আপডেট : ২৬ ডিসেম্বর, ২০২৩ ১৮:৩৮
শিল্পকলা একাডেমির আয়োজনে দেশব্যাপী গণজাগরণের ঐতিহ্যবাহী নাট্য উৎসব শুরু
নিজস্ব প্রতিবেদক

শিল্পকলা একাডেমির আয়োজনে দেশব্যাপী গণজাগরণের ঐতিহ্যবাহী নাট্য উৎসব শুরু

শুরু হয়েছে গণজাগরণের ঐতিহ্যবাহী নাট্য উৎসব-২০২৩। এই আয়োজনে লোকসংস্কৃতির বিলুপ্তপ্রায় ঐতিহ্যবাহী নাট্য উৎসব সারা দেশে তৃণমূল পর্যায়ে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। চলবে ৩০ ডিসেম্বর পর্যন্ত । ‘শিল্প সংস্কৃতিঋদ্ধ সৃজনশীল মানবিক বাংলাদেশ গড়ার অভিলক্ষ্যে ‘অপ্রতিরোধ্য অগ্রযাত্রায় শিল্প নিয়ে পৌঁছে যাবো আমরা উন্নতির শিখরে’ এই প্রতিপাদ্য নিয়ে ‘গণজাগরণের শিল্প আন্দোলন’ কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি।

মঙ্গলবার (২৬ ডিসেম্বর) পরিবেশনা আঙ্গিক ‘পালাটিয়া : আপেল মাতাজির পূর্ণা কুটুম’ পরিবেশন করেন দিনাজপুরের শিল্পী প্রতিভা পালাটিয়া। ‘শিল্প সংস্কৃতিঋদ্ধ সৃজনশীল মানবিক বাংলাদেশ গড়ার অভিলক্ষ্যে ‘অপ্রতিরোধ্য অগ্রযাত্রায় শিল্প নিয়ে পৌঁছে যাব আমরা উন্নতির শিখরে’ প্রতিপাদ্য নিয়ে ‘গণজাগরণের শিল্প আন্দোলন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি।

জাতীয় নাট্যশালার এক্সপেরিমেন্টাল থিয়েটার হলসহ জেলাসমূহে গণজাগরণের ঐতিহ্যবাহী নাট্য উৎসব অনুষ্ঠিত হয়েছে। এর মধ্যে নাটোর মুক্তমঞ্চ ধুপইলে পরিবেশন করেন পালাদল- মাদার পীরের দল ‘হাঁট কারে বাদশা বিবি কুসুম’। রাজশাহী বাঘা উপজেলার দিঘা হাইস্কুল মাঠে মাথল গম্ভীরা দল পরিবেশন করে পালা ‘হারগে রাজশাহী’। কুষ্টিয়া ধরমপুর ইউ.পি/বাহিরচর ইউ.পিতে হিসনা লোকনাট্য দল পরিবশন করে ‘পদ্মার নাচন’। নীলফামারী জেলার সপ্তসুর পরিবেশন করে ‘উন্নয়নের গান’। ঠাকুরগাঁও জেলার ডা. শচীন্দ্রনাথ রায় লোকনাট্য গোষ্ঠী পরিবেশন করে ‘নতুন রুপে বাংলাদেশ (ধামের গান)’। শেরপুর জেলার বাংলাদেশ কোচ সংস্কৃতি সংরক্ষণ ও উন্নয়ন কেন্দ্র পরিবেশন করে ‘বিহু’। ঝালকাঠি জেলার শ্রী শ্রী মা মনসা সম্প্রদায় পরিবেশন করে ‘অধিবাস পালা’ এবং জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে কুমিল্লার আলমগীর সরকারের দল পরিবেশন করে ‘জারিগান ও কবিগান’।

আগামীকাল ২৭ ডিসেম্বর দেশব্যাপী জেলাসমূহে গণজাগরণের ঐতিহ্যবাহী নাট্য উৎসব অনুষ্ঠিত হবে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায়, জেলার আধুনিক আলকাপ দল পরিবেশন করবে ‘আলকাপ’। পটুয়াখালী জেলা দল পায়রা নাট্যগোষ্ঠী পরিবেশন করবে ‘কাসেম মালার প্রেম’। নরসিংদী জেলা দল গাজীর পট গায়ন দল পরিবশন করবে, ‘গাজীর পট’। লালমনিরহাট জেলার ভাই ভাই পদ্মপুরান দল পরিবেশন করবে ‘লক্ষিন্দরের বিবাহ’। হবিগঞ্জ জেলার চুনারুঘাটের ধামালি দল পরিবেশন করবে ‘ধামালি কথা’। জেলা শিল্পকলা একাডেমি মুন্সিগঞ্জ এ নজরুল ইসলাম বয়াতি ও তার দল পরিবেশন করবে পালা ‘গুরু-শিষ্য’। খুলনা জেলার ঐশি মানিক যাত্রা দল পরিবেশন করবে ‘তাইজুল বাদশা’। গাইবান্ধা জেলার ফজলু বয়াতি ও তার দল পরিবেশন করবে পালা ‘সত্যপীরের গান (জারি আঙ্গিক)’। সাতক্ষীরা জেলার লিপিকা জারি গানের দল পরিবেশন করবে ‘গাজী কালু চম্পাবতী’ এবং খাগড়াছড়ি জেলার ‘খাগড়াছড়ি সৃজন থিয়েটার’ দল পরিবেশন করবে পালা ‘হাচুক মাইকাতাল (পাহাড়ের নবান্ন সম্প্রীতি পালা)’।

অঞ্চলভিত্তিক বিশেষ একটি নাট্য আঙ্গিকের পরিবেশনায় প্রাধান্য থাকায় একই নাট্য আঙ্গিক একাধিক জেলার জন্য নির্বাচিত হয়েছে এবং তা পরিবেশিত হবে। তবে পরিবেশনা ভিন্ন দলের, ভিন্ন পালাকারের বা গায়েনের। বাংলাদেশের শিল্পচর্চায় সবচাইতে প্রান্তিক পর্যায়ে অবস্থান এই ঐতিহ্যবাহী নাটকের শিল্পীদের। এই পরিবেশনাগুলোই গ্রামীন জনপদের বিনোদন ও শিক্ষার প্রধানতম উপকরণ।

ইতোপূর্বে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি এই প্রান্তিক পর্যায়ের শিল্পদের সম্পৃক্ত করে নানা কর্মসূচি বাস্তবয়ন করেছে। এবারের আয়োজনটি বৃহৎ পরিসরে। এবারের এই আয়োজনে রয়েছে- কিচ্ছাপালা, বিচারগান, জারীগান, যাত্রা, আলকাপ, গম্ভিরা, পালাটিয়া, ধামাইল, ধাপের গান, অষ্টক, গাজীরগীত, ইমাম যাত্রা, পটের গান, মাদার পীরের গান, বেহুলার নাচাড়ী, সংযাত্রা, মঙ্গলচন্ডীর গান, রয়নী, কুশান, সত্যপীরের গান, ঝাপানগান, পদ্মার নাচন, পদ্মাপূরাণ, মনসামঙ্গল, নটপালা, কীত্তন, ধামের গান, ধুয়াগান, পুতুলনাচ, হাইল্ল্যাগীত, ক্ষুদ্রনৃগোষ্ঠী পরিবেশনা (গেংঘুলি, পাংখু, হাচুক মাইকাতাল, বিহু), ভাসানযাত্রা ইত্যাদি ধরনের নাট্য আঙ্গিক।

সংস্কৃতির সবচাইতে শক্তিশালী মাধ্যম লোকসংস্কৃতি ; যার অন্যতম একটি শাখা ঐতিহ্যবাহী নাটক। সার্বিক উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় সর্বসাধারণকে সম্পৃক্ত ও অনুপ্রাণীত করতে বিষয়ভিত্তিক ঐতিহ্যবাহী নাটকের প্রদর্শনী অত্যন্ত কার্যকরী কৌশল। সারা বিশ্বে যা উন্নয়নের জন্য নাটকের একটি অন্যতম বাহন হিসাবে চর্চিত হয়ে আসছে। বাংলাদেশ তাঁর অভিষ্ঠ লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে চলেছে। এই সামগ্রীক উন্নয়নের টেকসই রূপায়নে সকল শ্রেণি, সম্প্রদায়ের মানুষকে সম্পৃক্ত ও অনুপ্রাণীত করতে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি দেশব্যাপী ৬৪ জেলার গ্রাম-বাংলায় চলমান পরিবেশনার মধ্য থেকে ১টি করে ঐতিহ্যবাহী নাট্য আঙ্গিক বাছাই করেছে। এই বাছাই প্রক্রিয়ায় একদল গবেষক নিষ্ঠার সাথে শ্রম দিয়েছে।

প্রতিটি জেলার বাছাইকৃত নাট্য আঙ্গিক ঐ জেলার একটি গ্রামে প্রদর্শনী আয়োজনের মাধ্যমে দেশব্যাপী এই এতিহ্যবাহী নাট্যোৎসব আয়োজন করা হয়েছে। এবং সারাদেশের প্রান্তিক পর্যায়ে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে এই নাট্যউৎসব। রাত জেগে বাড়ির উঠোনে বসে গ্রামীণ এ পালা উপভোগ করছেন তারা। জেলাগুলোর পাশাপাশি বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির এক্সপেরিমেন্টাল থিয়েটারে অনুষ্ঠিত হয়েছে এ উৎসব।