নারায়ণগঞ্জ-৫ (বন্দর-সদর) আসন আওয়ামী লীগ, স্বতন্ত্র ও সমামনা দলগুলোর শক্তিশালী প্রার্থী না থাকায় রাজনৈতিক উত্তাপ নেই ভোটের মাঠে। তৃণমূল বিএনপি, ইসলামী ফ্রন্ট বাংলাদেশের, জাকের পার্টি ও বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির মনোনীত প্রার্থী থাকলেও জাতীয় পার্টির মনোনীত প্রার্থী ছাড়া অন্য কোনো দলের অস্তিত্ব নেই এখানে। ফলে রাজনীতির মাঠে যেমন উত্তাপ নেই তেমন আগ্রহ নেই ভোটারদের মাঝেও।
সূত্র জানায়, শুধু সাধারণ মানুষ নন, আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতারাও মনে করছেন জাতীয় রাজনীতিতে নারায়ণগঞ্জের রাজনীতির বেশ কদর রয়েছে। কিন্তু নির্বাচনের সময় এখানকার আওয়ামী লীগ নেতাদের কোনো পাত্তাই দেন না কেন্দ্রীয় নেতারা। বিশেষ করে নারায়ণগঞ্জ সদর-বন্দরবাসীর এই আসনটি আওয়ামী লীগের কাছে সব সময়ই অবহেলিত থাকে বলে মনে করেন তারা। যদিও আওয়ামী লীগের সভানেত্রী থেকে শুরু করে কেন্দ্রীয় নেতারা বরাবরই বলে থাকেন, আওয়ামী লীগের জন্মস্থান এই নারায়ণগঞ্জ। সেই নারায়ণগঞ্জের এই আসনে গত ৩৭ বছরের মধ্যে মাত্র একবার নৌকা বিজয়ী হয়েছে। এবার নৌকার কোনো প্রার্থীই নেই নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে। ফলে এই আসনে নেতা-কর্মীরা হতাশ হয়ে পড়েছেন।
দেশ স্বাধীন হওয়ার অর্ধশতাব্দীর ইতিহাসে নারায়ণগঞ্জ সদরের এই আসনে মাত্র দুইবার নির্বাচিত হয়েছেন মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব প্রদানকারী ও প্রবীণ রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ, যা স্থানীয় আওয়ামী লীগের জন্য খুবই হতাশাব্যাঞ্জক বলে মনে করেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ সমর্থকরা। নারায়ণগঞ্জ আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী পরিবারখ্যাত ওসমান পরিবারের দ্বিতীয় প্রজন্মের সদস্য এ কে এম শামসুজ্জোহার হাত ধরে ১৯৭৩ সালে অনুষ্ঠিত প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে এই আসন থেকে নির্বাচিত হন। এরপর ওসমান পরিবারেরই আরেক সদস্য এ কে এম নাসিম ওসমানের হাত ধরে ১৯৮৬ সালের নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে জাতীয় পার্টি থেকে প্রথম নির্বাচিত হন। এরপর মাত্র একবার এস এম আকরাম ১৯৯৬ সালে এই আসনে নৌকায় বিজয়ী হন। পরে এখানকার আওয়ামী লীগের ভাগ্যে আসনটি জয় করা আর সম্ভব হয়নি। অথচ ১৯৮৬ সালের পর আওয়ামী লীগ চারবার ক্ষমতায় আসে। কিন্তু জাতীয় নির্বাচন এলেই নারায়ণগঞ্জ আওয়ামী লীগের নেতারা কেন্দ্রের কাছে কোনো পাত্তা পান না বলে অভিযোগ করেন স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা। ২০১৪ সালের নির্বাচনের পর থেকেই নারায়ণগঞ্জ-৫ আসন থেকে আওয়ামী লীগের নৌকায় প্রার্থী দেওয়ার দাবি ওঠে। এর মধ্যে বিভিন্ন ইউপি নির্বাচনেও নেতৃত্ব হারাতে থাকে আওয়ামী লীগ।
এবারের দ্বাদশ নির্বাচনে এই আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়ে ছিলেন ছয়জন। তারা হলেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল হাই, মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন, আওয়ামী লীগের জাতীয় পরিষদের সদস্য অ্যাডভোকেট আনিসুর রহমান দিপু, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবু হাসনাত মো. শহীদ বাদল (ভিপি বাদল), মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জি এম আরাফাত ও মহানগর যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক আলী রেজা উজ্জল। কিন্তু আওয়ামী লীগ প্রথম থেকেই এবারের নির্বাচনে এই আসনে কোনো প্রার্থী দেয়নি।
স্থানীয় রাজনীতিকদের ধারণা, সেলিম ওসমানকে সুবিধা দিতেই আওয়ামী লীগ এই আসনে প্রার্থী দেয়নি। তবে এবারের নির্বাচনে নিজ দলীয় প্রতিদ্বন্দ্বীসহ সব আসনেই আওয়ামী লীগের শক্তিশালী নেতাদের স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে উৎসাহিত করা হয়। কিন্তু নারায়ণগঞ্জ-৫ আসন থেকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হতে চাওয়া এই নেতারা কেউ সেই সুযোগ নিতেও সাহস করেননি।
স্থানীয় আওয়ামী লীগ সমর্থকদের অভিযোগ, যেহেতু এবার স্বতন্ত্র প্রার্থীদের বিষয়ে দলীয়ভাবে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হবে না। তাই আওয়ামী লীগ নেতাদের সুযোগ ছিল স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের একবার দলীয় প্রার্থীর পক্ষে কাজ করে নেতা-কর্মীদের চাঙা রাখা। এখানকার নতুন প্রজন্মের কারও এখনো নৌকা প্রতীকের নির্বাচনে ভোট দেওয়ার সৌভাগ্য হয়নি। তাই এবারের নির্বাচনে একজনও যদি সাহস করে আওয়ামী লীগের কেউ স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচনে অংশ নিত, তবে এই আসনের অবহেলিত ও নিষ্পেষিত আওয়ামী লীগের কর্মীসহ নতুন প্রজন্ম নৌকায় ভোট দেওয়ার সুযোগ পেত বলে মনে করেন তারা।
এবার নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে কাউকে নৌকার মনোনয়ন না দেওয়ায় এ কে এম সেলিম ওসমানকে জাতীয় পার্টি থেকে মনোনয়ন দেয়া হয়। তার বিপরীতে রয়েছেন তৃণমূল বিএনপির মনোনীত প্রার্থী আব্দুল হামিদ ভাষানী, ইসলামী ফ্রন্ট বাংলাদেশের এ এম এম একরামুল হক, জাকের পার্টির মোর্শেদ হাসান এবং বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির ছামসুল ইসলাম।
১৯৮/সি, তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮
©দৈনিক বাংলা