দৈনিক বাংলা ডেস্ক
ইউক্রেনের রুশ অধিকৃত চার অঞ্চল দোনেৎস্ক, লুহানস্ক, খেরসন ও জাপোরিঝিয়ায় সামরিক আইন জারি হয়েছে। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন গতকাল বুধবার এ ঘোষণা দেন। খবর এএফপির।
টেলিভিশনে সম্প্রচারিত জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের এক বৈঠকে গতকাল পুতিন বলেন, ‘রুশ ফেডারেশনের চারটি অঞ্চলে সামরিক আইন চালু করার জন্য আমি একটি ফরমানে সাক্ষর করেছি।’
এরপর ক্রেমলিন ওই ফরমানটি প্রকাশ করে এবং আজ বৃহস্পতিবার সকাল থেকে সামরিক আইন চালু হবে বলে জ জানায়। মস্কোর দখল করা বিভিন্ন ভূখণ্ডে ইউক্রেনীয় বাহিনী গত কয়েক মাস ধরে লড়াইয়ে বেশ কিছু সাফল্য পেয়েছে। এমন পরিস্থিতির মধ্যে পুতিন সামরিক আইন জারি করলেন। ৭০ বছর বয়সী রুশ নেতা বলেন, কিয়েভের শাসকেরা জনগণের ইচ্ছার স্বীকৃতি দিতে রাজি নন। তারা সমঝোতা আলোচনার প্রস্তাবগুলোও ফিরিয়ে দেন। পরিণামে অস্ত্রের লড়াই অব্যাহত রয়েছে, অসামরিক লোকজন প্রাণ হারাচ্ছে।
পুতিন আরও বলেন, ‘ইউক্রেনীয়রা সন্ত্রাসবাদী কৌশল প্রয়োগ করছে। তারা আমাদের ভূখণ্ডে নাশকতার জন্য বিভিন্ন গোষ্ঠীকে পাঠাচ্ছে। ক্রিমিয়া সেতুকে নিশানা করেছে। এরপর আমরা আরও কয়েকটি হামলা নস্যাৎ করে দিয়েছি। আমাদের পারমাণবিক কেন্দ্রেও তারা হামলার চেষ্টা করেছে।’
খেরসনে চাপে পড়ার কথা স্বীকার রাশিয়ার
ইউক্রেনের বিরুদ্ধে চলমান যুদ্ধে রুশ বাহিনীর নতুন অধিনায়ক জেনারেল সের্গেই সুরুভিকিন স্বীকার করেছেন, খেরসন অঞ্চলের পরিস্থিতি খুবই কঠিন হয়ে পড়েছে।
জেনারেল সুরুভিকিন অবিলম্বে স্থানীয় বাসিন্দাদের খেরসন ছেড়ে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। আর রুশ সেনা কর্মকর্তার এমন বিরল স্বীকারোক্তি পর মস্কোর নিয়োগ করা প্রশাসনিক কর্মকর্তাসহ স্থানীয় বাসিন্দাদের খেরসন থেকে সরিয়ে নেয়ার কার্যক্রম শুরু হয়েছে।
রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে গত সোমবার এক সাক্ষাৎকারে খেরসন পরিস্থিতি তুলে ধরেন রুশ জেনারেল সুরুভিকিন। তিনি বলেন, ইউক্রেনীয় সেনারা হিমার্স রকেট দিয়ে শহরের অবকাঠামো ও ভবনে হামলা করছে। তারা রুশ বাহিনীর অবস্থান লক্ষ্য করেও রকেট নিক্ষেপ করছে। খেরসনের বাসিন্দাদের নিরাপদে শহর ছেড়ে যাওয়ার ব্যাপারে রাশিয়ার সেনাসদস্যরা সব রকম সহায়তা দেবে।
সুরুভিকিন আরও বলেন, ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় কুপিয়ানস্ক ও লাইমান শহরে এবং মাইকোলাইভ ও ক্রিভি রিহ শহরের মধ্যবর্তী উত্তর খেরসন এলাকায় রুশ বাহিনীর অবস্থানে ক্রমাগত হামলা হচ্ছে। বিশেষ সামরিক অভিযানের পুরো এলাকাজুড়েই উত্তেজনা বিরাজ করছে। বিশেষত খেরসনের অবস্থা বেশ কঠিন।
ইউক্রেনে সামরিক অভিযানে নেতৃত্ব দিতে গত ১০ অক্টোবর রাশিয়ার বিমানবাহিনীর জেনারেল সের্গেই সুরুভিকিনকে নিয়োগ দেয় মস্কো। বিবিসি জানায়, খেরসনে রাশিয়া নিযুক্ত প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের আঞ্চলিক প্রধান শহর থেকে দানিপার নদীর পূর্বাংশে সরিয়ে নেয়া হচ্ছে। মস্কোর নিযুক্ত খেরসন অঞ্চলের প্রধান ভ্লাদিমির সালেদো গতকাল বুধবার বলেন, প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের পাশাপাশি স্থানীয় লোকজনকে সরিয়ে নেয়া হচ্ছে। দিনিপ্রো নদীর পশ্চিম তীরের চারটি ছোট শহর থেকে আনুমানিক ৫০ হাজার থেকে ৬০ হাজার মানুষকে সরিয়ে নেয়া হবে।
রাশিয়ার টেলিভিশনে সম্প্রচারিত ভিডিও ফুটেজে দিনিপ্রো নদীর তীরে মানুষের ভিড় দেখা যায়। তারা সেখান নৌকার জন্য অপেক্ষায় থাকেন। তবে কত মানুষ এলাকা ছাড়ার জন্য নদীতীরে ভিড় করেছে তা সুনির্দিষ্টভাবে জানা যায়নি। বিবিসি জানায়, দখলকৃত ভূখণ্ড থেকে জোর করে বেসামরিক নাগরিকদের স্থানাস্তর বা নির্বাসন একটি যুদ্ধাপরাধ হিসেবে বিবেচিত হয়।
বির্তকিত গণভোটে ইউক্রেনের খেরসন শহরসহ চার অঞ্চলকে সম্প্রতি রাশিয়ার মূল ভূখণ্ডে সংযুক্ত করার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেয় মস্কো। তবে কিয়েভ ও পশ্চিমা বিশ্ব রাশিয়ার এমন পদক্ষেপ মেনে নেয়নি। গত সেপ্টেম্বর থেকে পশ্চিমা অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত ইউক্রেনীয় বাহিনীর পাল্টা অভিযানে অনেকটা বেকায়দায় পড়ে রুশ বাহিনী।
আল-জাজিরা জানায়, খেরসন অঞ্চলে গত কয়েক সপ্তাহে রুশ বাহিনী ২০ থেকে ৩০ কিলোমিটার পিছু হটেছে এবং তারা ইউক্রেনকে বিভক্ত করা ২২০০ কিলোমিটার দীর্ঘ দিনিপ্রো নদীর পশ্চিম পাড়ে আটকা পড়ে যাওয়ার ঝুঁকিতে আছে।
মস্কোকে ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন দেবে ইরান
রাশিয়াকে ভূমি থেকে ভূমিতে নিক্ষেপণযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্রসহ আরও ড্রোন সরবরাহ করবে ইরান। ইরানের দুই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং দুই ইরানি কূটনীতিক বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে এ কথা জানান। ইরানের এমন পদক্ষেপ যুক্তরাষ্ট্রসহ কিয়েভের মিত্র দেশগুলোকে আরও খেপিয়ে তুলবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
রাশিয়া সম্প্রতি ইরানে তৈরি কামিকাজে নামের ড্রোন নিয়ে ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভসহ অন্য শহরগুলোতে হামলা চালাচ্ছে। কিয়েভের অভিযোগ, ইরান এসব ড্রোন মস্কোর কাছে বিক্রি করেছে।
ইরানকে হুঁশিয়ার করে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) মন্ত্রীরা গত সোমবারই বলেছিলেন, ইউক্রেন যুদ্ধে তেহরানের সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পাওয়া গেলে আলাদাভাবে তাদের ওপর নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হবে। এমন পরিস্থিতিতে তেহরানের সঙ্গে মস্কোর ক্ষেপণাস্ত্র ও অস্ত্র চুক্তির কথা জানান ইরানি কর্মকর্তারা। তারা জানান, গত ৬ অক্টোবর দুই পক্ষের মধ্যে এই অস্ত্র চুক্তি হয়। সে সময় ইরানের ফার্স্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মোখবার, ইরানের প্রভাবশালী রেভল্যুশনারি গার্ড বাহিনীর দুই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং সুপ্রিম ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিলের এক কর্মকর্তা অস্ত্র চুক্তি নিয়ে কথা বলতে মস্কো সফর করেন।
রাশিয়ার সামরিক দেউলিয়াত্ব প্রকাশ হচ্ছে: জেলেনস্কি
ইরানের নির্মিত ড্রোন দিয়ে কিয়েভসহ বিভিন্ন শহরে হামলা চালিয়ে রাশিয়ার সামরিক ও রাজনৈতিক দেউলিয়াত্ব ফুটে উঠেছে বলে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি মন্তব্য করেছেন। এক ভিডিও বার্তায় তিনি গত মঙ্গলবার বলেন, ইরানের কাছে এ ধরনের অস্ত্র-সহায়তা চেয়ে রাশিয়া মূলত তার সামরিক ও রাজনৈতিক দেউলিয়াত্ব প্রকাশ করেছে। এমন সহায়তা নিয়ে কৌশলগতভাবে রাশিয়ার কোনো উপকার হবে না। এ ধরনের কর্মকাণ্ড বিশ্বের কাছে আরও প্রমাণ করবে যে রাশিয়া ধ্বংসের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে এবং সন্ত্রাসী কার্যকলাপে তারা সহযোগীদের জড়ানোর চেষ্টা করছে।
১৯৮/সি, তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮
©দৈনিক বাংলা