আপডেট : ১২ ডিসেম্বর, ২০২৩ ২২:০১
অতিরিক্ত দামের আশায় অপরিপক্ব পেঁয়াজ তুলছে কৃষক
মইনুল হক মৃধা, রাজবাড়ী

অতিরিক্ত দামের আশায় অপরিপক্ব পেঁয়াজ তুলছে কৃষক

বাজারে পেঁয়াজের মূল্য আকাশছোঁয়া। নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে ইচ্ছামতো দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে সিন্ডিকেটের সদস্যরা। ফলে খোলা বাজারের বিক্রেতারাও বাধ্য হচ্ছেন দাম বাড়াতে। আর অসহায় ক্রেতা বাধ্য হচ্ছে বেশি দামে সেই পেঁয়াজ কিনতে।

এ অবস্থায় বেশি দাম পেতে কৃষকও ক্ষেতের অপরিপক্ব পেঁয়াজ তুলে ফেলছেন বিক্রির জন্য। এতে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা কমে যাওয়ার আশঙ্কা করছে স্থানীয় কৃষি বিভাগ।

রাজবাড়ী জেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে এবং সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, হঠাৎ পেঁয়াজের দাম দ্বিগুণ হওয়ায় ক্রেতাদের চোখে-মুখে হতাশার ছাপ পড়েছে। কিন্তু একই সময় বিক্রেতা এবং কৃষকদের মুখে হাসি ফুটেছে। কখনো ক্রেতা-বিক্রেতার মধ্যে বাক-বিতর্ক সৃষ্টি হচ্ছে। তবে পর্দার আড়ালে থেকে যাচ্ছে সিন্ডিকেটের গডফাদার ও সদস্যদের নাম।

এদিকে বাজারে স্বাভাবিকের তুলনায় দ্বিগুণ দাম হওয়ায় অনেক কৃষক সময়ের চেয়ে অনেক আগে পেঁয়াজ উঠিয়ে বাজারে বিক্রি করছেন। এতে কৃষক ভালো মূল্য পেলেও উৎপাদন কমে যাচ্ছে।

গোয়ালন্দ উপজেলার উজানচর ইউনিয়নের মো. ইউসুফ খাঁ নামের এক কৃষক বলেন, প্রতিবছর পেঁয়াজ-রসুনে লোকসান হয়। এবার বাজারে বেশি দাম হওয়ায় আমরা পেঁয়াজ উঠাতে শুরু করেছি। কারণ পরে দাম কমে যেতে পারে।

পেঁয়াজ অসময়ে উঠালে উৎপাদন কমে যাবে এমন প্রশ্নে এই কৃষক বলেন, ‘পরে আমরা ন্যায্যমূল্য পাব, এই নিশ্চয়তা কে দেবে? পেঁয়াজের সঠিক দামের নিশ্চয়তা পেলে অসময়ে পেঁয়াজ উঠাতাম না। বাজারে বেশি দাম থাকায় লাভের আশায় ১৫ দিন আগে পেঁয়াজ উঠাতে শুরু করেছি।’

হাসিনা নামের আরেক নারী কৃষক বলেন, তিনি ৩ বিঘা জমিতে পেঁয়াজ লাগিয়েছেন। প্রতি বিঘা জমিতে ৫৫-৬০ হাজার টাকা ব্যয় হয়েছে। বর্তমান দাম আর কিছুদিন থাকলে কৃষক এবার কিছুটা লাভবান হবেন। তিনি বলেন, ‘পেঁয়াজ ভালো করে পাকলে বিঘাপ্রতি ৭০-৮০ মণ হবে। এখন উঠালে বিঘাপ্রতি ৫০-৬০ মণ হবে। তবে এই দাম তখন আমরা পাব না। তাই আমরা অগ্রিম পেঁয়াজ উঠিয়ে বাজারে বিক্রি করছি।’

মো. হাসেম শেখ নামের এক কৃষক বলেন, ‘বর্তমান বাজারে প্রতি মণ পেঁয়াজ চার থেকে সাড়ে চার হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এমন সংবাদে এক বিঘা জমির পেঁয়াজ উঠিয়ে বিক্রি করেছি। তিনি বলেন, এখনো ৩ বিঘা জমিতে পেঁয়াজ রয়েছে। এমন দাম থাকলে সব পেঁয়াজ উঠিয়ে বিক্রি করব।’

এই কৃষক আরও বলেন, পেঁয়াজ নিয়ে কারসাজি এর আগেও হয়েছে। সিন্ডিকেট না ধরে কৃষকের কাছে এলে কী হবে? পেঁয়াজের কারসাজি বন্ধ করতে হলে অবশ্যই সিন্ডিকেট ধ্বংস করতে হবে। আইনের আওতায় সিন্ডিকেট গডফাদারদের নিয়ে আসতে হবে।

গোয়ালন্দ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. খোকন উজ্জামান বলেন, আর ১০-১৫ দিন পর পেঁয়াজগুলো কৃষকরা তুললে তারা আরও বিঘাপ্রতি ১-১৫ মণ বেশি পেত, কিন্তু তারা লাভের আশায় এখনই পেঁয়াজ তুলে বাজারজাত করছে। অসময়ে অপরিপক্ব পেঁয়াজ উঠালে কিছুটা উৎপাদন কমে গেলেও কৃষক সরাসরি বেশি দাম পাবে। আবার এই জমিতে পেঁয়াজ উঠিয়ে হালি পেঁয়াজ অথবা ভুট্টা লাগাতে পারবে।

তিনি আরও বলেন, শুধু পেঁয়াজ নয়, যেকোনো ফসলে বেশি দাম পেলে কৃষক-চাষি উৎসাহ পাবে। তবে সিন্ডিকেট নয়, সরাসরি কৃষক দাম পেলেই উৎপাদন বেশি হবে।