যুক্তরাজ্য বা ব্রিটেন বরাবরই ধনী দেশ হিসেবে পরিচিত। তবে চলমান আর্থিক সংকটে সেখানেও লোকে পছন্দমতো খেতে পারছে না। জীবনযাত্রার খরচ আজকাল এতটাই বেড়েছে যে, লাখো মানুষ তাদের খাবারের তালিকা থেকে একাধিক উপাদান বাদ দিচ্ছেন, খাবারের পরিমাণও কমিয়ে ফেলছেন। ভোক্তাদের একটি সংগঠন গতকাল বৃহস্পতিবার এ কথা জানিয়েছে। খবর এএফপির।
মূল্যস্ফীতির প্রভাবে খাদ্যপণ্যসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম লাগামছাড়া পর্যায়ে পৌঁছে যাচ্ছে। যুক্তরাজ্যে মূল্যস্ফীতি গত মাসে ১০ শতাংশের বেশি ছিল। জ্বালানি তেলের দাম সীমিত রাখার যে নীতি ছিল, সরকার তা থেকে সরে আসায় বহু মানুষ জ্বালানি সংকটে পড়তে পারে বলেও ‘হুইচ?’ নামের ভোক্তা সংগঠনটি হুঁশিয়ারি দিয়েছে।
অর্থনৈতিক সংকট পরিস্থিতি সামাল দিতে প্রধানমন্ত্রী লিজ ট্রাসের সরকার ইতিমধ্যে নানামুখী চাপে হিমশিম দশায় পড়েছে। তিন হাজার মানুষের ওপর পরিচালিত এক জরিপের ভিত্তিতে ‘হুইচ?’ জানায়, তাদের জরিপ অনুযায়ী যুক্তরাজ্যের অর্ধেক বাসিন্দা তাদের খাবারের পরিমাণ বা উপাদানে নিয়ন্ত্রণ আরোপ করছেন।
জরিপের তথ্য অনুযায়ী এই অনুপাতের মানুষের জন্য স্বাস্থ্যকর খাবার জোগাড় করা কঠিন হয়ে পড়েছে। সংকট শুরুর আগে সেটা তাদের জন্য এতটা কষ্টসাধ্য ছিল না। এখন প্রায় ৮০ শতাংশ মানুষ মনে করেন, তারা আর্থিকভাবে সমস্যায় আছেন।
‘হুইচ?’-এর খাদ্যনীতি বিষয়ক প্রধান সু ডেভিস বলেন, জীবনযাত্রার ব্যয়বৃদ্ধির সংকটের বিপর্যয়কর প্রভাবে লাখো মানুষ খাওয়া-দাওয়া নিয়ন্ত্রণ করছে কিংবা খাওয়ার টেবিলে স্বাস্থ্যসম্মত খাবারের উপাদানগুলো হাজির করতে গিয়ে মুশকিলে পড়ছে।
সংগঠনটি পৃথক এক বিবৃতিতে গত বুধবার বলেছে, যুক্তরাজ্য সরকার জ্বালানির দাম স্থির রাখার সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসার যে ঘোষণা চলতি সপ্তাহে দিয়েছে, তাতে লাখো মানুষ নিজেদের বাড়িঘর ঠিকমতো উষ্ণ রাখতে পারবে না।
কনজারভেটিভ পার্টির সরকার কয়েক দফা আর্থিক নীতিমালা পাল্টানোর পর নতুন অর্থমন্ত্রী জেরেমি হান্ট গত সোমবার বলেছেন, তিনি জ্বালানির দাম ২০২৪ সাল পর্যন্ত স্থিতিশীল রাখার বিষয়ে আগের সরকারি সিদ্ধান্ত বহাল রাখবেন না। ফলে আগামী এপ্রিল থেকেই সরকারের নতুন সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হবে।
জরিপকারী সংগঠনটির নীতিমালা ও আইনি সুরক্ষাবিষয়ক প্রধান রোসিও কোনচা বলেন, সবার জন্য জ্বালানি সহায়তা সরকার এপ্রিল থেকে বন্ধ করে দিলে যুক্তরাজ্যজুড়ে লাখ লাখ বাড়িঘরের বাসিন্দারা শুধু যে বড় আর্থিক ঝুঁকিতে পড়বেন, তা নয়। তারা জ্বালানি-দারিদ্র্যের কবলেও পড়বেন। সরকারের অবশ্যই স্পষ্ট করে বলে দিতে হবে তারা আগামী দিনগুলোয় কীভাবে এসব বিপদাপন্ন মানুষের পাশে দাঁড়াবে। জিনিসপত্রের দাম অবিশ্বাস্য রকম বেড়ে চলেছে। এমন অবস্থায় ভোক্তাদের ঠাণ্ডায় মরতে বসার অবস্থায় ঠেলে দেয়া হবে না- এমন নিশ্চয়তা দরকার।
অভ্যন্তরীণ জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির নানামুখী প্রভাব থেকে ভোক্তাদের সুরক্ষার কারণ দেখিয়ে সরকার জ্বালানির মূল্য স্থির রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। ইউরোপে জ্বালানির বড় জোগানদার রাশিয়া গত ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরু করার পর থেকে সংকট ক্রমশ বাড়তে শুরু করেছে। ব্রিটেনে ইতিমধ্যে মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে শ্রমিক আন্দোলন হয়েছে। তারা চলমান মূল্যস্ফীতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে পারছেন না বলেই মজুরি বাড়াতে আন্দোলনে নেমেছেন। শ্রমিক সংগঠনগুলোর নেতা ফ্রান্সেস ওগ্র্যাডি সম্প্রতি এক বিবৃতিতে প্রধানমন্ত্রী লিজ ট্রাসের পদত্যাগ দাবি করেছেন।
১৯৮/সি, তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮
©দৈনিক বাংলা