আপডেট : ২২ অক্টোবর, ২০২২ ২১:০৩
‘স্বৈরাচারী আচরণ করে ক্ষমতায় থাকা যায় না’
প্রতিবেদক, দৈনিক বাংলা

‘স্বৈরাচারী আচরণ করে ক্ষমতায় থাকা যায় না’

বাম জোটের গণপদযাত্রা। ছবি: দৈনিক বাংলা

বাম গণতান্ত্রিক জোটের সমন্বয়ক ও বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেছেন, ভাত ও ভোটের অধিকার দিতে ব্যর্থ সরকার পুরোনো স্বৈরাচারী কায়দায় সভা-সমাবেশে বাধা দিয়ে ক্ষমতার মসনদ স্থায়ী করতে পারবে না

আজ শনিবার বাম গণতান্ত্রিক জোট আয়োজিত গণপদযাত্রা পূর্ব সমাবেশে তিনি এ কথা বলেন।

সরকারের অগণতান্ত্রিক আচরণ সারাদেশে ভয়ের রাজত্ব কায়েম করছে উল্লেখ করে রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, ‘পায়ের নিচে থেকে মাটি সরে গেলে এ ধরনের স্বৈরাচারী আচরণ তীব্র করা যায়, কিন্তু ক্ষমতায় থাকা যায় না।’

তিনি আরও বলেন, ‘দেশের অধিকাংশ মানুষ নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির সংকটে জর্জরিত। আধা পেট খেয়ে থাকছেন অনেকে। কিন্তু দুর্নীতি, লুটেরাদের দাপট কমছে না। বিদেশে পাচারের টাকা ফেরত আনা হচ্ছে না। খেলাপী ঋণের পরিমাণ বেড়েই চলেছে।’

দেশে সংকট পরিস্থিতি অবসানে চলমান দুঃশাসনের বিদায় ও ব্যবস্থা বদলের সংগ্রাম অগ্রসর করতে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে গণসংগ্রাম গড়ে তোলার আহ্বান জানান।

সিপিবির সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘খুলনায় বিএনপির সমাবেশকে কেন্দ্র করে সরকার জনগণের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে। বাস, লঞ্চ, নৌকা বন্ধ করে জনজীবন দুর্বিসহ করে তুলেছে। ব্যর্থ এই সরকারের আর ক্ষমতায় থাকার অধিকার নেই।’

সরকারের পদত্যাগ, সংসদ ভেঙে দেয়া, নির্দলীয় তদারকি সরকারের অধীনে নির্বাচন, নিত্যপণ্যের দাম কমানো, গ্রাম-শহরে রেশনিং চালু, দুর্নীতি দুঃশাসনের অবসান ও বাম গণতান্ত্রিক বিকল্প গড়ে তুলতে বাম গণতান্ত্রিক জোটের আহ্বানে দেশব্যাপী গণপদযাত্রার কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। কর্মসূচির অংশ হিসেবে আজ বিকেল ৪টায়, ঢাকার পুরানা পল্টন মোড়ে সমাবেশ হয়। প্রেসক্লাব-শাহবাগ-এলিফেন্ট রোড-সাইন্স ল্যাবরেটরি হয়ে নীলক্ষেত পর্যন্ত গণপদযাত্রা হয়।

পদযাত্রা শেষে নিউমার্কেট-নীলক্ষেত মোড়ের সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন জোটের সমন্বয়ক, সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স। বক্তব্য রাখেন বাসদের সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশিদ ফিরোজ, বিপ্লবী কমিউনিস্ট লীগের সম্পাদক মন্ডলীর সদস্য অধ্যাপক আব্দুস সাত্তার, বাসদ (মার্ক্সবাদী) সমন্বয়ক মাসুদ রানা, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টি ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম সবুজ ও সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনের নির্বাহী সভাপতি আব্দুল আলী।

এ সময় নেতৃবৃন্দ নির্বাচনকালীন দল নিরপেক্ষ তদারকি সরকারের অধীনে টাকা, পেশীশক্তি, সাম্প্রদায়িকতা, আঞ্চলিকতা ও কারসাজিমুক্ত পরিবেশে নির্বাচনের দাবি জানান। নির্বাচনের প্রচারের দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনকে নেওয়া, ‘না’ ভোট, প্রতিনিধি প্রত্যাহারের বিধান, সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধি ব্যবস্থা চালুসহ নির্বাচন ব্যবস্থার আমূল সংস্কারের দাবি জানান।

নেতারা শ্রমজীবী ও নিম্নআয়ের মানুষের জন্য আর্মি রেটে রেশন ব্যবস্থা ও সারা বছর ওএমএস কার্যক্রম চালুর দাবি জানান। নেতৃবৃন্দ মজুরি কমিশন গঠন ও জাতীয় ন্যূনতম মজুরি ২০ হাজার টাকা দাবি জানিয়ে বলেন, ‘পাচারকৃত টাকা ফেরত আনলে, খেলাপী ঋণ উদ্ধার করলে এর জন্য টাকার অভাব হবে না।’

বাম নেতারা আরও বলেন, ‘জনগণকে দুর্ভিক্ষের ভয় দেখানো হচ্ছে। এ কথায় লুটেরারা লুটপাটের আরও সুযোগ নেবে। দেশে পণ্যের অভাব নেই। দেশের কৃষক উৎপাদন বাড়াতে প্রস্তুত তাদের সহায়তা দিন। আর উৎপাদিত ও নিত্যপণ্যের সুষম বণ্টন নিশ্চিত করুন। তাহলে সংকট দূর হয়ে যাবে।’

নেতৃবৃন্দ বলেন, ‘বর্তমান সরকারের উচ্ছেদ ও শোষণমূলক পুঁজিবাদী রাষ্ট্রের পরিবর্তন করে মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা ছাড়া সংকট উত্তরণের পথ নেই। এজন্য নীতিনিষ্ঠ বাম গণতান্ত্রিক শক্তির পতাকাতলে সমবেত হয়ে গণআন্দোলন গণসংগ্রাম গড়ে তুলতে হবে।’

পদযাত্রা থেকে নেতৃবৃন্দ সারাদেশে ভাত ও ভোটের অধিকার আদায়ের আন্দোলন অব্যাহত রাখতে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানান।