সিলেট-৫ আসনে এবার আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন দলটির সিলেট মহানগর শাখার সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মাসুক উদ্দিন আহমদ। নৌকার টিকিট পেলেও স্বস্তিতে নেই মাসুক। তার দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছেন ধর্মভিত্তিক সংগঠন আনজুমানে আল ইসলাহর সভাপতি মাওলানা হুছামউদ্দীন চৌধুরী। এ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন তিনি। মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণার পর মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গেও সাক্ষাৎ করে এসেছেন।
হুছামউদ্দীন চৌধুরী প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে আসার পর এ আসনে ভোটের হিসাব-নিকাশ নিয়ে নানামুখী আলোচনা চলছে। শেষ মুহূর্তে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে তাকে ছাড় দেওয়া হতে পারে বলেও আলোচনা চলছে। যদিও মাসুক উদ্দিন কিংবা হুছামউদ্দীন ছাড়ের বিষয়টি অস্বীকার করেছেন।
এদিকে সিলেট-৫ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন যুবলীগের সাবেক প্রেসিডিয়াম সদস্য ও বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা সীমান্তিকের প্রতিষ্ঠাতা বীর মুক্তিযোদ্ধা ড. আহমদ আল কবির। এলাকায় তারও নিজস্ব ভোট ব্যাংক রয়েছে। ফলে মাসুক উদ্দিনের ভোটে ভাগ বসাতে পারেন আহমদ আল কবিরও।
সিলেট-৫ আসনে এ তিনজন ছাড়া আরও প্রার্থী হয়েছেন জাতীয় পার্টির শাব্বীর আহমদ, বাংলাদেশ মুসলিম লীগের (বিএমএল) মো. খায়রুল ইসলাম, তৃণমূল বিএনপির কুতুব উদ্দিন শিকদার ও বাংলাদেশ কংগ্রেসের মো. বদরুল আলম।
জোটবদ্ধভাবে নির্বাচন না হলে এ আসনে ত্রিমুখী লড়াই হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে মূল লড়াই হতে পারে মাসুক উদ্দিন, আহমদ আল কবির এবং হুছামউদ্দীনের মধ্যে। তবে আওয়ামী লীগ থেকে হুছামউদ্দীনকে ছাড় দেয়া হলে পাল্টে যাবে এ হিসাব।
মাওলানা হুছামউদ্দীন চৌধুরীর বাবা ফুলতলী হুজুর হিসেবে পরিচিত আল্লামা আব্দুল লতিফ চৌধুরী। সিলেটজুড়ে রয়েছে তার অসংখ্য ভক্ত ও মুরিদ। আব্দুল লতিফ চৌধুরী গড়ে তোলেন ধর্মভিত্তিক সংগঠন আনজুমানে আল ইসলাহ। তার মৃত্যুর পর ছেলে হুছামউদ্দীনই এ সংগঠনটি পরিচালনা করছেন। তিনি ইসলামপন্থি নেতাদের মধ্যে আওয়ামী ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত। সিলেট-৫ আসনের অন্তর্ভুক্ত জকিগঞ্জে তার বাড়ি। ফলে হুছামউদ্দীনকে শুরু থেকেই এখানে শক্তিশালী প্রার্থী হিসেবে ধরা হচ্ছে।
মঙ্গলবার রাতে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তার সাক্ষাতের পর এখানে আওয়ামী লীগের ছাড়ের বিষয়টিও আলোচিত হচ্ছে। সাক্ষাতের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাই তাকে ডেকে পাঠান বলে জানান মাওলানা হুছামউদ্দীন চৌধুরী।
সাক্ষাৎ প্রসঙ্গে হুছামউদ্দীন চৌধুরী বলেন, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে গত বছর ১২ জানুয়ারি নতুন কারিকুলাম ও পাঠ্যপুস্তক থেকে ইসলামি বিশ্বাসবিরোধী বিষয়গুলো বাদ দিয়ে তা সংশোধন, মাদ্রাসার জন্য স্বতন্ত্র কারিকুলাম প্রণয়নসহ ১০ দফা দাবি তুলে ধরেছিলাম। এবারও সেসব বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এ সময় প্রধানমন্ত্রী সিলেট-৫ থেকে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করায় আমাকে সাধুবাদ জানিয়েছেন। সেই সঙ্গে সিলেট বিভাগের অন্যান্য আসনে আওয়ামী লীগকে সহযোগিতার আহ্বান জানিয়েছেন।
সিলেট-৫ আসন নিয়ে কোনো আলোচনা হয়েছে কি না এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী আমাকে আশ্বস্ত করেছেন নির্বাচন অবাধ, নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু হবে। এ ছাড়া আমাকে সার্বিক সহযোগিতার আশ্বাসও দিয়েছেন। দীর্ঘ আলোচনা হয়েছে। সবকিছু এ মুহূর্তে বলা সম্ভব নয়। তবে ছাড়ের বিষয়ে কোনো আলাপ হয়নি।’
সিলেট-৫ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য পূবালী ব্যাংক এবং রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির সাবেক চেয়ারম্যান হাফিজ আহমদ মজুমদার। বয়সজনিত কারণে এবার প্রার্থী হননি এ আওয়ামী লীগ নেতা। তবে স্থানীয় আওয়ামী লীগে তার নিজস্ব বলয় রয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, কানাইঘাট ও জকিগঞ্জ উপজেলা নিয়ে গঠিত সিলেট-৫ আসনে আওয়ামী লীগ ত্রিধারায় বিভক্ত। এসব বলয়ের নেতৃত্বে রয়েছেন হাফিজ আহমদ মজুমদার, মাসুক উদ্দিন আহমদ এবং আহমদ আল কবির। এ কারণে এবার আওয়ামী লীগের ভোট ভাগ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এর সুবিধা পেতে পারেন হুছামউদ্দীন। তবে এ সূত্র জানিয়েছে, জকিগঞ্জে হুছামউদ্দীনের শক্ত অবস্থান থাকলেও কানাঘাট উপজেলায় তার তেমন ভোট নেই।
তবে ছাড় বা দলে বিভক্তির কথা অস্বীকার করে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মাসুক উদ্দিন বলেন, ‘নেত্রী আমাকে নৌকা দিয়ে এলাকায় পাঠিয়েছেন। জোট বা ছাড়ের বিষয়ে আমাকে কিছু বলেননি। এ ছাড়া জকিগঞ্জ-কানাইঘাটে আওয়ামী লীগও ঐক্যবদ্ধ। নৌকা মার্কাকে বিজয়ী করে আমরা প্রধানমন্ত্রীকে এ আসনটি উপহার দিতে চাই।’
১৯৮/সি, তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮
©দৈনিক বাংলা