ষষ্ঠ দফায় ইসরায়েলি কারাগার থেকে আরও ৩০ ফিলিস্তিনি মুক্তি পেয়েছেন। চলমান যুদ্ধবিরতির অংশ হিসেবে তাদের মুক্তি দেয়া হয়েছে। এর আগে আরও ১৬ জন জিম্মিকে মুক্তি দিয়েছে হামাস। এ জিম্মিদের মধ্যে ১০ জন ইসরায়েলি, তিনজন ইসরায়েলি বংশোদ্ভূত জার্মান, দুজন ইসরায়েলি বংশোদ্ভূত মার্কিন এবং একজন নেদারল্যান্ডসের নাগরিক। এদিকে পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি বাহিনীর অভিযানে এক শিশুসহ চার ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে।
ইসরায়েলি কারা কর্তৃপক্ষের বরাত দিয়ে বিবিসি জানিয়েছে, বর্ধিত যুদ্ধবিরতি চুক্তির অধীনে চূড়ান্ত পর্যায়ে ৩০ ফিলিস্তিনি বন্দিকে বুধবার রাতে মুক্ত করা হয়েছে। এক বিবৃতিতে ইসরায়েলি কারাগার পরিষেবা বলেছে, ‘রাতে ৩০ জন পুরুষ ও নারী নিরাপত্তা বন্দিকে বেশ কয়েকটি কারাগার থেকে মুক্তি দেয়া হয়েছে।
এএফপি বলছে, আহেদ তামিমি নামে এক তরুণীও রয়েছেন সবশেষ মুক্তিপ্রাপ্তদের মধ্যে। ২২ বছর বয়সী এ তরুণী ইসরায়েলি দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে ফিলিস্তিনিদের প্রতিরোধের প্রধান ব্যক্তিত্ব হয়ে উঠেছিলেন। ইনস্টাগ্রাম দেয়া এক পোস্টের জন্য তাকে আটক করা হয়েছিল। ইসরায়েলের দাবি, ওই ইনস্টাগ্রাম পোস্টে আহেদ তামিমি ইসরায়েলিদের গণহত্যার বিষয়টি তুলে ধরার পাশাপাশি হিটলারের কথা উল্লেখ করেছেন। অবশ্য তার পরিবার সে সময় এমন পোস্ট দেয়ার কথা অস্বীকার করেছিল।
নারিমানে (তামিমির মা) বলেন, সোশ্যাল মিডিয়ায় অ্যাকাউন্ট খোলার প্রক্রিয়াই জানেন না আহেদ।
এর আগে ইসরায়েল জানায়, গাজা থেকে আরও ১০ ইসরায়েলি বন্দি এবং চার থাই নাগরিককে বুধবার সন্ধ্যায় মুক্তি দেয়া হয়েছে। মুক্তি পাওয়ার পর তারা ইসরায়েলি ভূখণ্ডে ফিরে গেছেন। এ ছাড়া বুধবার মুক্তি পাওয়া দুই রাশিয়ান-ইসরায়েলি নারীও ইসরায়েলে ফিরে এসেছেন।
পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি বাহিনীর অভিযানে চার ফিলিস্তিনি নিহত
ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীর অঞ্চলের জেনিন শহরে ইসরায়েলি বাহিনীর অভিযানে আট বছর বয়সী এক শিশু এবং ১৫ বছর বয়সী কিশোরসহ মোট চারজন নিহত হয়েছে। বাকি দুজন ইরানের সমর্থনপুষ্ট গোষ্ঠী ইসলামিক জিহাদের কমান্ডার। বুধবার এ ঘটনা ঘটেছে বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে ফিলিস্তিনের রাষ্ট্রায়ত্ত সংবাদমাধ্যম ওয়াফা নিউজ।
গতকাল বৃহস্পতিবার ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে দেয়া এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে একই তথ্য।
ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘জেনিন শহরে দখলদার বাহিনীর অভিযানে আদম সামের আল ঘৌল (৮), আবুল আল ওয়াফা (১৫) এবং মুহম্মদ জামাল জুবাইদি ও ওয়াসিম জিয়াদ হানোন নামের দুজন ফিলিস্তিনির মৃত্যু হয়েছে।’
এ প্রসঙ্গে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে আইডিএফের এক কর্মকর্তা রয়টার্সকে বলেন, ‘বুধবার সকালে জেনিনের একটি শরণার্থী শিবিরে নিয়মিত টহলের জন্য গিয়েছিল একটি আইডিএফের সৈন্যদল। টহলের সময় তাদের লক্ষ্য করে শিবিরের ভেতর থেকে বিস্ফোরক নিক্ষেপ করা হয়। এ হামলার জবাবে ইসরায়েলি সেনারাও গুলি ছোড়ে এবং সে সময় মৃত্যু হয় এ চারজনের।’
ওয়াফা নিউজ জানিয়েছে, আট বছরের মিশু আদম সামের ঘৌল এবং ১৫ বছরের কিশোর আবু আল ওয়াফার মরদেহ পাওয়া গেলেও জুবাইদি এবং হানোনের মরদেহ ফেরত দেয়নি ইসরায়েলি সেনারা।
আইডিএফের কর্মকর্তা জানিয়েছেন, জুবাইদি ও হানোন উভয়ই ইসলামিক জিহাদের কমান্ডার এবং জেনিনের যে শরণার্থী শিবিরে এ ঘটনা ঘটেছে, সেই শিবিরের একজন নেতা জুবাইদি।
ফিলিস্তিনের অন্য অংশ গাজা উপত্যকায় বর্তমানে অস্থায়ী যুদ্ধবিরতি চলছে। উপত্যকার নিয়ন্ত্রণকারী গোষ্ঠী হামাসের সঙ্গে দেড় মাসেরও বেশি সময় ধরে চলা যুদ্ধের পর এ বিরতি দিয়েছে হামাস এবং আইডিএফ।
সর্বশেষ ঘোষণা অনুযায়ী, গত ২৫ নভেম্বর থেকে শুরু হওয়া এ যুদ্ধবিরতির মেয়াদ শেষ হবে শুক্রবার মধ্যরাতে। গত ৭ অক্টোবর ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকার নিয়ন্ত্রণকারী গোষ্ঠী হামাসের যোদ্ধারা ইসরায়েলের ভূখণ্ডে অতর্কিত হামলা চালানোর পর ওই দিন থেকেই গাজায় অভিযান শুরু করে ইসরায়েলি বিমান বাহিনী। পরে ১৬ অক্টোবর থেকে অভিযানে যোগ দেয় স্থল বাহিনী।
ইসরায়েলি বাহিনীর টানা দেড় মাসের অভিযানে কার্যত ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে গাজা উপত্যকা, নিহত হয়েছেন ১৫ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি। নিহত এ ফিলিস্তিনিদের মধ্যে নারী ও শিশুর সংখ্যা ১০ হাজারেরও বেশি। অন্যদিকে, হামাস যোদ্ধাদের হামলায় ইসরায়েলে নিহত হয়েছিলেন ১ হাজার ২০০ জন ইসরায়েলি ও অন্যান্য দেশের নাগরিক।
যুদ্ধে ইসরায়েলের ২ হাজারের বেশি সেনা আহত
ফিলিস্তিনের সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের সঙ্গে গত ৭ অক্টোবর থেকে ইসরায়েলের যুদ্ধ শুরু হয়। ওইদিন ইসরায়েলের বিভিন্ন অবৈধ বসতি লক্ষ্য করে হামলা চালায় হামাস। দেড় মাসেরও বেশি সময় ধরে চলা এ যুদ্ধে এখন পর্যন্ত দুই হাজারের বেশি সেনা আহত হয়েছে বলে জানিয়েছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী। গতকাল বৃহস্পতিবার এক প্রতিবেদনে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরা জানিয়েছে, ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে, যুদ্ধে তাদের ২ হাজার ৫ জন সেনা আহত হয়েছেন। এরমধ্যে গুরুতর আহত ২৮৭ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়েছে। অন্যদিকে ৭ অক্টোবর থেকে এখন পর্যন্ত অন্তত ৪০০ ইসরায়েলি সেনা নিহত হয়েছেন। যাদের বেশির ভাগ যুদ্ধের প্রথম দিন (৭ অক্টোবর) হামাসের অতর্কিত হামলায় প্রাণ হারান। আর বাকিরা গাজার ভেতর যুদ্ধক্ষেত্রে নিহত হয়েছেন।
১৯৮/সি, তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮
©দৈনিক বাংলা