আপডেট : ১৮ অক্টোবর, ২০২২ ০৮:৫৫
রাজধানীতে তীব্র গ্যাসসংকট, বিল নিলেও গ্যাস নেই

রাজধানীতে তীব্র গ্যাসসংকট, বিল নিলেও গ্যাস নেই

ছবি: সংগৃহীত

মহিউদ্দিন খান

তীব্র গ্যাসসংকটে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় চুলা জ্বলছে না। বেশ কিছুদিন ধরে চলা এ সংকট আরও তীব্র হয়েছে। সকাল ৬টার দিকে গ্যাস চলে যায় আর আসে রাত ১১টার পরে। ফিরে এলেও চুলা জ্বলে মিটমিট করে, যা রান্না করার মতো যথেষ্ট নয়। কোনো কোনো দিন একেবারেই আসে না। বাধ্য হয়ে মাটির চুলায় রান্নাবান্না করতে হচ্ছে রাজধানীর অনেক এলাকার মানুষকে।

কথা বলে জানা গেছে, অনেকে রাতে অথবা খুব ভোরে উঠে রান্না করছেন। কেউ কেউ নির্ভর করছেন রেস্তোরাঁর খাবারের ওপর। কেউ-বা আবার কিনেছেন সিলিন্ডার গ্যাস অথবা কেরোসিনের চুলা।

খোলাবাজারে সিলিন্ডার গ্যাসের দামও নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি। তারপরও মানুষ বাধ্য হয়ে কিনছেন গ্যাস সিলিন্ডার। গ্যাস ব্যবহার করতে না পারলেও মাসে মাসে গুনতে হচ্ছে গ্যাসের বিল। এতে করে সংকটের পাশাপাশি জীবনযাত্রার ব্যয়ও বাড়ছে।

এসব নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দারা। তারা বলছেন, বিল নিচ্ছে ঠিকই কিন্তু গ্যাস দিচ্ছে না।

সরেজমিনে রাজধানীর মুগদা, পুরান ঢাকা, ওয়ারী, গেন্ডারিয়া, যাত্রাবাড়ী, বনশ্রী, কমলাপুর, গোলাপবাগ, গোপীবাগ, মানিকনগর, বাসাবো, সবুজবাগ, খিলগাঁও, শনির আখড়া এলাকায় ঘুরে দেখা গেছে গ্যাসের সংকট তীব্র। সকাল থেকেই গ্যাস নেই এই এলাকাগুলোতে। এ ছাড়া ধানমন্ডি, বাড্ডা, মগবাজার, মিরপুর, সিদ্ধেশ্বরী, ইস্কাটন, কল্যাণপুর, মোহাম্মদপুর, আদাবর, মালিবাগ, খিলগাঁও, রামপুরা এসব এলাকায়ও গ্যাসের সংকট রয়েছে।

মুগদার বাসিন্দা জহির উদ্দিন দৈনিক বাংলাকে বলেন, সকাল ৬টায় গ্যাস যায় আর আসে রাত ১০টায়। তাও মিটমিট করে জ্বলতে থাকে। রাত ১২টায় যখন গ্যাস পাওয়া যায় তখন রান্না করলে গরমে ঘরে থাকা যায় না। কারণ, লোডশেডিং। আমার মনে হয়, সব সিলিন্ডার গ্যাস বিক্রির ধান্ধা।

ওয়ারী এলাকার চাকরিজীবী আল-আমিন আগে সকালে বাসা থেকে নাস্তা করে অফিস যেতেন। কিন্তু এখন না খেয়েই অফিসে যেতে হয়। তিনি দৈনিক বাংলাকে বলেন, আগে সকাল ৮টা বা ৯টা থেকে গ্যাস চলে যেত। তখন রান্না করে খাওয়া-দাওয়া শেষে অফিস যেতে পারতাম। এখন এই অবস্থাও নাই। দিনের ১২ ঘণ্টাই গ্যাস থাকে না কিন্তু বিল দিচ্ছি ঠিকই। আবার না দিলেও সমস্যা। লাইন কেটে দেবে।

খিলগাঁও এলাকার শানজানা রহমান বলেন, ‘আমার বাসাতে গ্যাস যায় সকালে আর রাতে আসে। তখন আর রান্না করার ইচ্ছা থাকে না। বাধ্য হয়ে কেরোসিনের চুলা কিনেছি। এমন এক অবস্থায় আছি দুপুরের খাওয়া খাই রাতে। কাউকে কিছু বলারও নাই। কিছু বললেই আবার বলবে সরকারের বিরুদ্ধে কথা বলছি। এসব এলাকায় ভাড়াটিয়া কমে গেছে। কেউ ভাড়া নিতে আসে না।

পুরান ঢাকার কলতাবাজারের বাসিন্দা বিবি খাতুন বলেন, আগে সকাল ৯-১০টা পর্যন্ত গ্যাস ভালোই থাকত, এরপর গ্যাসের চাপ কমে যেত। আবার মাঝে মাঝে বন্ধও হয়ে যেত। সন্ধ্যার দিকে ফের গ্যাস আসা শুরু করত। তখন গ্যাসের রুটিন মেনেই রান্নার কাজ সারতাম। কিন্তু এখন গ্যাসসংকট প্রতিদিনই।

তিতাস সূত্র থেকে জানা গেছে, ঢাকা ও আশপাশের এলাকায় ১৯০ কোটি ঘনফুট গ্যাসের চাহিদা থাকলেও বর্তমানে সরবরাহ হচ্ছে ১৫০ কোটি ঘনফুট। ফলে রাজধানীতে গ্যাসের এমন সংকট। রাজধানী ও তার আশপাশে গ্যাস সরবরাহের দায়িত্বে নিয়োজিত তিতাস চাহিদামতো গ্যাস সরবরাহ করতে পারছে না। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শীতে এ সংকট আরও বাড়তে পারে।

তিতাসের জরুরি গ্যাস নিয়ন্ত্রণ বিভাগের প্রকৗশলী মো. শাখাওয়াত হোসেন দৈনিক বাংলাকে বলেন, ‘এটা জাতীয় সমস্যা। এখানে আমাদের কিছু করার নেই। কবে গ্যাস সরবরাহ স্বাভাবিক হবে তাও আমি জানি না। পরিস্থিতির উন্নতি না হওয়া পর্যন্ত এভাবেই চলতে হবে।’

তিতাস গ্যাসের ব্যবস্থাপক মির্জা মাহবুব হোসেন দৈনিক বাংলাকে বলেন, ‘আমার নিজের বাসা ধানমন্ডির ভূতের গলিতে। আমি নিজেই এই সমস্যায় ভুগছি। আমাদের এখন সাপ্লাই কম, তাই সমস্যা হচ্ছে। আপাতত এর কোনো সমাধান নাই।’