যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের ব্রিফিংয়ে এখন নিয়মিত চর্চা হচ্ছে বাংলাদেশকে নিয়ে। বাংলাদেশ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো ভাবনা থাকুক বা না থাকুক দেশটিতে অবস্থানরত প্রবাসী বাংলাদেশি সাংবাদিকদের একটি অংশ নিয়মিত মার্কিন মুখপাত্রকে খুঁচিয়ে ‘নেতিবাচক’ মন্তব্য বের করার চেষ্টা করছেন। বাংলাদেশে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে এই চর্চা মারাত্মকভাবে বেড়ে গেছে। তবে যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় গত বুধবার এমন প্রশ্নকর্তাদের হতাশ করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলার।
এদিন ‘পক্ষভুক্ত হিসেবে অভিযুক্ত’ প্রবাসী বাংলাদেশি সাংবাদিকরা মিলারের কাছে জানতে চান, ৭ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে নতুন নিষেধাজ্ঞার কোনো তথ্য আছে কি না।
এর জবাবে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র তাদের জানান, এখন (বুধবার) ঘোষণা করার মতো কোনো নতুন নিষেধাজ্ঞার তথ্য তার কাছে নেই। এ ছাড়া নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার আগে সে বিষয়ে কিছু না বলাটা যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘদিনের চর্চা।
প্রসঙ্গত বাংলাদেশে দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে ভিসানীতি নিয়ে কঠোর বার্তা দিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র। সে নিষেধাজ্ঞা কাদের ওপর কার্যকর হতে পারে, তার দীর্ঘ তালিকাও ঘোষণা করে দেশটি। তবে বিরোধী দলগুলো অবরোধ হরতাল কর্মসূচি দেওয়ার পর ‘জ্বালাও পোড়াওয়ের ঘটনা বাড়ায় এ বিষয়ে নিম্নস্বরে নেমে এসেছে যুক্তরাষ্ট্র।
মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের গতকালের ব্রিফিংয়ে বাংলাদেশ নিয়ে আরও কিছু প্রশ্ন করেন এসব সাংবাদিক। একটি প্রশ্ন ছিল বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে বিদেশে চিকিৎসার বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র অনুরোধ জানাবে কি না সে বিষয়ে।
তবে এ প্রশ্নে মিলার কোনো উত্তর দেননি।
আরেক প্রশ্নে বলা হয়, ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আসন্ন নির্বাচনের প্রেক্ষাপটে যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের বিরোধী দলগুলোর বিরুদ্ধে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে ভুয়া খবর, ভুয়া ভিডিও-সংবলিত একটি পরিকল্পিত প্রচারণা শুরু করেছে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার। এই প্রতিবেদনের বিষয়ে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের অবস্থান কী?
জবাবে মিলার বলেন, বাংলাদেশে নির্বাচন ঘিরে ‘ডিপফেক’-সংক্রান্ত উদ্বেগজনক প্রতিবেদনটি যুক্তরাষ্ট্রের নজরে এসেছে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ব্যবহার করে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করা এবং অসাধু সুবিধা নেওয়ার ক্ষেত্রে বিশ্বজুড়ে একটি উদ্বেগজনক প্রবণতা লক্ষ করা যাচ্ছে।
আরেক প্রশ্নে বলা হয়, ১৮ ডিসেম্বর থেকে নির্বাচনী প্রচার ছাড়া রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ করা হয়েছে। বিরোধী নেতা-কর্মীদের গণগ্রেপ্তার করে সরকার পুরো দেশকে কারাগারে পরিণত করছে। এমন অবস্থায় ছয়টি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন বাংলাদেশে মৌলিক অধিকার রক্ষায় জনগণের পাশে দাঁড়াতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। অন্যদিকে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রী দাবি করছেন, তারা যুক্তরাষ্ট্রকেও ম্যানেজ করতে পারবেন। নতুন সরকার গঠনের পর যুক্তরাষ্ট্র সমর্থন দেবে বলে উল্লেখ করেন তিনি। এ বিষয়ে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্রের প্রতিক্রিয়া কী?
জবাবে মিলার বলেন, বিরোধী দলের হাজার হাজার নেতা-কর্মীকে গণগ্রেপ্তার ও কারাগারে নির্যাতনের খবরে তারা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। তারা সব পক্ষকে সংযম প্রদর্শন ও সহিংসতা এড়ানোর আহ্বান জানান। সবাই সহিংসতা বা প্রতিশোধের ভয় ছাড়াই যাতে প্রাক্-নির্বাচন ও নির্বাচনকালীন কার্যক্রমে অবাধে অংশ নিতে পারে, তেমন পরিবেশ তৈরির জন্য সব অংশীজনের সঙ্গে কাজ করতে তারা বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানান। এটা তাদের বিশ্বাস, একটি সুস্থ গণতন্ত্রে ভিন্নমতের স্বাধীনতা, সংলাপ ও আলোচনা সংকটের সমাধান দেয়।
১৯৮/সি, তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮
©দৈনিক বাংলা