শামি।

মুম্বাইয়ের ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে এ দিন টসে জিতে প্রথমে ব্যাটিংয়ে নেমে বিরাট কোহলি ও শ্রেয়াস আইয়ারের সেঞ্চুরিতে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৪ উইকেট হারিয়ে ৩৯৭ রানের বড় সংগ্রহ পায় ভারত, যা বিশ্বকাপের নকআউট পর্বে সর্বোচ্চ সংগ্রহের রেকর্ড। জবাবে ব্যাট করতে নেমে ৪৮.৫ ওভারে ৩২৭ রানে গুটিয়ে যায় নিউজিল্যান্ড। রেকর্ড ৭ উইকেট নিয়ে ম্যাচসেরা হয়েছেন মোহাম্মদ শামি।

লক্ষ্য তাড়ায় দলকে ভালো শুরু এনে দিতে পারেননি দুই কিউই ওপেনার ডেভন কনওয়ে ও রাচিন রবীন্দ্র। ৩০ রানে প্রথম উইকেট হারায় নিউজিল্যান্ড। ৩৯ রানে বিদায় নেন রাচিন রবীন্দ্রও। ডেভন কনওয়ে ও রাচিন দুজনই করেন ১৩ রান করে।

এরপর ড্যারেল মিচেলের জুটি বেঁধে এগোতে থাকেন অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসন। দায়িত্বশীল ব্যাটিং করে দলকে এগিয়ে নিতে থাকেন তারা। দুজনই দেখা পান ফিফটির। ফিফটির পর দুজনই ছুটতে থাকেন সেঞ্চুরির দিকে।

তবে মিচেল সেঞ্চুরির দেখা পেলেও হতাশ করেন উইলিয়ামসন। দলীয় ২২০ রানের মাথায় ৭৩ বলে ৬৯ রানের ইনিংস খেলে উইলিয়ামসন আউট হলে ভাঙে ১৪৯ বল স্থায়ী ১৮১ রানের জুটি।

এরপর রানের খাতা না খুলেই আউট হন টম লাথাম। ভয়ংকর হওয়ার আভাস দেয়া গ্লেন ফিলিপসকে ড্রেসিং রুমে ফেরত পাঠান জাসপ্রিত বুমরাহ। ৩৩ বলে ৪১ রানের ইনিংস খেলে প্যাভিলিয়নের পথ ধরেন এই ব্যাটার।

শেষ দিকে একাই লড়াই চালিয়ে গেলেও পেরে উঠতে পারেননি মিচেল। ১১৯ বলে ১৩৪ রানের ইনিংস খেলে এই ব্যাটার সাজঘরে ফিরলে জয় প্রায় নিশ্চিত হয়ে যায় ভারতের। মিচেলকে ফিরিয়ে বিশ্বকাপের ইতিহাসে প্রথম বোলার হিসেবে ৪ বার ৫ উইকেট নেয়ার কীর্তি গড়েন শামি। শেষ দিকে এই পেসার আরও ২ উইকেট নিলে ৩২৭ রানে অলআউট হয় নিউজিল্যান্ড।

ভারতের জয়ের পথে কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা ড্যারেল মিচেলকে ক্যাচআউট করে ৫ উইকেট পূর্ণ করেছেন ৩৩ বছর বয়সী পেসার। চলতি আসরে এটি তার তৃতীয় ৫ উইকেট।

এর আগে ব্যাটিংয়ে নেমে বরাবরের মতো ভারতকে উড়ন্ত সূচনা এনে দেন দুই ওপেনার রোহিত শর্মা এবং শুভমান গিল। শুরু থেকেই মারমুখী ছিলেন রোহিতই। তার মারমুখী ব্যাটিংয়ে শুরুতেই কিছুটা দিশেহারা হয়ে পড়েন নিউজিল্যান্ডের বোলাররা। মারকাটারি ব্যাটিংয়ে দলের ইনিংসকে এগিয়ে নিতে থাকেন রোহিত। আর তাকে যোগ্য সঙ্গ দিয়ে দেন গিল। উদ্বোধনী জুটিতে তারা তোলেন ৭১ রান। ২৯ বলে ৪৭ রানের বিস্ফোরক ইনিংস খেলে রোহিত সাজঘরে ফিরলে ভাঙে এই জুটি।

রোহিতের বিদায়ের পর ক্রিজে আসেন বিরাট কোহলি। দিনটা শুধুই নিজের করে নেয়ার পণ করেই যেন মাঠে নেমেছিলেন তিনি। ক্রিজে নেমে স্বভাবসুলভ ব্যাটিং চালিয়ে যেতে থাকেন কোহলি। এর মাঝে ফিফটির দেখা পান গিল। ফিফটি পেরিয়ে সেঞ্চুরির দিকে ছুটতে থাকেন এই ওপেনার। তবে তখনই ঘটে বিপত্তি। ব্যাটিং করার সময় চোট পেয়ে মাঠের বাইরে চলে যেতে হয় গিলকে। আঘাত পাওয়ার আগে ৬৫ বলে ৭৯ রান করেন গিল। দলের বোর্ডে তখন ১ উইকেট হারিয়ে ১৬৪ রান।

এরপর শ্রেয়াস আইয়ারকে সঙ্গে নিয়ে দলের ইনিংসকে টানতে থাকেন কিং কোহলি। দুজনের সাবলীল ব্যাটিংয়ে রকেটের গতিতে রান উঠতে থাকে ভারতের বোর্ডে। নিউজিল্যান্ডের বোলারদের কোনোরকম পাত্তাই দেননি কোহলি কিংবা আইয়ার। ফিফটি ছুঁয়ে কোহলি এগোতে থাকেন সেঞ্চুরির দিকে।

শেষমেশ তিন অঙ্কের সেই ম্যাজিক ফিগার ছুঁয়ে ফেলেন কোহলি। তার অনবদ্য ব্যাটিংয়ের কোনো জবাবই যেন ছিল না কিউইদের কাছে। ওয়ানডে ক্যারিয়ারে এটি কোহলির ৫০তম সেঞ্চুরি। শচীন টেন্ডুলকারের ৪৯ সেঞ্চুরির রেকর্ড ভেঙে ওয়ানডে ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি সেঞ্চুরির মালিক বনে গেলেন কোহলি। সেঞ্চুরির পরেও বোলারদের ওপর চড়াও হন কোহলি। তবে দলীয় ৩২৭ রানের মাথায় ১১৩ বলে ১১৭ রানের জাদুকরী এক ইনিংস খেলে বিদায় নেন কোহলি।

ভারতের হয়ে বাকি কাজটা সারেন লোকেশ রাহুল এবং শ্রেয়াস আইয়ার। কোহলির পর সেঞ্চুরির তিন অঙ্কের ম্যাজিক ফিগারের দেখা পান আইয়ারও। দলীয় ৩৮১ রানের মাথায় আউট হওয়ার আগে ৭০ বলে ১০৬ রানের বিধ্বংসী এক ইনিংস খেলেন তিনি। এ ছাড়া টর্নেডোর গতিতে ব্যাট চালিয়ে ২০ বলে ৩৯ রানের দুর্দান্ত এক ক্যামিও খেলে অপরাজিত থাকেন রাহুল।

মাঝে সূর্যকুমার যাদব ক্রিজে নেমে তেমন কিছু করতে না পারলে মাঠে নামেন রিটায়ার্ড হার্ট হয়ে ফিরে যাওয়া গিল। শেষ পর্যন্ত তিনি অপরাজিত থাকেন ৬৬ বলে ৮০ রান করে।

নিউজিল্যান্ডের হয়ে ৩ উইকেট শিকার করেন টিম সাউদি। এ ছাড়া ট্রেন্ট বোল্ট নেন ১ উইকেট।