আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রিটার্নিং কর্মকর্তাদের দেওয়া মনোনয়নপত্র গ্রহণ ও বাতিলের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশনে (ইসি) আজ শনিবার আপিলের শেষ দিনে ১৩০ জনসহ আবেদন করেছেন। এ নিয়ে মোট পাঁচ দিনে ৫৬১ জন প্রার্থী আপিল আবেদন করলেন।
আজ শনিবার নির্বাচন কমিশন সচিব মো. জাহাংগীর আলম গণমাধ্যমকে এই তথ্য জানান।
তিনি বলেন, রিটার্নিং কর্মকর্তাদের দেওয়া সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশনে গত পাঁচ দিনে আপিল আবেদন পড়েছে ৫৬১টি। শেষ দিন ১৩০টি আবেদন জমা পড়েছে। আগামীকাল রোববার থেকে আগামী ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত শুনানি করে কমিশন সিদ্ধান্ত দেবেন। তবে কোন দলের কতটি আবেদন পড়েছে তা পরে জানা যাবে বলে তিনি জানান।
এর আগে, প্রথম দিনে ৪২ জন, দ্বিতীয় দিনে ১৪১ জন, তৃতীয় দিন ১৫৫ জন, চতুর্থ দিনে ৯৩ জন আপিল করেছেন। এ নিয়ে পাঁচদিনে মোট আপিলকারীর সংখ্যা দাঁড়ায় ৫৬১ জনে।
ঢাকার আগারগাঁও নির্বাচন ভবনের অস্থায়ী ক্যাম্পের ১০টি বুথে প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে শুরু হয়ে বিকাল ৪টা পর্যন্ত এসব আপিল গ্রহণ করে ইসি। বুথগুলোর দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের তথ্যমতে জানা যায়, রংপুর অঞ্চলের বুথে ৫৫টি, খুলনা অঞ্চলের বুথে ৭১টি, বরিশাল অঞ্চলের বুথে ২৪টি, ময়মনসিংহ অঞ্চলের বুথে ৬৬টি, ফরিদপুর অঞ্চলের বুথে ২৩টি, চট্টগ্রাম অঞ্চলের বুথে ৪৭টি, ঢাকা অঞ্চলের বুথে ৮৮টি, কুমিল্লা অঞ্চলের বুথে ৯০টি, সিলেট অঞ্চলের বুথে ২৩টি এবং রাজশাহী অঞ্চলের বুথে ৭৪ টি আপিল জমা পড়েছে।
ইসির অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ জানিয়েছেন, ৩০০ আসনে মনোনয়নপত্র দাখিল হয়েছিল দুই হাজার ৭১৬টি। এর মধ্যে বাছাইয়ের সময় রিটার্নিং কর্মকর্তারা বাতিল করেছেন ৭৩১টি, যা মোট দাখিলকৃত মনোনয়নপত্রের ২৬ দশমিক ৯২ শতাংশ বা ২৭ শতাংশ। আর বৈধ হয়েছে এক হাজার ৯৮৫টি মনোনয়নপত্র, যা দাখিলকৃত মনোনয়নপত্রের ৭৩ দশমিক ৮ শতাংশ বা ৭৩ শতাংশ।
বৈধ প্রার্থীরাও চ্যালেঞ্জের মুখে
জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বৈধ ঘোষিত ১১ প্রার্থীর প্রার্থিতা বাতিল চেয়ে নির্বাচন কমিশনে আপিল জমা পড়েছে বলে ইসি সূত্রে জানা গেছে। তাদের মধ্যে আওয়ামী লীগের পাঁচজন, জাতীয় পার্টির দুজন এবং স্বতন্ত্র চারজন রয়েছেন।
নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা গেছে, ফরিদপুর-৩ (সদর) আসনের আওয়ামী লীগের মনোনীত নৌকার প্রার্থী শামীম হকের প্রার্থিতা বাতিল চেয়ে নির্বাচন কমিশনে আবেদন করেছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী ব্যবসায়ী আবদুল কাদের আজাদ (একে আজাদ)। আপিলে অভিযোগ করা হয় শামীম হক দ্বৈত নাগরিক। তিনি নেদারল্যান্ডসের পাসপোর্টধারী। দ্বৈত নাগরিকত্বের অভিযোগ এনে সিলেট-৩ আসনের আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী হাবিবুর রহমানের প্রার্থিতা বাতিল চেয়ে আপিল দায়ের করেছেন একই আসনের জাতীয় পার্টির প্রার্থী মোহাম্মদ আতিকুর রহমান। আতিকুর রহমান রিটার্নিং কর্মকর্তার বাছাইয়ে বৈধ প্রার্থী।
এছাড়াও এবার বরিশাল-৪ (মেহেন্দীগঞ্জ-হিজলা) আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী পংকজ নাথের প্রার্থিতা বাতিল চেয়ে আপিল করেছেন শাম্মী আহমেদ। গতকাল শনিবার দুপুরে শাম্মী আহম্মেদ তাঁর আইনজীবীর মাধ্যমে পংকজ নাথের মনোনয়নপত্রের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে এই আপিল করেন। এতে পংকজের বিরুদ্ধে হলফনামায় তথ্য গোপন করার অভিযোগ এনেছেন তিনি। শাম্মী আহমেদ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক। তিনি বরিশাল-৪ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন। তবে অস্ট্রেলিয়ার নাগরিকত্ব থাকায় রিটার্নিং কর্মকর্তা তাঁর মনোনয়নপত্র বাতিল করেছেন। শাম্মী আহমেদ রিটার্নিং কর্মকর্তার ওই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশনে আপিল করেছেন।
অন্যদিকে ফৌজদারি মামলা থেকে অব্যাহতির প্রমাণ দেখাতে ব্যর্থ হওয়ায় কিশোরগঞ্জ-৩ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী নাসিরুল ইসলাম খানের মনোনয়নপত্র বাতিল করেছে রিটার্নিং কর্মকর্তা। রিটার্নিং কর্মকর্তার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে নিজের প্রার্থিতা ফেরত পেতে ইসিতে আপিল করেন আওয়ামী লীগ মনোনীত এ প্রার্থী। নিজের প্রার্থিতা ফিরে পেতে আপিলের পাশাপাশি তিনি একই আসনের বৈধ প্রার্থী জাতীয় পার্টির প্রার্থী মো. মুজিবুল হক চুন্নুর প্রার্থিতা বাতিলের আবেদন করেছেন। আপিলে তিনি চুন্নুর বিরুদ্ধে ঋণখেলাপের অভিযোগ এনেছেন।
কুমিল্লা-৩ আসনের বৈধ প্রার্থী আওয়ামী লীগ মনোনীত ইউসুফ আবদুল্লাহ হারুনের প্রার্থিতা বাতিল চেয়ে ইসিতে আবেদন করেছেন জেলার মুরাদনগর উপজেলার বাসিন্দা বসির আহম্মদ।
কক্সবাজার-১ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী জাফর আলমের প্রার্থিতা বাতিল চেয়ে ইসিতে আপিল করেছেন চকরিয়া পৌরসভার বাসিন্দা আব্দুল আউয়াল মামুন। জাফর আলম কক্সবাজার-১ আসনের বর্তমান সংসদ-সদস্য। আওয়ামী লীগ দলীয় এ এমপি মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। পটুয়াখালী-১ আসনের জাতীয় পার্টির প্রার্থী রুহুল আমিন হাওলাদারের প্রার্থিতা বাতিল চেয়ে ইসিতে আপিল করেছেন এনপিপি প্রার্থী মো. নজরুল ইসলাম।
ময়মনসিংহ-৮ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী মাহমুদুল হাসান সুমনের প্রার্থিতা বাতিল চেয়ে আপিল করেছেন একই আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী বদরুল আলম প্রদীপ। রিটার্নিং কর্মকর্তার বাছাইয়ে এই দুজনের প্রার্থিতা বৈধ ঘোষণা হয়েছে। একই আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী মাহমুদুল হাসানের মনোনয়নপত্রের বৈধতার বিরুদ্ধে আপিল করেন জাতীয় পার্টির বর্তমান সংসদ সদস্য ফখরুল ইমাম। অন্যদিকে যশোর-৪ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী এনামুল হকের মনোনয়নপত্রের বৈধতার বিরুদ্ধে আপিল করেছেন ওই আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য রনজিত কুমার রায়।
বরিশাল-৫ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহর মনোনয়নপত্রের বৈধতার বিরুদ্ধে আপিল করেছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী জাহিদ ফারুকের মনোনয়নপত্র সমর্থনকারী কে বি এস আহমেদ।
প্রসঙ্গত, আগামীকাল রোববার থেকে দায়ের করা আপিলগুলো পর্যায়ক্রমে শুনানি হবে। আগামী ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে সব আপিল নিষ্পত্তি করবে নির্বাচন কমিশন। ১৭ ডিসেম্বর প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ তারিখ। ১৮ ডিসেম্বর প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হবে। তখন থেকে নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা শুরু হবে, যা চলবে আগামী ২০২৪ সালের ৫ জানুয়ারি সকাল ৮টা পর্যন্ত।
উল্লেখ্য, আগামী ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠেয় দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য মনোনয়নপত্র দাখিল হয়েছে ২ হাজার ৭১৬টি। এর মধ্যে বাছাইয়ে ৭৩১ জনের মনোনয়নপত্র বাতিল হয়। সেই ৭৩১ জন থেকে ৫৬১ জন প্রার্থিতা ফিরে পেতে আপিলগুলো করেছেন। নির্বাচন কমিশন বৈধ প্রার্থী ঘোষণা করেছে ১ হাজার ৯৮৫ জন।
১৯৮/সি, তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮
©দৈনিক বাংলা