মাহফুজ নান্টু, কুমিল্লা
‘পণ্য নিয়ে টাকা দেয় না, দিনের পর দিন দোকানিদের পেছনে ঘুরতে হয়। আবার টার্গেট পূরণ না হলে কোম্পানির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছ থেকে কটু কথা শুনতে হতো। এভাবে প্রায় আট বছর। পরে অতিষ্ঠ হয়ে ডিস্ট্রিবিউটরশিপ (পরিবেশকের চাকরি) বাদ দিয়ে দিই। শুরু করি ফলের বাগান ও শাকসবজি চাষ। শুরুর বছর একটু কষ্ট হয়। এখন খরচ বাদ দিয়ে নিজের বাগান থেকে প্রতি মাসে তিন লাখ টাকা আয় করি।’
কথাগুলো বলছিলেন কুমিল্লা কোটবাড়ী এলাকার আবুল কালাম আজাদ। লালমাই পাহাড় ঘেঁষেই তার বাড়ি। একটি ভোগ্যপণ্যের ডিস্ট্রিবিউটর (সরবরাহকারী) ছিলেন তিনি। সেখান থেকে এখন পুরোদস্তুর কৃষি উদ্যোক্তা। নিজের ফলের বাগান থেকে বছরে প্রায় ৩৫ লাখ টাকা আয় করেন তিনি। ২০২৩ সাল নাগাদ তার বাগান থেকে আয়ের পরিমাণ কোটি টাকায় দাঁড়াবে বলে আশাবাদী তিনি।
আবুল কালাম আজাদ জানান, লালমাই পাহাড়ে ৩৬ একর জমি লিজ নিয়েছেন। তার মধ্যে প্রায় ২৪০ শতক জমি নিজের। এসব জমিতে তিনি বছরজুড়ে চাষ করেন শাকসবজি। চলতি বছর কচুরমুখী বিক্রি করে খরচ বাদে লাভ উঠেছে পাঁচ লাখ টাকা। তার বাগানে আছে লেবু, মাল্টা, কলা, ড্রাগন, কাসাবা, কাজু বাদাম, কফি, আনারস, আম, পেঁপে, সফেদা ও কাঁঠাল। এগুলোর মধ্যে অমৃত কলা ও বন পেয়ারা ব্যতিক্রমী সংগ্রহ।
আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘প্রথমে চায়না লেবুর চাষ করি। প্রথম বছর পাঁচ লাখ টাকার লেবু বিক্রি করি। পরে যোগ করি মাল্টা। চলতি বছর পাঁচ টন মাল্টা বিক্রি করেছি। এ ছাড়া কচুর ছড়ার (কচুরমুখী) চাষ করছি। নতুন করে ড্রাগন, কাজু বাদাম ও কফির চারা লাগিয়েছি। এখন ফলের মধ্যে প্রতি মাসে শুধু লেবু বিক্রি করি ১০ হাজার টাকার। এ ছাড়া দূর-দূরান্ত থেকে পাইকাররা এসে পেঁপে, লেবু, কাসাবা ও মাল্টা নিয়ে যান।’
সরেজমিনে দেখা যায়, পাহাড়ের ঢালুতে সবুজের সমারোহ। একপাশে কাসাবা, আরেক পাশে কলার বাগান, তার পাশে দীর্ঘ লেবুর বাগান। লেবুর বাগানে প্রবেশ করতেই নাকে আসে তাজা ফলের ঘ্রাণ। নির্জন পাহাড়ে পাখির ডাক আর সবুজের মেলা বসে সেখানে যেন স্বর্গীয় পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। বাগানে শ্রমিকদের কেউ গাছের পরিচর্যা করছেন, কেউ-বা ফল সংগ্রহ করে বাঁশের ঝুড়িতে রাখছেন। সেখানে আবুল কালাম নিজেও কাজ করছেন। পাশাপাশি শ্রমিকদের দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন।
কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হাবিবুল বাশার চৌধুরী বলেন, ‘আবুল কালাম একজন তরুণ কৃষি উদ্যোক্তা। তিনি বাগান করে শুধু নিজের ভাগ্য পরিবর্তন করেননি, তার বাগানে কাজ করে এক ডজন মানুষও তাদের পরিবার নিয়ে ভালো আছেন। আমরা তার সার্বক্ষণিক খোঁজখবর রাখছি।’
কুমিল্লা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মিজানুর রহমান বলেন, ‘আমরা যে বাণিজ্যিক কৃষি বা কৃষির আধুনিকায়নের কথা বলি, আবুল কালাম আজাদ সে কাজটাই করে দেখাচ্ছেন। এ বছর তিনি শুধু লেবু বিক্রি করেছেন ১২ লাখ টাকার। গত বছর কৃষিপণ্য বিক্রি করে প্রায় ৩৫ লাখ টাকা লাভ করেছেন। সামনের বছরগুলোতে তার আয় আরও বাড়বে। তার মতো অন্য শিক্ষিত তরুণরাও কৃষিতে এগিয়ে এলে দেশের অর্থনৈতিক উন্নতি হবে।’
১৯৮/সি, তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮
©দৈনিক বাংলা