আপডেট : ১৬ নভেম্বর, ২০২৩ ১১:৩২
ইউটিলিটি ক্রিকেটারদের প্রতিযোগিতা দেখা যাবে
চৌধুরী জাফরউল্লাহ শারাফাত

ইউটিলিটি ক্রিকেটারদের প্রতিযোগিতা দেখা যাবে

ক্রিকেটের নন্দন ইডেন গার্ডেনসে আজ ফাইনালে ওঠার মহারণে অস্ট্রেলিয়া-দক্ষিণ আফ্রিকা মুখোমুখি হবে। এরই মধ্যে বিশ্বকাপের ইতিহাসে বেশ কিছু সেমিফাইনাল খেলার অভিজ্ঞতা হয়েছে প্রোটিয়াদের। কিন্তু কোনো আসরেই তাদের ফাইনালে ওঠার রেকর্ড নেই। এবার আবার ইতিহাস হাতছানি দিচ্ছে তাদের। কিন্তু এই দফায় চোকার্স তকমাটি তারা ঘোচাতে পারে কি না- সেটি দেখার বিষয়। আমার মনে হয়, এবার ফাইনালে ওঠার রেকর্ডটা গড়েই ফেলতে পারে প্রোটিয়ারা। এ কথা বলার পেছনে বড় কারণ হলো- এই টুর্নামেন্টে আগ্রাসী ব্র্যান্ডের ক্রিকেট খেলছে দক্ষিণ আফ্রিকা। ভারত ও নেদারল্যান্ডসের কাছে হার বাদ দিলে দলটিকে অপ্রতিরোধ্য ও খুবই দুর্ধর্ষ দেখাচ্ছে। টুর্নামেন্টে তাদের উদ্বোধনী ম্যাচে ইতিহাস গড়া সর্বোচ্চ ইনিংস (৪২৮) খেলে জয় তুলে নেয় দলটি। বিস্ফোরক ব্যাটিং ও বিধ্বংসী বোলিং- এই দলটির সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য। পাওয়ার ক্রিকেটের ‘কমপ্লিট প্যাকেজ’ বলা যায় দক্ষিণ আফ্রিকাকে। তাই এবার নতুন কিছু করে দেখাতে পারে দলটি- এমনটা আশা করাই যায়। অন্যদিকে, অস্ট্রেলিয়ার প্রসঙ্গে যদি বলি, পাওয়ার ক্রিকেটের অত্যন্ত ‘পাওয়ারফুল’ দল তারাও। লিগ পর্বের প্রথম দুটি ম্যাচে তারা হেরেছিল। কিন্তু এরপর থেকে অপরাজেয় দলটি। তাদের ব্যাটিং বলেন আর বোলিং বলেন, সবদিক থেকেই ফর্মের তুঙ্গে আছেন অস্ট্রেলিয়ানরা। হট ফেভারিটের মতোই খেলছেন তারা। ষষ্ঠবারের মতো বিশ্বকাপ শিরোপা জেতার দৌড়ে এগিয়ে যেতে পারে দলটি। আমি মনে করি, আজ দ্বিতীয় সেমিফাইনালে দক্ষিণ আফ্রিকা ও অস্ট্রেলিয়ার মধ্যে পাওয়ার ক্রিকেটের মহাযুদ্ধ হবে। চিত্তাকর্ষক খেলার মুগ্ধতা ছড়াবে সবার মাঝে। দীর্ঘদিন মনে রাখার মতো ম্যাচ হতে পারে।

সেমিফাইনালে কিছু বিষয় দুই দলের খেলায় বেশ প্রভাব ফেলতে পারে। শুরুতেই বলব, পাওয়ার প্লের ব্যাটিং ও বোলিংয়ের কথা। এখানে কিন্তু দুই দলের খেলার ধরন ভিন্ন দুই ধাঁচের। লিগ পর্বে লক্ষ্য করেছি, ইনিংসের শুরুতে স্কোরবোর্ডে যত বেশি রান তোলা যায়- সে দিকেই বেশি মনোযোগ থাকে অস্ট্রেলিয়ানদের। কিন্তু দক্ষিণ আফ্রিকানদের ইনিংসের শুরুটা হয় খুবই ধীরস্থিরভাবে। অবশ্য ডেথ ওভারে তারা যে রুদ্ররূপ ধারণ করে, তা অকল্পনীয় ও অবিশ্বাস্য রকমের। আমার মতে, পাওয়ার প্লেতে যারা ব্যাটিংয়ে শক্তি দেখাতে পারবে, তাদের জন্য মাঝের ওভারগুলোয় খেলা সহজ হবে। এই কাজটি ঠিকঠাকমতো করতে পারলে খেলার নিয়ন্ত্রণ হাতে নেয়া যাবে। ব্যাটিংয়ের মতো সমান গুরুত্বপূর্ণ শুরুর বোলিংও। পাওয়ার প্লের বোলিংয়ে খুবই বিপজ্জনক আফ্রিকানরা। যেখানে তাদের তুলনায় অনেক পিছিয়ে অস্ট্রেলিয়া। তাই পাওয়ার প্লেতে যারা ব্যাটিং ও বোলিংয়ে এগিয়ে যাবে, তাদের সফল হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকবে।

আজ গ্লেন ম্যাক্সওয়েলের দিকে দৃষ্টি থাকবে সবার। আফগানিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচে পিঠে ব্যথা, পায়ের পেশির টান সহ্য করেও যেভাবে অতিমানবীয় হার না মানা ২০১ রানের বিস্ফোরক ইনিংস খেলে দলের জয় নিশ্চিত করেন এই অলরাউন্ডার, তা ইতিহাসের সেরা ব্যাটিংয়ের জায়গায় স্থান করে নিয়েছে। অবশ্য তার জন্য বিশেষ পরিকল্পনা থাকবে দক্ষিণ আফ্রিকার। ম্যাক্সওয়েলের ‘ঘাতক’ হতে পারেন প্রোটিয়া বাঁহাতি স্পিনার কেশব মহারাজ। লিগ পর্বে কলকাতার মাঠেই এক ম্যাজিক ডেলিভারিতে ভারতীয় ওপেনার শুভমান গিলের উইকেটটি যেভাবে তুলে নিয়েছিলেন এই আফ্রিকান, অস্ট্রেলিয়ানদের জন্যও বড় হুমকির হতে পারেন এই বোলার। ইনিংসের মাঝের ওভারগুলোতে তার বোলিং ভালো হচ্ছে। অন্যদিকে, দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটিং লাইনআপের মূল আকর্ষণ হলেন কুইন্টন ডি কক। ধারাবাহিক দুর্দান্ত ফর্মে আছেন এই ওপেনার। টুর্নামেন্টে চারটি সেঞ্চুরি পূরণ করেছেন। এর মধ্যে ১৭৪ রানের ইনিংস খেলেন। ছয়শর মতো রান সংগ্রহ তার। লম্বা সময় উইকেটে কাটানোয় অভ্যস্ত হয়ে গেছেন কক। সেমিফাইনালে তার ব্যাটে দ্যুতি ছড়াতে পারে। তবে কককে চ্যালেঞ্জ জানাতে পারেন অজি লেগ স্পিনার অ্যাডাম জাম্পা। লিগ পর্বে টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি এই অস্ট্রেলিয়ান। অবশ্য জাম্পাকে মাথায় রেখেই কৌশল নির্ধারণ করবে দক্ষিণ আফ্রিকা। তবে দলীয় অধিনায়ক টেম্বা বাভুমা সেভাবে ফর্মে না থাকার বিষয়টি তাদের জন্য চিন্তার কারণ। এ ছাড়া মারক্রাম, ক্লাসেন, হেনড্রিকসদের সমন্বয়ে প্রোটিয়াদের ব্যাটিং লাইনআপ খুবই ধ্বংসাত্মক। তাদের কোনো দুর্বলতা দেখছি না। তবে তাদেরকে আসল পাওয়ার ব্যাটিংটা আজ দেখাতে হবে মিচেল স্টার্ক, প্যাট কামিন্স, হ্যাজলউডদের বিরুদ্ধে। কীভাবে ভারতের মাঠে বোলিংয়ে সফল হতে হয়- তা আইপিএলে খেলে খেলে অজিদের একপ্রকার মুখস্ত হয়ে গেছে। আজ আমরা দুই দলের মধ্যে পাওয়ার ব্যাটিং বনাম আগুনে বোলিংয়ের একটা বড় প্রতিযোগিতা দেখতে পারি। অন্যদিকে দক্ষিণ আফ্রিকান পেসাররা কিন্তু খুবই ভয়ংকর ফর্মে আছেন। কাগিসো রাবাদা, লুঙ্গি এনগিডি, ইয়ানসেনদের দ্রুতগতির বল সামলানোর চাপ নিতে হবে ওয়ার্নার, মার্শ, স্মিথদের। অবশ্য তাদের দলের ব্যাটিং গভীরতা আছে। দলে পাওয়ার হিটারের ছড়াছড়ি। কীভাবে বড় ম্যাচে ব্যাটিং নৈপুণ্য দেখাতে হয়, বড় ইনিংস খেলতে হয়, সেটিও তাদের ভালো করেই জানা আছে। দুই দলের জন্য একটি ইতিবাচক দিক হলো- অস্ট্রেলিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকা দলে বেশি অলরাউন্ডার থাকায় ব্যাটিং ও বোলিংয়ে দুই দলই অনেক বৈচিত্র্যপূর্ণ। এই অলরাউন্ডাররা ম্যাচে গুরুত্বপূর্ণ সময়ে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারেন।

ইডেনের উইকেটে ব্যাটাররা বেশি সুবিধা আদায় করে নিতে পারেন। তবে পেসারদের জন্যও ভালো কিছু থাকবে বলে আশা করি। স্পিনাররা কার্যকর হতে পারেন সময়ের হিসাবে। তবে উইকেটের চেয়ে ম্যাচের দিন বৃষ্টির পূর্বাভাস থাকায় চিন্তা বাড়িয়ে দিয়েছে দুই দলকেই। ম্যাচের পরের দিন রিজার্ভ ডে থাকলেও সে দিনও বৃষ্টি বাধা হতে পারে। বৃষ্টি আইনে একবার বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে কপাল পুড়েছিল দক্ষিণ আফ্রিকা দলের। তবে এবার বৃষ্টির কারণে ম্যাচ ভেসে গেলেও ফাইনালে যাওয়ার সুযোগ থাকবে তাদের।

আজকের ম্যাচে টস গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। কারণ আগে ব্যাটিংয়ে নেমে সফলতার মুখ দেখছে প্রোটিয়ারা। রান তাড়া করতে গিয়ে তাদের দুর্বলতা চোখে পড়েছে। তাই টস জিতলে অস্ট্রেলিয়ানরা দক্ষিণ আফ্রিকাকে আগে ব্যাটিংয়ে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিতে পারে। তবে ব্যাটিং কিংবা বোলিংয়ের সফলতা কিন্তু নির্ভর করবে উইকেটের আচরণের ওপর। পরিস্থিতি অনুযায়ী খেলতে হবে দুই দলকে। পরিশেষে বলব, আজ ইডেনের মাঠে পাওয়ার ক্রিকেটের শক্তিশালী দুই দল- অস্ট্রেলিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকার মধ্যে ক্রিকেটের মহাযুদ্ধই হবে। দুই দলের মধ্যে সেরা একটি ম্যাচ হবে। এ ম্যাচে ক্রিকেটের নির্মল বিনোদন ‍উপভোগের সুযোগ পাবেন সবাই- এমনটাই প্রত্যাশা করছি।