৩ এপ্রিল, ২০১৬। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনাল। সে ম্যাচ শেষে ধারাভাষ্যকার ইয়ান বিশপ বলছিলেন, ‘কার্লোস ব্রেথওয়েট, রিমেম্বার দ্য নেম’। কারণটা হয়তো ক্রিকেটভক্তদের সবারই জানা। তবুও একটু মনে করিয়ে দিই। সেই ম্যাচে ইনিংসের অন্তিম লগ্নে ব্রেথওয়েট বেন স্টোকসের বলে হাঁকিয়েছিলেন গুনে গুনে চার ছক্কা। ওয়েস্ট ইন্ডিজকে করিয়েছিলেন চ্যাম্পিয়ন। যার কারণে সেদিন স্টোকস হয়েছিলেন ইংল্যান্ডের খলনায়ক। কেঁদেছিলেন অঝোরে। কাঁদবেনই না বা কেন? বহু বছর ইংল্যান্ডের সামনে বিশ্বজয়ের স্বপ্ন ছিল আরেকবার। কারণ এর আগে বৈশ্বিক ট্রফি বলতে শুধু ২০১০-এর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ট্রফিই ছিল তাদের কাছে। তবে স্টোকস ২০১৬-এর ফাইনালের শোকে ভেঙে পড়েননি। শোককে পরিণত করেছেন শক্তিতে।
নিউজিল্যান্ডে জন্ম নেয়া স্টোকসের বাবা ছিলেন সে দেশেরই রাগবি খেলোয়াড়। তবে স্টোকস রাগবি খেলোয়াড় হিসেবে নয়, নিজের পরিচয় বানিয়েছেন একজন ক্রিকেটার হিসেবেই, তাও ইংল্যান্ডের হয়ে।
২০০৯ অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে ভারতের বিপক্ষে সেঞ্চুরি করে সর্বপ্রথম নজর কেড়েছিলেন স্টোকস। এরপর ২০১১ সালে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রবেশ করেন তিনি। আয়ারল্যান্ড এবং ভারতের বিপক্ষে পেয়েছিলেন বেশ কিছু ম্যাচ খেলার সুযোগ। কিন্তু নিজের জাত চেনাতে পারেননি। পরবর্তী সময়ে দুই বছর পর আবারও ইংল্যান্ড দলে ডাক পান স্টোকস, অজিদের বিপক্ষে একটি ওয়ানডে সিরিজে।
সেই সিরিজের চতুর্থ ওয়ানডেতে বল হাতে পাঁচ উইকেট এবং ব্যাট হাতেও ছোট ছোট ক্যামিও খেলার সুবাদে সুযোগ পান ২০১৩-১৪ অ্যাশেজে, করেন আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরি। এরপর থেকেই ইংল্যান্ড দলের নিয়মিত সদস্য।
ব্যাটিং এবং বোলিং, উভয় বিভাগেই সমান তালে পারফর্ম করা স্টোকস ২০১৬ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ইংল্যান্ডকে না জেতাতে পারলেও থ্রি লায়ন্সদের ঠিকই এনে দিয়েছিলেন তাদের ক্রিকেট ইতিহাসের প্রথম ওয়ানডে বিশ্বকাপ ট্রফি। ২০১৯ বিশ্বকাপে স্টোকস ব্যাট হাতে ৬৬.৪২ গড়ে করেছিলেন ৪৬৩, পাশাপাশি বল হাতেও নিয়েছিলেন ৭ উইকেট। আর ফাইনালে তার ৯৮ বলে ৯৪ রানের বীরত্বগাথাও তো সবারই মনে আছে। সেদিনও স্টোকস কেঁদেছিলেন, তবে দুঃখে নয় প্রাপ্তির খুশিতে। ২০২২ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেও পুরো টুর্নামেন্টে তিনি ছিলেন ফ্লপ, তবে ফাইনালে নিজের জাত চেনাতে ভুল করেননি। চাপে পড়ে থাকা ইংল্যান্ডকে শিরোপা এনে দিয়েছেন দারুণ এক ফিফটি করে।
বর্তমানে স্টোকস ইংল্যান্ড টেস্ট দলের অধিনায়ক। তার নেতৃত্বে ইংল্যান্ড দল খেলছে আগ্রাসী ক্রিকেট। যা বর্তমান টেস্ট ক্রিকেটকেই অনেকখানি বদলে দিয়েছে।
১৯৮/সি, তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮
©দৈনিক বাংলা