আপডেট : ২২ অক্টোবর, ২০২২ ১৯:২০
ডেঙ্গুতে সর্বোচ্চ ৯২২ রোগী হাসপাতালে
প্রতিবেদক, দৈনিক বাংলা

ডেঙ্গুতে সর্বোচ্চ ৯২২ রোগী হাসপাতালে

ক্যাপশন: রাজধানীসহ সারাদেশ বেড়েছে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা। ছবি: ফোকাস বাংলা

আগ্রাসী ডেঙ্গু তার ভয়ংকর রূপ জারি রেখেছে। মাঝে এক দিন হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীর সংখ্যা কম হলেও গত ২৪ ঘণ্টায় ফের তার নতুন রেকর্ড হয়েছে। আর এর মাধ্যমে চলতি বছরে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীর সংখ্যা ৩০ হাজার ছাড়াল।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর আজ শনিবার জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৯২২ জন; যা কিনা চলতি বছরে এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ। আর এ সময়ে মারা গেছেন আরও দুজন। ফলে চলতি মাসে ডেঙ্গুতে মৃতের সংখ্যা ৫৭ আর রোগী ভর্তির সংখ্যা ১৪ হাজারের কাছাকাছি।

এর আগে গত ১৮ অক্টোবর সর্বোচ্চ ৯০০ রোগী ভর্তি হওয়ার তথ্য জানিয়েছিল অধিদপ্তর।

অধিদপ্তর জানাচ্ছে, হাসপাতালে ভর্তি হওয়া ৯২২ জনের মধ্যে ঢাকার হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৫২০ জন আর ঢাকার বাইরের হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৪০২ জন।

বর্তমানে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি আছেন ৩ হাজার ৪০৪ জন।

চলতি বছরে এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৩০ হাজার ২৯ জন আর এখন পর্যন্ত মারা গেলেন ১১২ জন।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডেঙ্গুতে এখন সারা বছরই কমবেশি রোগী পাওয়া যায়। তবে এর পিক টাইম সাধারণত জুন, জুলাই থেকে শুরু হয়ে আগস্ট, বড়জোর সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চলে। কিন্তু চলতি বছরে এর ব্যতিক্রম। অক্টোবরেই সবচেয়ে বেশি রোগী এবারে দেখা যাচ্ছে, যা কিনা এর আগে বাংলাদেশ দেখেনি।

এর কারণ জলবায়ু পরিবর্তন, থেমে থেমে বৃষ্টি, নগরায়ণ, সাধারণ মানুষের অসচেতনতা এবং মশক নিধন কর্মসূচিতে অব্যবস্থাপনা বা অবহেলা।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রতিদিনের যে হিসাব, সেটা কেবলই কাগজ-কলমের, প্রকৃত রোগী এর চেয়ে কয়েক গুণ বেশি। কারণ, অধিদপ্তর কেবল তাদের হিসাবে থাকা হাসপাতালের তথ্য দেয়। এর বাইরে অসংখ্য হাসপাতাল রয়েছে, রয়েছে ক্লিনিক। আবার বাসাবাড়িতে থেকে চিকিৎসা নেয়া রোগীর সংখ্যাও কম নয়।

দেশে যেকোনো রোগের প্রাদুর্ভাব হলে তা নিয়ে গবেষণা করে রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর)। আইডিসিআরের পরিচালক অধ্যাপক ডা. তাহমিনা শিরীন জানিয়েছেন, চলতি বছর ডেঙ্গু প্রাদুর্ভাবের কারণ ডেঙ্গুর সব কটি ধরনের একসঙ্গে সংক্রমণ।

তিনি বলেন, ‘দেশে ডেঙ্গুর একাধিক ধরনের (সেরোটাইপ) সংক্রমণ ঘটায় ডেঙ্গুতে এবারে আক্রান্ত ও মৃত্যু বেশি হচ্ছে।’

অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের জানুয়ারিতে ১২৬ জন রোগী ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়। যদিও ফেব্রুয়ারি ও মার্চে প্রকোপ বেশ কমে আসে। ওই দুই মাসে ২০ জন করে রোগী হাসপাতালে ভর্তি হন। এপ্রিলে হাসপাতালে ভর্তি হন ২৩ জন রোগী। এর পরই বাড়তে থাকে রোগীর সংখ্যা, মে মাসে ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন ১৬৩ জন। পরের মাস, অর্থাৎ জুনে রোগীর সংখ্যা তিন গুণের বেশি হয়, ৭৩৭ জন। এ মাসেই ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে প্রথম মৃত্যুর খবর দেয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, মারা যান একজন।

জুলাইয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন ১ হাজার ৫৭১ জন, মারা যান ৯ জন, আগস্ট মাসে হাসপাতালে ভর্তি হন ৩ হাজার ৫২১ জন, মারা যান ১১ জন, সেপ্টেম্বর মাসে ৯ হাজার ৯১১ জন আর মারা গেছেন ৩৪ জন।

২০০০ সালে বাংলাদেশে ডেঙ্গু শনাক্ত হলেও ডেঙ্গু সবচেয়ে ভয়াবহ হয়ে উঠেছিল ২০১৯ সালে, ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়ে দেশজুড়ে। সে বছরে ১ লাখ ১ হাজার ৩৫৪ জনকে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়েছিল আর মৃত্যু হয়েছিল ১৬৪ জনের।

কিন্তু করোনা মহামারির কারণে গত দুই বছর ডেঙ্গুর প্রসঙ্গ অনেকটাই চাপা থেকেছে।